Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জমি-যুদ্ধে বঙ্গে রাহুল, নিশানা মমতাও

জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে একটা সময় আন্দোলনের অগ্নিভূমি হয়ে উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গ। পালাবদলের পরে শাসক দলের জমি অধিগ্রহণ-বিরোধী নীতির কারণে আজ যতই মার খাক রাজ্যের শিল্পায়ন ও উন্নয়ন— রাহুল গাঁধী এ বার নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘জমি অধিগ্রহণ ও গরিব বিরোধী নীতির’ বিরুদ্ধে লড়াইটাকে নিয়ে যেতে চাইছেন সেই বাংলাতেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৫ ০৩:৩৮
Share: Save:

জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে একটা সময় আন্দোলনের অগ্নিভূমি হয়ে উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গ। পালাবদলের পরে শাসক দলের জমি অধিগ্রহণ-বিরোধী নীতির কারণে আজ যতই মার খাক রাজ্যের শিল্পায়ন ও উন্নয়ন— রাহুল গাঁধী এ বার নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘জমি অধিগ্রহণ ও গরিব বিরোধী নীতির’ বিরুদ্ধে লড়াইটাকে নিয়ে যেতে চাইছেন সেই বাংলাতেই। বিশেষ করে যখন, এই অভিযোগ উঠেছে সারদা-তদন্তের ফাঁস থেকে রেহাই পেতে প্রকাশ্যে কেন্দ্রের জমি-নীতির বিরোধিতা করলেও তৃণমূল নেত্রী তলে তলে রাজনৈতিক রফা করছেন বিজেপির সঙ্গে। বাম ও কংগ্রেসের নেতাদের মুখে যা ‘ঝালমুড়ি’ রাজনীতি হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে গত ক’দিনে।

মাস দুই ছুটি কাটিয়ে ফেরার পর থেকেই নব-অবতারে রাহুল আক্রমণ শানাচ্ছেন এনডিএ সরকারকে। রাজ্যে-রাজ্যে মোদীর বিরুদ্ধে প্রচার, পদযাত্রা ও জসংযোগ চালাচ্ছেন। তারই অঙ্গ হিসেবে ৬ জুন তিনি পশ্চিমবঙ্গ সফরে যাবেন। এআইসিসি সূত্রে আজ এই কথা জানানো হয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে মোদী ও মমতা— দুজনকেই নিশানা করবেন রাহুল। জমি প্রশ্নে মোদী-রথ রোখার পাশাপাশি, রাজ্যে দলকে অন্যতম বিরোধী শক্তি করে তোলাও অন্যতম লক্ষ্য রাহুলের।

ঘরোয়া আলাচনাতেও দলের নেতারা মানছেন, জমি আইনের বিষয়টি উপলক্ষ্য মাত্র। রাহুলের সফরের আসল উদ্দেশ্য, বাংলায় খোয়ানো রাজনৈতিক জমি পুনরুদ্ধার করা। দলের কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করে ফের মাঠে নামানো। রাহুল-ঘনিষ্ঠরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে ক্রমশ নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো ও দলের ভাবী কর্ণধার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেও একটু একটু করে এগোচ্ছেন রাজীব-সনিয়ার পুত্র। রাহুলের দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, কলকাতায় নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে কর্মিসভায় বক্তৃতা দেবেন রাহুল। তবে এই সফরকে শুধু কলকাতায় সীমাবদ্ধ রাখতে চান না তিনি। জেলায় পদযাত্রা বা তেমন কোনও কর্মসূচিতে অংশ নিতে চান। প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর কাছে এ জন্য সবিস্তার প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে।

রাহুলের সম্ভাব্য এই সফর নিয়ে প্রশ্ন করা হলে দলের এক শীর্ষ সারির নেতা আজ বলেন, ‘‘গত এক দশক ধরে বাংলায় কংগ্রেসের সাংগঠনিক ক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আদৌ সে ভাবে মাথা ঘামাননি। জোট-প্রসঙ্গই অগ্রাধিকার পেয়ে এসেছে মূলত।’’ এটা ঘটনা, ইউপিএ-র প্রথম জমানায় বামেরা ছিল কেন্দ্রে চালিকা শক্তি। তখন নন্দীগ্রামে গুলিচালনার মতো ঘটনার পরেও কংগ্রেস প্রতিক্রিয়া জানাতে ইতস্তত করেছে। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে শরিক ছিল তৃণমূল। এই শরিকি নির্ভরতার কারণেই রাজ্যে সংগঠনের সর্বনাশ হয়েছে বলে দীপা দাশমুন্সি, অধীর চৌধুরীর মতো নেতা-নেত্রীরা বার বার হাইকম্যান্ডকে জানিয়েছেন। কংগ্রেসের ওই শীর্ষ নেতাটি জানান, রাজ্য নেতৃত্বের ক্ষোভকে গুরুত্ব দিয়েই অধীর চৌধুরীকে প্রদেশ সভাপতি করে সংগঠন মজবুত করার ভার দিয়েছেন রাহুল। তিনি চান, সংসদীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের সঙ্গে যেমন কক্ষ-সমন্বয় বা বিষয়নির্ভর বোঝাপড়াই হোক না কেন, মমতা সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেস আরও আক্রমণাত্মক হোক কংগ্রেস।

এআইসিসি-র ওই নেতার কথায়, ‘‘লোকসভা ভোটের পর পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভোট-শতাংশ বেড়েছে। রাহুল চান, পশ্চিমবঙ্গেও মোদী-রথ থামাতে। এবং রাজ্যে কংগ্রেসকে ফের বিকল্প শক্তি করে তুলতে।’’ তাই শুধু কেন্দ্রের সরকার নয়, বাংলায় গিয়ে মমতা সরকারের বিরুদ্ধেও রাহুল আক্রমণাত্মক হবেন বলে জানান ওই এআইসিসি নেতা। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির আর এক এক সদস্য বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল-বিজেপি যতই কুস্তি হোক না কেন, রাজ্যসভায় কিছু বিলে তৃণমূলের সহযোগিতা বা সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের গতি শ্লথ হওয়াটা সন্দেহজনক। এই অবস্থায় মোদীর জমি-নীতির বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে প্রচার করাটাও প্রাসঙ্গিক। যাতে তৃণমূল কোনও ভাবে কেন্দ্রকে সাহায্য করতে না পারে।

তৃণমূলে কোণঠাসা রাজ্যসভা সদস্য মুকুল রায় ক’দিন আগে অধীরবাবুকে সঙ্গে নিয়ে রাহুলের সঙ্গে দেখা করেছেন। অধীরবাবুই জানিয়েছেন, কংগ্রেসে যোগ দিতে চান মুকুলবাবু। তিনি এ-ও জানান, এ ব্যাপারে তাঁর করণীয় কিছু নেই। রাহুল তথা হাইকম্যান্ডই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এখন প্রশ্ন হল, মুকুল রায়কে কি আদৌ দলে নেওয়ার ছাড়পত্র দেবেন কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্ব? দিলে রাহুলের কলকাতা যাওয়ার আগেই কি তা ঘটতে পারে? এই প্রশ্নে অধীরবাবু আজও বলেন, ‘‘বিষয়টি শীর্ষনেতৃত্বের বিবেচনাধীন।’’ পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত দলের সাধারণ সম্পাদক সি পি জোশী অবশ্য বলেন, ‘‘রাহুল গাঁধীর সঙ্গে মুকুল রায় দেখা করেছেন, সেটা খবরের কাগজে দেখেছি। আদৌ এটা সত্যি কিনা তা-ই জানি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE