প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নন, আপাতত ইজরায়েল সফরে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। আগামী অক্টোবর মাসে পশ্চিম এশিয়ায় ওই সফরে প্যালেস্তাইন এবং জর্ডনেও যাবেন প্রণব বাবু। সেই সফরের জমি তৈরি করতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে দেখা করলেন দিল্লিতে ইজরায়েলি রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল কারমন।
কূটনীতিকদের মতে, প্রণববাবুর ইজরায়েল সফর ইতিহাসে ঢুকে পড়বে। কারণ, দু’দেশের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের সফর বিনিময় হলেও, এই প্রথম সে দেশে যাচ্ছেন কোনও ভারতীয় রাষ্ট্রপ্রধান।
ইজরায়েলের সঙ্গে আপাতত ভারতের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। বিশেষত বরাবরই বিজেপির সঙ্গে ইজরায়েলের যোগাযোগ বেশি। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর চোখে পড়ার মত অগ্রগতি হয়েছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে। সামরিক সমঝোতার ক্ষেত্রটি বিস্তৃত করার ব্যাপারে কথা হয়েছে। আবার সন্ত্রাস-বিরোধী বিভিন্ন উদ্যোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি, পর্যটন, গঙ্গা সংস্কার-সহ জল সংক্রান্ত নানা প্রকল্প, সংস্কৃতির মত বিভিন্ন ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বাড়ানো হচ্ছে। সরকারি সূত্রের মতে, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকই এ ক্ষেত্রে ‘নোডাল মন্ত্রক’ হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া মোদী মন্ত্রিসভায় জেটলিই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তাই তাঁর সঙ্গেই গতকাল দেখা করেছেন কারমন।
গত নভেম্বরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ইজরায়েল সফর করেছেন। তার আগে সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার সম্মেলনের সময়ে মোদী ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছিলেন। গত বছরেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ইজরায়েল এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি থেকে বারাক-১ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কেনে। আমেরিকাকে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির বরাত দেওয়ার পরেও তা ফিরিয়ে নিয়ে ইজরায়েলের কাছ থেকেই তা কেনে সাউথ ব্লক। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তার মতে, ‘‘বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির জন্য ইজরায়েল ভারতের অন্যতম নির্ভরযোগ্য উৎস। তা সে কৃষিই হোক কি আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম।’’ পশ্চিমী বিশ্ব অনেক সময়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে টালবাহানা করলেও, ইজরায়েল সব সময়েই সাহায্য করে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদে ইজরায়েল-বিরোধী একটি প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটির সময়ে নয়াদিল্লি ভোটদান থেকে বিরত থাকে। তার পরে দিল্লিকে ধন্যবাদও জানায় তেল আভিভ। তখন সংবাদমাধ্যমের একাংশে গুঞ্জন শুরু হয়, শীঘ্রই ইজরায়েলে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী।
কিন্তু বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, আপাতত মোদীর ইজরায়েল সফরের কোনও সম্ভাবনা নেই। আগামী কয়েক মাসে মোদীর ঠাসা সফরসূচি রয়েছে। সামনে আমেরিকায় রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশন, তারপর তুরস্কে জি-২০ ভুক্ত দেশগুলির শীর্ষ সম্মেলন। এর পর সৌদি আরব এবং ইরান যাওয়ারও কথা রয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দফতর চাইছে, যত দ্রুত সম্ভব শীর্ষ পর্যায়ের একটি সফর হোক ইজরায়েলে। আর সেই কারণেই রাষ্ট্রপতিকে ইজরায়েল সফর করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
সরকারি সূত্রের মতে, মোদীর ইজরায়েল না যাওয়ার পিছনে রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। ধর্মীয় মেরুকরণকে ঘিরে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। সেই পরিস্থিতিতে তিনি ইজরায়েল গেলে ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে। আরব দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্কও নষ্ট করতে চায় না সরকার। ওই দেশগুলি থেকে বহু অনাবাসী ভারতীয় দেশে অর্থও পাঠান। তাই আরব দুনিয়ার ভাবাবেগের কথাও ভাবতে হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রণববাবু ইজরায়েল গেলে সব দিক রক্ষা হবে বলে মনে করছে সাউথ ব্লক। কূটনীতিকদের মতে, প্রণববাবু ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন জটের সঙ্গে বিশেষ ভাবে পরিচিত। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ভারসাম্য রক্ষা করতে তাঁর সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আরব দুনিয়ার কথা ভেবে তাঁর সফরসূচিতে প্যালেস্তাইন ও জর্ডনও রাখা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy