রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। ছবি: সংগৃহীত
এক বছর আগে রাষ্ট্রপতির মুখে ছিল দেশজুড়ে হিংসা ও অসহিষ্ণুতার কথা। আর এ বছরে স্বাধীনতা দিবসের আগে জাতির উদ্দেশে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় উধাও সেই সব প্রসঙ্গ। বদলে এল নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রকল্পের তারিফ, তার রূপায়ণে আহ্বান। উঠে এল সঙ্ঘের ভাবনাও।
এই বদলের কারণ, গত বছর রাষ্ট্রপতি হিসেবে বক্তৃতা দিয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। আর এখন তো রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার— সকলেই সঙ্ঘের ব্যক্তি। সংসদেই সে কথা বলেছেন বিজেপি নেতারা।
এমন এক প্রেক্ষাপটে আগামিকাল লালকেল্লায় বক্তৃতা দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার আগে বিরোধীরা আজ প্রশ্ন তুলেছে, নতুন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের মতো প্রধানমন্ত্রীও এড়িয়ে যাবেন আসল বিষয়গুলি? তাঁদের মতে, গত তিন বছরে প্রতিশ্রুতি রাখেননি মোদী। চাকরি দেননি, কৃষকদের দেওয়া আশ্বাস পূরণ করেননি। চার দিকে হিংসা, অত্যাচার, শিশুমৃত্যু। এ বার প্রধানমন্ত্রী কি কোনও নিদান দেবেন?
সাধারণ ভাবে রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বক্তব্যকেই তুলে ধরেন। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসের আগে তিনি যে বক্তৃতাটি দেন, সেখানে মন্ত্রিসভার ভাবনাচিন্তাকে তুলে ধরার বাধ্যবাধকতা থাকে না। সে কারণেই প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বিভিন্ন সামাজিক সঙ্কট নিয়ে মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু আজ সে সব প্রসঙ্গের উল্লেখ না করে জাতির উদ্দেশে আজ প্রথম বক্তৃতায় রামনাথ কোবিন্দ তুলে আনলেন নরেন্দ্র মোদীর ‘নতুন ভারত’-এর স্বপ্ন। ২০২২ সালে স্বাধীনতার ৭৫ বছরে সকলের জন্য ঘর, বিদ্যুৎ, ভাল রাস্তা, আধুনিক রেল। মোদীর নোট বাতিল ও জিএসটিরও ভূয়সী প্রশংসা করলেন। মোদীর ঘোষিত প্রকল্প রূপায়ণে জোর দিলেন জন অংশীদারিত্বে। আর দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নাম না করে বললেন তাঁর ‘একাত্ম মানববাদ’-এর কথা। সেটাই দেশের সভ্যতার ‘ডিএনএ’। আরএসএসের নাম না করে বিভিন্ন সংগঠনের ‘নিঃস্বার্থ সেবা’-র প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রপতি। কোবিন্দের বক্তৃতার পরেই টুইটারে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মোদী।
বিজেপি বলছে, এমন নয় কোবিন্দ স্পর্শকাতর বিষয়গুলিকে ছুঁয়ে যাননি। তিনি যখন সকলের মধ্যে ঐক্যের কথা বলছেন, একে অপরকে সহযোগিতার কথা উল্লেখ করছেন, তার মধ্যেও বার্তা নিহিত রয়েছে। শপথের পরে সংসদের সেন্ট্রাল হলে রাষ্ট্রপতি তাঁর প্রথম বক্তৃতায় মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর সঙ্গে দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নাম নেওয়ায় রে-রে করে উঠেছিল কংগ্রেস। জওহরলাল নেহরুর নাম না নেওয়া নিয়েও সংসদে সমালোচনা করেছিল তারা। কিন্তু আজ রাষ্ট্রপতি গাঁধী, সুভাষ, পটেলের পাশাপাশি নেহরুর নাম নিয়েই ক্ষান্ত হননি। নেহরুর হাত ধরে ভারতের শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য নিয়ে গর্বের কথাও বলেছেন। বিজেপির মতে, এর পর অন্তত কংগ্রেসের কোনও অভিযোগ থাকতে পারে না।
কিন্তু কংগ্রেসের মতে, আসলে মোদী জমানায় এক নতুন ঘরানা তৈরি হয়েছে। আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘অমিত শাহ লাগাতার নেহরুকে অপমান করছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে কংগ্রেসের ভূমিকা খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছে। আর এমন এক ব্যক্তির থেকে এ ধরনের বক্তব্য আসছে, স্বাধীনতা আন্দোলনে যাঁদের ভূমিকাই নেই। আরএসএস ও হিন্দু মহাসভা বরং আন্দোলনের বিরোধ করেছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy