সাংবাদিক বৈঠকে প্রশান্ত ভূষণ। দিল্লিতে মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই।
তিনিই কি ‘ক্যাপ্টেন’? যিনি দেশের যেখানে খুশি, যে কোনও কাজ করিয়ে দিতে পারেন! সিবিআই ফোনে আড়ি পেতে তাঁকেই কি ‘৫০০ গামলা’ ঘুষ দেওয়ার কথা শুনেছিল?
প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে এ বার গুরুতর প্রশ্ন উঠল। ঘরে-বাইরে নিশানার মুখে পড়লেন তিনি।
সতীর্থ বিচারপতিরা আগেই অভিযোগ তুলেছিলেন, তিনি বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা বিসর্জন দিচ্ছেন।
আজ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ অভিযোগ করলেন, লখনউয়ের মেডিক্যাল কলেজ ঘুষ মামলায় প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ঘুষ নিয়েছেন কি না, তার তদন্ত হোক। সিবিআইয়ের ফোনে আড়ি পাতার যে টেপ ফাঁস হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে প্রধান বিচারপতিকেই ঘুষ দেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। টেপে শোনা যাচ্ছে, ইলাহাবাদ হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে সুবিধেজনক রায় পেতে ‘ক্যাপ্টেন’ বলে কাউকে ঘুষ দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। তাকে ‘৫০০ গামলা’ ঘুষ দেওয়ার কথা হচ্ছে। তদন্ত নিয়ে ভূষণের সঙ্গে কার্যত এক মত চার ‘বিদ্রোহী’ বিচারপতি। ফলে বিচারপতিদের মধ্যে সমস্যা মেটেনি।
ভূষণের যুক্তি, টাকা বোঝাতে যেমন ‘খোকা’ বা ‘পেটি’ বলা হয়, এখানে সেটাই ‘গামলা’। আর ‘ক্যাপ্টেন’ কে হতে পারেন, তা-ও বোঝা সহজ। এর নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। না হলে সিবিআইয়ের তদন্তের ভয় দেখিয়ে প্রধান বিচারপতিকে ‘ব্ল্যাকমেল’ করা হবে।
এখানেই না থেমে ভূষণের দাবি, আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সময়ে প্রধান বিচারপতি মিথ্যে তথ্য দিয়ে ওড়িশায় জমি নিয়েছিলেন। মিথ্যে হলফনামা দেওয়ার জন্য পরে জমি কেড়ে নেওয়া হয়। সেই দোষে সাংসদেরা তাঁকে ‘ইমপিচমেন্ট’ বা অপসারণের প্রস্তাব আনতে পারেন। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র সেন আইনজীবী থাকাকালীন বেআইনি কাজ করেন বলেই তাঁর বিরুদ্ধে ‘ইমপিচমেন্ট’ প্রক্রিয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: বিচ্যুতি মেটাক বিচার বিভাগ নিজেই, চান বহু বিচারপতি
এ হেন তোপের মুখে অন্তত ঘরোয়া দ্বন্দ্ব মেটাতে আজ বিচারপতি জাস্তি চেলমেশ্বর, বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফ ও বিচারপতি মদন বি লোকুরের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি বৈঠকে বসেছেন। এই চার বিচারপতিই তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। গত কয়েক দিন প্রধান বিচারপতি সুর নরম করেননি। গুরুত্বপূর্ণ মামলা প্রবীণ বিচারপতিদের বেঞ্চে পাঠাচ্ছেন না বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। তা সত্ত্বেও আধার, ৩৭৭ ধারা-র মতো গুরুত্বপূর্ণ ৮টি মামলার জন্য তৈরি সাংবিধানিক বেঞ্চে তিনি কোনও প্রবীণ বিচারপতিকে রাখেননি।
কিন্তু আজ নিজেই দূরত্ব মেটানোর চেষ্টা করেছেন।
সকালে শুনানি শুরুর আগে ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন বিচারপতি এ কে সিক্রি, জে ওয়াই চন্দ্রচূড় ও সঞ্জয় কিষেণ কউল-ও। ভূষণ গতকাল রাতেই প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে পাঁচ প্রবীণতম বিচারপতির কাছে অভিযোগ জমা করেছেন। যে পাঁচ জনের মধ্যে বিক্ষুব্ধ চার বিচারপতি ছাড়া রয়েছেন বিচারপতি সিক্রি। প্রায় ২০ মিনিট বিচারপতিদের বৈঠক চলে। সূত্রের খবর, চার ‘বিদ্রোহী’ বিচারপতি কার্যত প্রশান্ত ভূষণের সুরেই দাবি তোলেন, মেডিক্যাল কলেজ ঘুষ মামলার তদন্ত দরকার। সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরীণ নিয়ম অনুযায়ী সেই তদন্ত হোক।
সিবিআইয়ের তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, লখনউয়ের মেডিক্যাল কলেজের পরিচালন সংস্থা প্রসাদ এডুকেশন ট্রাস্টের কর্তা বি পি যাদব, ওড়িশা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি আই এম কুদ্দুসি এবং বিশ্বনাথ অগ্রবাল নামে এক দালাল সুপ্রিম কোর্ট ও ইলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতিদের ঘুষ গিয়ে সুবিধেজনক রায় হাসিলের চেষ্টা করেছিলেন। এক কোটি টাকা ঘুষ দেওয়া হয়। ভূষণের অভিযোগ, ওই মামলায় এক জন হাইকোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে এফআইআর করার অনুমতি দেননি প্রধান বিচারপতি। এই মামলায় তাঁর নাম থাকা সত্ত্বেও তার শুনানি থেকে নিজেকে সরিয়েও নেননি।
প্রবীণ বিচারপতিরাও ভূষণের সুরেই সুর মেলানোয় বিচারপতিদের মধ্যে সমস্যা আরও বেড়েছে। গত কাল অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল দাবি করেছিলেন, সমস্যা মিটে গিয়েছে। আজ তিনিই স্বীকার করেছেন, ‘‘এখনও বিবাদ মেটেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy