গুজরাতে গরবার আসর। ছবি:সংগৃহীত।
প্রথমে গোঁফ রাখার অপরাধে দুই দলিত যুবককে মারধর। পরে গরবা দেখার ‘অপরাধে’ মারধর ও খুন দলিত যুবককে।
গুজরাত জুড়ে একের পর এক দলিত নিগ্রহের ঘটনা চলছে তো চলছেই। বুধবারও অব্যাহত রইল সেই ধারাবাহিকতা। গোঁফ-কাণ্ডে ফের মারধর করা হল এক দলিত কিশোরকে। এত কিছুর পর তাই এ বার গোঁফ-অস্ত্রেই প্রতিবাদ শানাচ্ছে গুজরাত। মাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়া। বেশ কিছু জায়গায় দলিত যুব সম্প্রদায় নিজেদের হোয়াটসঅ্যাপের প্রোফাইল পিকচার বদলে নিজের গোঁফওলা ছবি আপলোড করেছেন। অংশ নিয়েছেন ‘মিঃ দলিত’ নামে সোশ্যাল মিডিয়ার দেয়ালে প্রচারেও।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর গুজরাতের রাজধানী গাঁধীনগরের কাছে কলোল তালুকা এলাকার লিম্বোদরা গ্রামের বাসিন্দা পীযূষ পারমার ও তাঁর সম্পর্কিত ভাই দিগন্ত মাহেরিয়ার উপর চড়াও হয় দরবার সম্প্রদায়ের লোকজন। নিচু সম্প্রদায়ের লোক হয়েও গোঁফ রাখার ‘অপরাধে’ বেধড়ক মারধর করা হয় ২৪ বছরের পীযুষ ও তাঁর ১৭ বছরের ভাই দিগন্তকে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর গোঁফ রাখার ‘অপরাধে’ ক্রুনাল মাহেরিয়া নামে এক দলিত যুবককে ফের হেনস্থা করে এক দল রাজপুত।
গত রবিবারও গরবা দেখার অভিযোগে চার দলিতকে মারধর করে পটেল সম্প্রদায়ের লোকেরা। গুজরাতেরই আনন্দ জেলার ভদ্রানিয়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। মারধরের জেরে মৃত্যু হয় জয়েশ সোলাঙ্কি নামে ২১ বছরের এক দলিত যুবকের।
তবে এখানেই শেষ নয়, পীযুষ ও দিগন্তের পরিবার সূত্রের দাবি, ওই ঘটনা নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তাঁরা। যার জেরে মঙ্গলবার ফের দিগন্তের উপর ব্লেড নিয়ে চড়াও হয় অভিযুক্তরা। কেটে ফালাফালা করে দেওয়া হয় ওই কিশোরের পিঠ।
দিগন্তের কাকা কিরিট মাহেরিয়া জানিয়েছেন, মুখোশ পরা অবস্থায় বাইক নিয়ে দিগন্তের উপর চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। দুষ্কৃতীদের বলতে শোনা গিয়েছে, তাঁদের দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে এই কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে বা যারা এফআইআর দায়ের করেছে, তাঁর উপর হামলা চালানোর জন্য এই সুপারি। গুরুতর জখম হয় দিগন্ত। ঘটনায় ফের একটি এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ।
একের পর এক দলিত নিগ্রহের ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে গোটা দেশ জুড়ে। বিক্ষোভ চলছে গুজরাতেও। কলোল তালুকা, ভদ্রানিয়া-সহ গুজরাতের আশপাশের গ্রামের অসংখ্য দলিত যুবকেরা প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুককে। নিগ্রহের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফা চেয়ে প্রতিবাদ সংগঠিত করছিলেন দলিতদের অধিকার আন্দোলনের কর্মী জিগ্নেশ মেওয়ানিও। বুধবার সকালেই জিগ্নেশকে তাঁর অমদাবাদের বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। মেঘানিনগর থানার পুলিশ ইনস্পেক্টর দীনেশ পুনাদিয়া জানান, বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যাতে জিগ্নেশ অংশ নিতে না পারেন তার জন্যই আগে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু প্রতিবাদ তাতে থেমে থাকেনি। বুধবার গাঁধীনগরে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখান রাষ্ট্রীয় দলিত অধিকার মঞ্চের কর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে বিজেপি বিরোধী স্লোগান দিতে দিতে সচিবালয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা। সে সময় ওই মঞ্চের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
চলতি বছরের শেষেই গুজরাতে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে বারবার দলিত নিগ্রহের ঘটনা সামনে আসায় কার্যত অস্বস্তিতে বিজেপি। আর সেটাকেই অস্ত্র করতে চাইছে কংগ্রেস। চুপ করে নেই অন্যান্য বিরোধী দলগুলিও। তাঁদেরও দাবি, রাজ্যে দলিতদের স্বার্থ রক্ষা করতে অক্ষম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর বিজেপি সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy