ডুবোজাহাজের গোপন তথ্য এ দেশ থেকে চুরি হয়নি। কিন্তু চুরির চেষ্টা হলে তা যে আটকানো যেত— প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তারা এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না।
স্করপেন ডুবোজাহাজের ঘটনা ফের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে মনে করিয়ে দিয়েছে, দেশের সাইবার নিরাপত্তার দিকে এখনই নজর দেওয়া জরুরি। কারণ, মোদী সরকার যতই ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’-র জয়গান করুক, দেশের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার হাল এখনও ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দারের মতোই। ডুবোজাহাজের ফাঁস হওয়া তথ্যের গুরুত্ব নিয়ে দ্বিমত থাকলেও, এ বিষয়ে কারও মনে কোনও সংশয় নেই।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে জানানো হয়েছে, স্করপেন ডুবোজাহাজের গোপন নথি এ দেশ থেকে চুরি হয়নি। ফরাসি জাহাজ নির্মাতা সংস্থার থেকে হ্যাকিং করে বা তাদের কোনও পুরনো কর্মীই এই চুরি করেছে। এ দেশে হ্যাকিং করে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গোপন নথি চুরি আটকানোর ক্ষমতা কত খানি রয়েছে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দফতরের কর্তারা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে চিনের হ্যাকারদের উপদ্রবের কথা মাথায় রেখে তাঁরা মনে করছেন, গোটা ব্যবস্থার দ্রুত পর্যালোচনা দরকার।
উদ্বেগ অমূলক নয়। বছর ছয়েক আগের ঘটনা। দেশের তিনটি বায়ুসেনা ঘাঁটি ও চিন-সীমান্তে নিযুক্ত একটি সেনা ব্রিগেডের যোগাযোগ ব্যবস্থা হ্যাক করে ফেলেছিল চিনের শ্যাডো নেটওয়ার্ক নামে একটি সংস্থা। আটকানো দূরের কথা, ঘটনাটাই কেউ টেরই পাননি। আমেরিকা-কানাডার কিছু গবেষক বিষয়টি জানতে পারায় টনক নড়ে। ওই একই বছরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার অফিসের কম্পিউটারও হ্যাক করা হয়েছে বলে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। বিদেশি প্রতিরক্ষা বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও একই কারণে নয়াদিল্লির হাতে কোনও সংবেদনশীল তথ্য তুলে দিতে ভয় পান। কারণ তাঁরা মনে করেন, নয়াদিল্লির সাউথ ব্লকের যাবতীয় কম্পিউটারেই চিনা হ্যাকাররা ঢুকে পড়তে পারে।
মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে প্রথম সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখভালের জন্য একটি পদ তৈরি করেছিল। বিশেষ সচিব (সাইবার নিরাপত্তা) হিসেবে গুলশন রাইকে নিয়োগ করা হয়। দেশের পরমাণু অস্ত্র থেকে শুরু করে নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় গোপন তথ্যের সুরক্ষার জন্য ‘ন্যাশনাল ক্রিটিকাল ইনফর্মেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোটেকশন সেন্টার’ তৈরি হয়েছে। কিন্তু পৃথক পদ বা সংস্থা তৈরি হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পরিকল্পনা হয়েছিল, জল-স্থল-আকাশের মতো সাইবার নিরাপত্তার জন্য পৃথক বাহিনী তৈরি হবে। আমেরিকার ধাঁচে সাইবার কম্যান্ড গড়ে তোলারও পরিকল্পনা হয়। সেই পরিকল্পনাও কাগজে-কলমে রয়ে গিয়েছে।
হ্যাকিং কিন্তু থেমে নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের কম্পিউটার এমার্জেন্সি রেসপন্স টিম-ইন্ডিয়া (সার্ট-ইন)-এর হিসেব, গত বছর তাদের ৫০ হাজার সাইবার হামলা সামলাতে হয়েছে। অ্যাসোচ্যাম-প্রাইসওয়াটারহাউসকুপার্সের সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, ২০১১ থেকে ২০১৪-র মধ্যে এ দেশে সাইবার অপরাধ ৩০০ শতাংশ বেড়েছে। হ্যাকাররা শুধু যে তথ্য চুরি করতে পারে, তা-ই নয়। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, রেল, বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থায় হানা দিয়ে সব কিছু অচল করে দিতেও পারে।
উল্টোদিকে এই সব হামলা অচল করে দেওয়ার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাটা ঠিক কেমন? সল্টলেক থেকে সিলিকন ভ্যালিতে যতই ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি বিশারদরা দাপিয়ে বেড়ান, এ দেশে সরকারি ব্যবস্থায় সাইবার বিশেষজ্ঞদের সংখ্যা খুবই কম। তিন বছর আগে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সচিবালয় সমীক্ষা চালিয়ে দেখে, সব সংস্থা মিলিয়েও মাত্র ৫৫৬ জন রয়েছেন। যেখানে চিনে প্রায় সওয়া এক লক্ষ বা আমেরিকার ৯১ হাজার সাইবার বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন। তার পর সিদ্ধান্ত হয়, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, ডিআরডিও, ন্যাশনাল টেকনিকাল রিসার্চ অর্গানাইজেশনে আরও সাড়ে চার হাজার বিশেষজ্ঞ নিয়োগ হবে। তাতেও যে পরিস্থিতি শুধরেছে, এমন দাবি কেউই করছেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy