Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দলিত ফেরাতে এ বার রাহুলের অম্বেডকর-ধ্যান

স্যুট বুট-কে ছুটি দিলেন আজ। বিরত রইলেন নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ কোনও কটাক্ষ ছোড়া থেকেও। ছুটি থেকে ফিরে যে নয়া অবতারে তাঁকে দেখা যাচ্ছিল প্রতি দিন, আজ যেন তাতে খানিকটা নতুন মাত্রা যোগ করলেন রাহুল গাঁধী। প্রথম বার চোখ ফেরালেন কংগ্রেসের ভ্রান্তির দিকে!

বি আর অম্বেডকরের জন্মস্থলে তাঁর মূর্তিতে মালা রাহুল গাঁধীর। মঙ্গলবার মহূতে। ছবি: পিটিআই।

বি আর অম্বেডকরের জন্মস্থলে তাঁর মূর্তিতে মালা রাহুল গাঁধীর। মঙ্গলবার মহূতে। ছবি: পিটিআই।

শঙ্খদীপ দাস
মহূ (মধ্যপ্রদেশ) শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

স্যুট বুট-কে ছুটি দিলেন আজ। বিরত রইলেন নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ কোনও কটাক্ষ ছোড়া থেকেও। ছুটি থেকে ফিরে যে নয়া অবতারে তাঁকে দেখা যাচ্ছিল প্রতি দিন, আজ যেন তাতে খানিকটা নতুন মাত্রা যোগ করলেন রাহুল গাঁধী। প্রথম বার চোখ ফেরালেন কংগ্রেসের ভ্রান্তির দিকে!

লোকসভা ভোটে ভরাডুবির ঠিক পর সনিয়া গাঁধী বলেছিলেন, ‘বিপর্যয়ের মুখেও ‘নেহরুর মতকে আঁকড়ে থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজবে দল।’ রাহুল আজ বললেন, ‘‘ভারতের সংবিধান, আর তাতে বলা ‘এক ব্যক্তি এক ভোট’-এর অধিকার সমাজের গঠনতন্ত্রকেই চিরতরে বদলে দিয়েছিল। সেই ভিত গড়া কারও একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। অম্বেডকরের সঙ্গে মিলে তা করেছিলেন নেহরু-গাঁধীজি।’’ আর এ কথা বলেই জাতিবাদকে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলার জন্য আজ কংগ্রেসকে আন্দোলনমুখী হওয়ার দিশা দেখাতে চাইলেন দলের সহসভাপতি।

মহূ-তে ব্রিটিশ জমানার সেনা ছাউনিতে জন্মেছিলেন ভীমরাও অম্বেডকর। বাবাসাহেবের জন্মস্থলে আজ তাঁর মূর্তিতে মালা দিয়ে কিছু ক্ষণের জন্য ধ্যানে বসেন রাহুল। আর তার মধ্যে দিয়েই বাবাসাহেবের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করেন তিনি। পরে দলিত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নেতাদের ও দলিতদের সঙ্গে দু’দফায় আলোচনায় বসেন। শেষে বক্তৃতা দেন জনসভায়। লক্ষণীয় ভাবে সেই মঞ্চে ছিলেন সুশীল শিন্দে, মল্লিকার্জুন খড়্গে, কুমারী শৈলজা-সহ কংগ্রেসের দলিত নেতারা। ছিলেন অবশ্য পি চিদম্বরম, কমলনাথ, দিগ্বিজয় সিংহ, কে রাজু-সহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও। অম্বেডকর-স্মরণের পোশাকি অনুষ্ঠান। তাই কৌশলেই আজ মোদীকে চটুল কোনও কটাক্ষ করা থেকে বিরত থাকেন রাহুল। বরং দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখেন মূল লক্ষ্যে।

সেটা কী?

ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানো। স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে উচ্চ বর্ণের হিন্দু, দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু মিলিয়ে রামধনু ভোটব্যাঙ্ক ছিল কংগ্রেসের। কিন্ত এর পর থেকে কাঁশীরাম-মায়াবতীরা কংগ্রেসকে অম্বেডকর-বিরোধী বলে লাগাতার প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন। আর কংগ্রেসে নেহরু-গাঁধীর ঐতিহ্যকেই অতিমাত্রায় আঁকড়ে থেকেছে। এই দুইয়ের যোগফল, কংগ্রেসের থেকে ক্রমেই দূরে সরেছেন দলিতরা।

সনিয়া গাঁধী পর্যন্ত এই ভ্রান্তিটা পুষে রেখেছিলেন! কিন্তু তাতেই আজ বদল চাইলেন রাহুল। অম্বেডকরকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন নেহরু-গাঁধীর সমান উচ্চতায়। তাঁর কথায়, ‘‘বাবাসাহেবের অবদানকে জাতি ও দেশের সীমায় বেঁধে রাখা যাবে না। জাতিবাদকে খতম করতে চেয়ে সে কারণেই দলিতদের তিনি শিক্ষিত ও সংগঠিত হয়ে লড়াইয়ে নামতে বলেছিলেন। কংগ্রেসও সেই মতে বিশ্বাসী। যাতে আর্থিক উদারিকরণ ও বৃদ্ধির লাভ সমাজের সব অংশের কাছে পৌঁছয়।’’

কংগ্রেস সহসভাপতি এ-ও বলেন, ‘‘জাতপাতকে পুঁজি করে কেউ হয়তো রাজনীতিতে সুবিধা পেয়ে যান। কিন্তু কর্মসংস্থান ও শিক্ষার ক্ষেত্রে তা এখনও প্রতিবন্ধকতা। লড়াইটা কঠিন হলেও কংগ্রেস এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়বে। দলিত ও পিছিয়ে পড়াদের উপরে যেখানে অত্যাচার হবে সেখানেই পৌঁছে যাবে কংগ্রেস।’’ কালই সনিয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছেন দলিতদের উপরে অত্যাচার নিয়ে। কংগ্রেস জমানায় জারি করা অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত না করার জন্য মোদীকে বিঁধেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। কৌশলে সে প্রসঙ্গই মনে করিয়ে দিয়ে রাহুলও বিজেপির গায়ে দলিত-বিরোধী তকমা সেঁটে দেওয়ার চেষ্টা চালান। বলেন, ‘‘রাজনীতিতে কিছু শক্তি আছে যাঁরা পিছিয়ে পড়াদের অধিকার দেওয়ার বিরুদ্ধে। তার অন্যতম দৃষ্টান্ত হল, মাদ্রাজ আইআইটি-র ঘটনা। অম্বেডকর-পেরিয়ারের নাম শুনেই ওরা ছাত্রদের ওই স্টাডি সার্কেলের কণ্ঠরোধ করতে চেয়েছে। জাতে-জাতে লড়াই বাধাতে চাইছে এই রাজনৈতিক শক্তি।’’

বিজেপিও জমি ছাড়তে নারাজ। মহূ-তে রাহুলের বক্তৃতা শেষ হতেই দিল্লিতে বিজেপির দলিত মোর্চার প্রধান দুষ্মন্ত গৌতম কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়ালকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘‘রাহুলের ওখানে যাওয়ার কোনও প্রয়োজনীয়তাই ছিল। বাবাসাহেবের সঙ্গে ঐতিহাসিক ভাবে অবিচার করেছে কংগ্রেস। এখন লোক দেখানো রাজনীতি করছে।’’

মহূর দশহরা ময়দানে আজ ভিড় হয়েছিল বিস্তর। ময়দান ছাপিয়ে ভিড় ছিল সড়কেও। মোদীর বিরুদ্ধে রাহুল ইদানীং যে রকম টিপন্নি করছেন, সেই ধারা অব্যাহত রাখলে উল্লাসে ফেটে পড়তে পারত সামিয়ানা। কিন্তু রাহুল হাঁটলেন মতাদর্শগত ভ্রান্তি দূর করার তাত্ত্বিক পথে। তাতে কিছুটা হতাশও হয় জনতা। তবে দ্বিগ্বিজয় সিংহ বলেন, ‘‘বিজেপি-শাসিত রাজ্যে এমন ভিড় যে হয়েছে এটাই ইতিবাচক। রাহুল বৃহত্তর রাজনীতির পথ দেখাতে চেয়েছেন। জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য যা জরুরি ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE