Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
সাচ্চা-মেকি ফারাকে স্বস্তি সঙ্ঘকে

আমাকে মারুন, দলিত নয়: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

পরপর দু’দিন। এবং আজ সুর আরও চড়া, আরও আক্রমণাত্মক।স্বঘোষিত গো-রক্ষকদের হাতে দলিত নিগ্রহ ঘিরে দেশ জুড়ে তোলপাড়েও দীর্ঘদিন নীরব থাকার পরে গত কালই এ নিয়ে প্রথম মুখ খুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ এক ধাপ এগিয়ে সরাসরি দলিতদের পাশে দাঁড়িয়ে মোদী বললেন, ‘‘যদি আক্রমণ করতেই হয়, আমাকে করুন।

তীব্র আক্রমণ প্রধানমন্ত্রীর। ছবি: পিটিআই।

তীব্র আক্রমণ প্রধানমন্ত্রীর। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০৯
Share: Save:

পরপর দু’দিন। এবং আজ সুর আরও চড়া, আরও আক্রমণাত্মক।

স্বঘোষিত গো-রক্ষকদের হাতে দলিত নিগ্রহ ঘিরে দেশ জুড়ে তোলপাড়েও দীর্ঘদিন নীরব থাকার পরে গত কালই এ নিয়ে প্রথম মুখ খুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ এক ধাপ এগিয়ে সরাসরি দলিতদের পাশে দাঁড়িয়ে মোদী বললেন, ‘‘যদি আক্রমণ করতেই হয়, আমাকে করুন। যদি গুলি করতেই হয়, আমাকে গুলি করুন, আমার দলিত ভাইদের নয়। এই খেলা বন্ধ হোক।’’ একই সঙ্গে ‘নকল’ গো-রক্ষকদের একঘরে করে তাদের কঠোর শাস্তি দিতেও আর্জি জানালেন রাজ্য সরকারগুলিকে।

শনিবার দিল্লিতে ‘মাইগভ’ পোর্টালের দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী কোনও প্রেক্ষিত ছাড়াই টেনে এনেছিলেন গো-রক্ষকদের তাণ্ডবের প্রসঙ্গ। তীব্র ভাষায় স্বঘোষিত গো-রক্ষকদের নিশানা করে তাদের ‘কালো ধান্দার কারবারি’ বলতেও ছাড়েননি। আর আজ তেলঙ্গানা-সফরে গিয়ে একই ভাবে কোনও প্রেক্ষিত ছাড়াই আরও একবার গো-রক্ষকবাহিনীর বিরুদ্ধে সরব হলেন। সেই সঙ্গেই সঙ্ঘ নেতৃত্বকে স্বস্তি দিয়ে ‘আসল’ ও ‘নকল’ গো-রক্ষকদের ফারাক করলেন। টেনে আনলেন মহাত্মা গাঁধী, বিনোবা ভাবের প্রসঙ্গও।

গো-রক্ষার নামে যে ভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাণ্ডব চলছে, তাতে উত্তরপ্রদেশের ভোটে দলিত সমর্থন হাতছাড়া হওয়ার ভয় রয়েছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায় চাপের মুখে পরপর দু’দিন লাগাতার এ নিয়ে সরব হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এবং আজ তাঁর সুর ছিল আরও চড়া। দলিত সমর্থন ফিরে পেতে সরাসরি তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়ে এ দিন মোদী বলেন, ‘‘ওঁদের (দলিতদের) রক্ষা করা এবং সম্মান করা আমাদেরই দায়িত্ব।’’

পাশাপাশি ছিল সঙ্ঘের অঙ্কও! গত কালই গো-রক্ষকদের নিয়ে তাঁর কড়া মন্তব্যের পরে গুঞ্জন উঠেছিল। আজ তাই আরও সতর্ক হয়ে গো-রক্ষকদের মধ্যে ‘আসল’ ও ‘নকল’-এর বিভাজন টেনে দিলেন সুকৌশলে। সেই সঙ্গে টেনে আনলেন গো-রক্ষা আন্দোলন, যা সঙ্ঘ-পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি।

মোদী এ দিন বলেন, ‘‘মহাত্মা গাঁধী এক সময় বলতেন, আমাদের মা শিশু বয়সে কিছু সময়ের জন্য দুধ খাওয়ান। কিন্তু গরু-মা জীবনভর দুধ খাওয়ায়। বিনোবা ভাবে গো-রক্ষার জন্য আমরণ অনশনও করেছেন। মহাত্মা গাঁধী যে কথা মেনেছেন, তা ভুল হতে পারে না।’’

‘আসল’ গো-রক্ষকদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, মুষ্টিমেয় কিছু লোক সমাজকে ছত্রভঙ্গ করছে। গো-রক্ষার সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। এরা যেন সমাজকে ধ্বংস না করে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। সরাসরি দলিতদের পাশে দাঁড়ানো এবং পরপর দু’দিন ধরে গো-রক্ষকদের নিশানা করায় স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে মোদীর কৌশল নিয়ে। কাল, সোমবার থেকে ফের শুরু হওয়া সংসদের অধিবেশনের আগে দু’-দু’টো ছুটির দিন বিভিন্ন মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে কেন প্রধানমন্ত্রী এ ভাবে সরব হলেন? কেনই বা এত দিন নীরব ছিলেন তিনি? আর কেন এই বিষয়গুলি নিয়ে সংসদে মুখ খুলছেন না?

রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ আজ বলেন, ‘‘এই কথাগুলিই প্রধানমন্ত্রী যদি আগে বলতেন, তা হলে হয়তো একের পর এক এতগুলো ঘটনা ঘটতো না। যতক্ষণ না এই ধরনের অপরাধ করা লোকেরা জেলে ঢুকছে, ততক্ষণ প্রধানমন্ত্রীর মুখের কথায় কী লাভ? যাঁরা এই ধরনের ঘটনায় জড়িত, তাঁরা তো সঙ্ঘেরই মদতপ্রাপ্ত!’’ কংগ্রেসের আর এক নেতার কথায়, ‘‘ইনি এমন এক প্রধানমন্ত্রী, যিনি কথায় কথায় যে কোনও বিষয়ে টুইট করে দেন! বিরোধীরা বহু দিন ধরে দলিত নিগ্রহ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দাবি করেছে, কিন্তু উনি চুপ থেকেছেন!’’

আসলে বিজেপি বুঝতে পারছে, শিয়রে সংক্রান্তি। দেশজুড়ে, এমনকী মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাতেও যে ভাবে দলিত নিগ্রহ হয়েছে, তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে গো-বলয়ে সবথেকে বড় রাজ্য ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশে। তার উপর বিজেপি শিবির থেকে দলিত-বিরোধী কিছু মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। অমিত শাহ সুকৌশলে মায়াবতীর দলিত-ভোট টানার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু গো-রাজনীতির ধাক্কায় সব জলে গিয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে, পর্যাপ্ত দলিত সমর্থক না আসায় আগরায় অমিত শাহের দলিত সম্মেলন বাতিল করতে হয়েছে ক’দিন আগে। গুজরাতে বিভিন্ন দলিত সংগঠনের ১০ দিনের পদযাত্রা বিজেপির চিন্তা বাড়িয়েছে।

পরিস্থিতি বুঝেই শেষ পর্যন্ত হাল ধরতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। মোদী ভালই জানেন, রাজ্যে রাজ্যে গো-রক্ষকদের তাণ্ডব বা তাদের হাতে দলিত নিগ্রহের ঘটনা প্রকৃত পক্ষে রাজ্য সরকারের অধীনে বর্তায়। কিন্তু পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, তার খেসারত দলগত ভাবে দিতে হচ্ছে বিজেপিকে। এবং বিরোধীদের নিশানায় স্বয়ং মোদী। তাই প্রধানমন্ত্রী এখন ‘নকল’ গো-রক্ষকদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেও শাস্তির দায় চাপিয়েছেন রাজ্যের উপর।

ঘটনাচক্রে এ দিন মোদীর সুরেই সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক ভাইয়াজি জোশী এক বিবৃতিতে গো-রক্ষার নামে দুষ্কৃতী তাণ্ডবের তীব্র নিন্দা করে বলেন, ‘‘এই সমাজবিরোধীরা কিছু জায়গায় আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে এবং সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করছে।’’ এদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতেও রাজ্যগুলিকে অনুরোধ করেছেন। সেই সঙ্গে তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য, মানুষ যেন গো-রক্ষার নামে অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে এর মহৎ উদ্দেশ্যকে গুলিয়ে না ফেলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Cow vigilantes Dalit issue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE