Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সইদ-কাণ্ড নিয়ে মুখ খুললেন রাহুল

লস্কর নেতা হাফিজ সইদের সঙ্গে সাংবাদিক বেদপ্রতাপ বৈদিকের বৈঠক নিয়ে দ্বিতীয় দিনেও শোরগোল হল সংসদে। আজ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন রাহুল গাঁধীও। তা বাদে পাকিস্তানি এক চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাশ্মীর সম্পর্কে বৈদিকের মন্তব্য নিয়েও বিতর্ক ছড়িয়েছে। কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ারের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে পাকিস্তানে যান বৈদিক। আরএসএস-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বৈদিক সে দেশে লস্কর নেতা হাফিজের সঙ্গে দেখা করায় বিতর্ক শুরু হয়। মোদী সরকারের দূত হিসেবে বৈদিক হাফিজের সঙ্গে দেখা করেন বলে দাবি করেন বিরোধীদের একাংশ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০২:৪২
Share: Save:

লস্কর নেতা হাফিজ সইদের সঙ্গে সাংবাদিক বেদপ্রতাপ বৈদিকের বৈঠক নিয়ে দ্বিতীয় দিনেও শোরগোল হল সংসদে। আজ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন রাহুল গাঁধীও। তা বাদে পাকিস্তানি এক চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাশ্মীর সম্পর্কে বৈদিকের মন্তব্য নিয়েও বিতর্ক ছড়িয়েছে।

কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ারের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে পাকিস্তানে যান বৈদিক। আরএসএস-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বৈদিক সে দেশে লস্কর নেতা হাফিজের সঙ্গে দেখা করায় বিতর্ক শুরু হয়। মোদী সরকারের দূত হিসেবে বৈদিক হাফিজের সঙ্গে দেখা করেন বলে দাবি করেন বিরোধীদের একাংশ।

আজ সংসদে ঢোকার আগে রাহুল গাঁধী বলেন, “বৈদিক আরএসএসের সদস্য। হাফিজের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের ব্যবস্থা ভারতীয় হাইকমিশনই করেছিল কি না তা আমরা জানতে চাই।”

লোকসভার অধিবেশন শুরু হতেই হাফিজ প্রসঙ্গে কেন্দ্রের বক্তব্য জানতে চান কংগ্রেস সাংসদরা। স্পিকার সুমিত্রা মহাজন প্রশ্নোত্তর পর্ব বাতিল করার দাবি মানেননি। তার পরেই সভার ওয়েলে এসে স্লোগান দিতে থাকেন কংগ্রেস সাংসদরা। রাজ্যসভাতেও হাফিজ কাণ্ড নিয়ে গোলমালের জেরে দু’বার অধিবেশন স্থগিত রাখতে হয়।

পরে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ লোকসভায় বলেন, “বৈদিক-হাফিজ বৈঠকের সঙ্গে সরকারের যোগ নেই। বৈদিক কারও অনুগামী বা দূত নন। হাফিজের সঙ্গে তাঁর বৈঠক নিয়ে আমাদের কাছে কোনও তথ্য ছিল না।” রাজ্যসভায় প্রায় একই সুরে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছেন, “এক জন ব্যক্তিগত উদ্যোগে কূটনৈতিক স্তরে অ্যাডভেঞ্চার করতে গিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন।” আরএসএস নেতা রাম মাধবের বক্তব্য, “বৈদিকের সঙ্গে সঙ্ঘের যোগ নেই।” বৈদিকও সেই সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন।

কিন্তু কেন্দ্রের এই অবস্থান মানতে কেবল বিরোধী নয়, রাজি নয় বিজেপিরও একাংশ। বৈদিকের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া বা গ্রেফতারির দাবি করেছেন বিরোধীরা। তাতে সায় দিয়ে বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলেছেন, “প্রতিনিধি দলের নেতা ছিলেন মণিশঙ্কর আইয়ার। তাঁকেও জেরা করা উচিত।” বিতর্কের জেরে হাফিজ-বৈদিক বৈঠক নিয়ে ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছে কেন্দ্র।

কেবল হাফিজের সঙ্গে বৈঠক নয়, পাক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া বৈদিকের সাক্ষাৎকার নিয়েও বিতর্ক ছড়ায়। ওই সাক্ষাৎকারে বৈদিক কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে ‘তৃতীয় পথে’র কথা বলেন। তাঁর প্রস্তাব অনুযায়ী, ভারত ও পাকিস্তান চাইলে কাশ্মীর ‘স্বাধীন’ হতে পারে। প্রয়াত পাক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকেও তিনি এই প্রস্তাব দেন বলে সাক্ষাৎকারে দাবি করেন বৈদিক। আজ বক্তব্যের অন্য ব্যাখ্যা দেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “আমি বরাবরই স্বাধীনতার (আজাদি) পক্ষে। দিল্লিতে মানুষের যে স্বাধীনতা আছে শ্রীনগরে তাই থাকা উচিত। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরেও থাকা উচিত। সে কথাই বলেছি।” তাঁর দাবি, ভারত থেকে কাশ্মীরকে বিচ্ছিন্ন করার কথা কখনওই বলেননি তিনি।

কূটনীতিকদের মতে, বৈদিক সরাসরি ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে পাকিস্তান যাননি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই বেসরকারি ভাবে দূতের কাজ করেন অনেকে। মনমোহন সিংহের জমানায় পাকিস্তান গিয়েছিলেন আইনজ্ঞ ও লেখক এ জি নুরানি। তিনিও ভারত ও পাকিস্তানের হাতে থাকা কাশ্মীরের দুই অংশকে জুড়ে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে পাক নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। সে ক্ষেত্রে কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে দুই অংশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর কথা বলা হয়। অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে প্রায় একই পরিকল্পনা নিয়ে পাকিস্তান যান প্রাক্তন বিদেশসচিব এম কে রাসগোত্র।

কূটনৈতিক সূত্রের খবর, এই ধরনের কোনও দায়িত্ব বৈদিককেও দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু পাক টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার-সহ নানা উপায়ে নিজের সফরের প্রচার করতে গিয়ে কেন্দ্রকে বিপাকে ফেলেছেন তিনি। ফলে, এখন কোনও ভাবেই তাঁর সঙ্গে সম্পর্কের কথা স্বীকার করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। আপাতত তাই একাই লড়তে হবে বৈদিককে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rahul gandhi hafiz saeed Ved Pratap Vaidik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE