ছেলের হাতে দলের ভার ছেড়েছেন প্রায় দু’মাস হল। কিন্তু কংগ্রেসে এখনও পোক্ত হয়নি রাহুল গাঁধীর নেতৃত্ব। দলের অন্দরের খবর, প্রবীণ নেতাদের অনেকেই এখনও সনিয়া গাঁধীর দিকেই তাকিয়ে। ছেলের তুলনায় মায়ের নেতৃত্বে বেশি স্বচ্ছন্দ ইউপিএর শরিক দলগুলির নেতারাও। এই পরিস্থিতিতে রাহুলের কর্তৃত্ব বাড়াতে আসরে নামলেন সনিয়া। রাহুলকে পাশে নিয়েই কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকে বললেন, ‘‘রাহুল গাঁধী আমারও ‘বস’। এ বিষয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই।’’
রাহুলকে সভাপতি করার জন্য কংগ্রেসের ভিতরে দাবি যেমন ছিল, তেমনই প্রবীণ নেতাদের একাংশ চাইছিলেন সনিয়াই সভাপতি থাকুন। কংগ্রেস সূত্রে খবর, রাহুল সভাপতি হলেও তাঁরা চান সনিয়াই সিদ্ধান্ত নিন। এমনকী রাহুলকে পাশ কাটিয়ে তাঁরা অনেক সময়েই সনিয়ার দ্বারস্থ হন। পাশাপাশি, ইউপিএ শরিক এবং অ-এনডিএ অনেক দলই রাহুলের নেতৃত্ব মেনে নিতে নারাজ। ফলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী-বিরোধী জোট গড়ে তোলার চেষ্টায় কে নেতৃত্ব দেবেন, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছিল। আজ দলের ভিতরে-বাইরে সেই সংশয় কাটাতে বার্তা দিলেন সনিয়া।
কংগ্রেস সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন হিসেবে সাংসদদের সনিয়া বলেন, ‘‘আমি জানি, যে নিষ্ঠা, আনুগত্য, উৎসাহ দিয়ে আমার সঙ্গে কাজ করেছেন, সে ভাবে তাঁর (রাহুল) সঙ্গেও করবেন। আমি নিশ্চিত, তাঁর নেতৃত্বে একসঙ্গে কাজ করে দলের ভাগ্য বদল করব। যে প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। বদলের হাওয়া আসছে।’’ রাহুলের নেতৃত্বে গুজরাত, রাজস্থানে সাম্প্রতিক সাফল্যের দৃষ্টান্ত দেখিয়ে দলকে চাঙ্গা করার চেষ্টাও এ দিন করেছেন সনিয়া। এমনকী, লোকসভা ভোট এগিয়ে আসার সম্ভাবনা প্রকাশ করে এখন থেকেই ঝাঁপাতে বলেছেন দলকে। পাশাপাশি সমমনোভাবাপন্ন দলগুলিকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাদের সঙ্গে তিনি আলোচনা চালালেও বিরোধী জোট গড়ে উঠবে রাহুলের নেতৃত্বেই।
এ দিনের বৈঠকে মোদীকে তুলোধনা করেছেন সনিয়া। প্রধানমন্ত্রীর ‘মিনিমাম গভর্নমেন্ট, ম্যাক্সিমাম গভর্ন্যান্স’ স্লোগানকে কটাক্ষ করে বলেছেন, এটা হল ‘ম্যাক্সিমাম মার্কেটিং, মিনিমাম ডেলিভারি’ সরকার। সনিয়ার মতে, ২০১৪ সালে দল বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল ঠিকই, কিন্তু তাঁর বিশ্বাস সেটা ব্যতিক্রম ছিল। তাঁর দাবি, মোদী সরকারের উপর মোহভঙ্গ হচ্ছে মানুষের। সেই অসন্তোষকে সমর্থনে পরিণত করতে হবে। কারণ, মোদী জমানায় গণতন্ত্রের ভিত নষ্ট হয়েছে, ভয় ও হুমকির পরিবেশ তৈরি হয়েছে, সংখ্যালঘু ও মহিলারা নিরাপদ নন, দলিতদের উপর অত্যাচার হচ্ছে, ভোটে মেরুকরণ হচ্ছে, অর্থনীতি নিয়ে ঢাক পেটানো হলেও বাস্তব ভিন্ন। এই পরিস্থিতিতে মোদী সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে মানুষের কথা মেলে ধরে ইতিবাচক ও বিশ্বাসযোগ্য প্রচার করতে হবে দলকে, বলেছেন সনিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy