অপরাধ দমনে মৃত্যুদণ্ডই কি শেষ পদক্ষেপ? চূড়ান্ত এই শাস্তির প্রয়োগে কতখানি নিরপেক্ষ থাকে বিচারব্যবস্থা? কোনও ব্যক্তির প্রাণ নেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কি পারে রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষ হতে?
আজ সাতসকালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হল ’৯৩-এর মুম্বই বিস্ফোরণ মামলায় অন্যতম দোষী ইয়াকুব মেমনের। এই মৃত্যুদণ্ড আবারও তুলে আনছে ওই সব প্রশ্ন, যার উত্তর খুঁজতে তিরুবনন্তপুরম থেকে দু’বারের নির্বাচিত সাংসদ শশী তারুর নিজস্ব ভঙ্গিতে যুক্তি শানালেন মৃত্যুদণ্ডের যৌক্তিকতা নিয়ে আয়োজিত এক বিতর্কসভায়।
শশীর যুক্তি, মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগ করে কখনওই অপরাধের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। অপরাধ ঘটানোর সময়ে ব্যক্তির পক্ষে শাস্তির কথা ভেবে তা থেকে বিরত থাকা কার্যত অসম্ভব। গত ৩৫ বছরের তথ্য ঘাঁটলে মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগে এবং অপরাধ দমনের মধ্যে কোনও আনুপাতিক সম্পর্কও খুঁজে পাওয়া যায় না বলেই তাঁর মত। পরিসংখ্যান বলছে, খুনের অপরাধে ১৯৮০ থেকে ১৯৯০-এ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় দশ জন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। ওই এক দশকেই খুনের ঘটনা ২২,১৪৯ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩৫,০৪৫-এ। একই ভাবে খুনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে পরবর্তী দশকেও। ২০০০ থেকে ২০১০-এ মাত্র একটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। অথচ ওই দশকে খুনের মতো অপরাধের সংখ্যা কমে হয়েছে ৩৩,৩৫৫। এর পূর্বর্তী দশকের শেষে ওই সংখ্যা ছিল ৩৭,৩৯৯।
এক জন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে কতটা প্রভাবমুক্ত থাকতে পারে বিচার প্রক্রিয়া? সেখানেও ভুলভ্রান্তি যথেষ্ট। বলছেন তারুর। পক্ষপাতদুষ্ট বিচার, সামাজিক ও ধর্মীয় চাপ, জনরোষ, অপরাধীর আর্থিক পরিস্থিতি, অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীর সওয়াল-জবাব প্রভাবিত করে থাকে সম্পূর্ণ বিচার প্রক্রিয়াকে। সেই সঙ্গে দীর্ঘ বিচারব্যবস্থায় তথ্যপ্রমাণ লোপের বড় সম্ভাবনা তো থাকেই। ২০১০-২০১৩-এর পরিসংখ্যান দেখলে সামনে চলে আসছে মৃত্যুদণ্ডের অবাধ প্রয়োগের তথ্যও। এই চার বছরে ৪৩৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে নিম্ন আদালত। তার মধ্যে ২৮০ জনের শাস্তি কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয়েছে। এবং মাত্র দু’জনের ক্ষেত্রে কার্যকর হয়েছিল মৃত্যুদণ্ড।
শশীর মতে, মৃত্যুদণ্ডের আদেশ রাজনীতির প্রভাবমুক্ত কখনওই হতে পারে না। অনেক রাজনৈতিক হিসেব কষে বহাল হয় মৃত্যুদণ্ড। চূড়ান্ত প্রক্রিয়ার অন্তিম পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভার পরামর্শ নিয়ে থাকেন। শশীর প্রশ্ন, ‘‘তবে কী ভাবে রাজনীতির উর্ধ্বে থাকছে এই বিচারপ্রক্রিয়া!’’ বিস্মিত তারুর। সে হত্যাকারী। তাই তাকেও হত্যা করা হোক। অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডের অর্থ প্রতিহিংসা ও প্রতিফল। কেমন ভাবে গোটা রাষ্ট্র বদলার এই নীতিকে আঁকড়ে থাকতে পারে!
যদিও এর মধ্যেই আশার আলো দেখছেন তারুর। ভারতে মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োগ এবং তার উদ্দেশ্য মাপতে আইন কমিশন সপ্তাহ কয়েক আগে এক আলোচনার আয়োজন করেছিল। আর তাতে স্বচ্ছ ও মতপার্থক্যহীন মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে ঐক্যমত্যই ধরা পড়েছে। এই বিধান লোপের পক্ষেও সওয়াল করেছেন তাঁরা। শশীর কথায়: ‘‘আমার ধারণা, মৃত্যুদণ্ডের আইন সংশোধন করা যায় না। সময়ের সঙ্গেই উঠে আসছে দেশ থেকে এই শাস্তি লোপের প্রয়োজনীয়তা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy