Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

কী ভাবছেন কাঠুয়ার মানুষ? কেন এমন ঘটল?

কাঠু়য়ার মন্দিরে আট বছরের মেয়ের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে। কী ভাবছেন কাঠুয়ার মানুষ? কেন এমন ঘটল? ঘটনাস্থল থেকে আনন্দবাজারের বিশেষ প্রতিবেদন। আজ প্রথম কিস্তি।রক্তের দাগ এত দিনে ধুয়েমুছে সাফ, কিন্তু প্রশ্নটা প্রতিদিন আরও ধারালো হচ্ছে। কাঠুয়া জেলার জঙ্গলে যেখানে ফেলে রাখা হয়েছিল একরত্তি মেয়ের লাশ, তার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হল, রবি ঠাকুরের লেখায় ছোট্ট ‘হাসি’র প্রশ্নের একটা তাৎক্ষণিক উত্তর ছিল ‘রাজা’র কাছে।

কাঠুয়ার এই জঙ্গল থেকেই মেলে শিশুটির দেহ। —নিজস্ব চিত্র।

কাঠুয়ার এই জঙ্গল থেকেই মেলে শিশুটির দেহ। —নিজস্ব চিত্র।

অগ্নি রায়
কাঠুয়া শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:২৭
Share: Save:

পিপুল, নিম, বট, আকাশমণি আর হরেক ঘন কাঁটা ঝোপের মধ্যে দিয়ে আলো পৌঁছনো এমনিতেই দুষ্কর। যেটুকু পৌঁছেছে, তাতেই জম্মুর জঙ্গলের এই এক ফালি জমিতে আলো ছায়ার জাফরি। বৈশাখের শনশনে হাওয়ায় গাছের পাতারা একটি প্রশ্নই করে চলেছে যেন, এত রক্ত কেন!

রক্তের দাগ এত দিনে ধুয়েমুছে সাফ, কিন্তু প্রশ্নটা প্রতিদিন আরও ধারালো হচ্ছে।

কাঠুয়া জেলার জঙ্গলে যেখানে ফেলে রাখা হয়েছিল একরত্তি মেয়ের লাশ, তার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হল, রবি ঠাকুরের লেখায় ছোট্ট ‘হাসি’র প্রশ্নের একটা তাৎক্ষণিক উত্তর ছিল ‘রাজা’র কাছে। কিন্তু এই একরত্তিকে ঘিরে গোটা জম্মু-কাশ্মীর তথা দেশ এখন উত্তাল। কিন্তু তার না-করা প্রশ্নের কোনও জবাব নেই গ্রাম, রাজ্য বা কেন্দ্রের কাছে।

রাজ্য সরকারের প্রবল নজরদারি ওই জঙ্গলে কে ঢুকছে, বেরোচ্ছে তার উপর। দিল্লি আদালত নির্দেশ দিয়ে রেখেছে, ৮ বছরের ধর্ষিতা এবং নিহত মেয়ে এবং তার পরিবারবর্গের নাম, ঠিকানা, রুটম্যাপ প্রকাশ করলে কড়া অর্থমূল্য জরিমানা দিতে হবে। কারণ বিষয়টি বিচারাধীন।

তদুপরি জম্মু-পঠানকোট হাইওয়ে ছেড়ে পাশের কাঁচা পাকা রাস্তায় কিছুটা এগোতেই কার্যত গমখেত ফুঁড়ে গাড়ি দাঁড় করাল পুলিশ। সঙ্গে বিনম্র নিবেদন, ‘‘যাচ্ছেন যান! কিন্তু জাবদা খাতায় ঠিকুজি লিখে তবে যান!’’ নাম, ঠিকানা, সংবাদমাধ্যমের নাম, মোবাইল নম্বর। অথচ কার্যত শূন্যতাকেই পাহারা দেওয়া হচ্ছে যত্ন করে! যত দূর পর্যন্ত গাড়ি যায়, তার পরে পাথুরে রাস্তা ঢুকে গিয়েছে জঙ্গল আর টিলার উপর। দু’ধারে মৌমাছি চাষের বিস্তর আয়োজন। কিন্তু কোনও মানুষ চোখে পড়ে না। রুটিনমাফিক তাঁবু গুটিয়ে যাযাবর বাকারওয়াল সম্প্রদায় ধীরে ধীরে চলে যাবে কাশ্মীরের দিকে, এমনই কথা ছিল। কিন্তু কাঠুয়া গণধর্ষণের জেরে যে আতঙ্ক এবং উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তাতে আর এখানে থাকা নিরাপদ মনে করেননি ওই সম্প্রদায়ের কেউই। নিহত মেয়েটির পরিবারের আগেপিছে পশু মিছিল নিয়ে তারা চলে গিয়েছেন উধমপুরের দিকে। গ্রামের অন্য প্রান্তে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাকাবাড়িগুলিও যেন কিছুটা থমথমে। দুয়ার আঁটা।

গ্রাউন্ড জিরো অর্থাৎ শুনশান ঊষর বিস্তীর্ণ জমির এক কোণায় (যার ত্রিসীমানায় কিছু নেই) ওই শিশুকন্যাটির বাড়ি এখন জম্মু পুলিশের অস্থায়ী দফতর। মেয়েটির বাবা (পালক) স্থানীয় এক হিন্দুর কাছ থেকে বাড়িটি কিনেছিলেন, সঙ্গে কিছু জমিজমাও। আবার তাঁরা এই ঘরে ফিরে আসতে পারবেন বা চাইবেন কি না তা অনিশ্চিত। কাঠুয়ায় পা রেখে এটা আপাতত স্পষ্ট, জানুয়ারি মাসের ওই ঘটনা জম্মুতে জমির অধিকার, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ, পিডিপি-বিজেপি সম্পর্ক — সব কিছু নিয়েই জোরালো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE