ভোট বড় বালাই! আর তারই ধাক্কায় সম্পর্কের বরফ গলিয়ে ফের কাছাকাছি রাহুল গাঁধী ও লালু প্রসাদ যাদব। শেষ মুহূর্তে কৌশলের বদল না হলে বিহার ভোটে দু’জনে যৌথ জনসভাও করবেন।
২০ সেপ্টেম্বর চম্পারণ থেকে ভোটের প্রচার শুরু করতে চান রাহুল। সূত্রের খবর, তাঁদের পারস্পরিক সম্পর্ক ঘিরে ‘মিথ’ ভাঙতে চেয়ে চম্পারণের সেই মঞ্চে লালু প্রসাদকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। মহাজোটের ওই মঞ্চে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকেও।
সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে বরাবরই রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল লালুর। কিন্তু রাহুলের সঙ্গে যাদব সেনাপতির সম্পর্কে রোদের তুলনায় ছায়াই বেশি দেখা গিয়েছে এত দিন। ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে লালু জোট ভেঙে দেওয়ার পর থেকেই যার সূত্রপাত। গত বিধানসভা ভোটে লালুর অনুরোধ উপেক্ষা করে বিহারে একলা চলেন রাহুল। তাতে কংগ্রেসকে খেসারত দিতে হয় ঠিকই, কিন্তু লালুও মুখ থুবড়ে পড়েন। উভয়ের সম্পর্কের টানাপোড়েন চরমে পৌঁছয় গত লোকসভা ভোটের ঠিক আগে। দাগী সাংসদ বাঁচাতে মনমোহন সরকারের আনা অধ্যাদেশ ছিঁড়ে ফেলার ডাক দেন রাহুল। তার জেরে পশুখাদ্য মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যায় লালুর।
বিহার ভোটে সেই লালুর সঙ্গেই জোট হয়েছে কংগ্রেসের। জাতীয় স্তরে বিজেপিকে রুখতে তাঁর ‘একলা চলোর’ তত্ত্বও ছুড়ে ফেলতে হয়েছে রাহুলকে! মহাজোটে সামিল নীতীশও। যে প্রশ্নটা দলকে খোঁচাচ্ছে, তা হল— রাহুল-লালু আদৌ যৌথ সভা হবে কি! না হলে কীসের জোট হল! কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, যৌথ সভার ব্যাপারে এখন রাহুল নিজেই আগ্রহী। গত রবিবার লালু-নীতীশের নিমন্ত্রণে পটনার গাঁধী ময়দানে ডাকা স্বাভিমান র্যালিতে উপস্থিত ছিলেন সনিয়া গাঁধী। তার মাধ্যমে জোটের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয়ের ব্যাপারে এক দফা বার্তা গিয়েছে। এ বার রাহুল চাইছেন চম্পারণে কংগ্রেসের সভায় উপস্থিত হোন লালু-নীতীশ। এমনিতে বিহারে কংগ্রেসের রাজনৈতিক শক্তি বিশেষ নেই। শুধু উজ্জ্বল ও বর্ণময় ইতিহাসটাই রয়ে গিয়েছে। মহাত্মা গাঁধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে চম্পারণের যোগটা বহু পুরনো। সেই ঐতিহ্যের আবহেই বিহারে ধর্মনিরপেক্ষ জোটের সুতো বুনতে চাইছেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি। এআইসিসি-র এক সদস্য আজ বলেন, ‘‘লালু-রাহুল সম্পর্ক নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ও রাজনৈতিক আলোচনায় যে ‘মিথটা’ রয়েছে, তা ভুল নয় ঠিকই। কিন্তু এ-ও ঘটনা, রাজনীতির প্রয়োজনে বাস্তবকে মেনে নিতে রাহুল দেরিও করেননি।’’ তাঁর বক্তব্য, এটাও বলা যেতে পারে, বিহারে যে মহাজোট তৈরি হয়েছে, তার অন্যতম কারিগর রাহুল। জোটের বিষয়টি একটা সময় পর্যন্ত লালু করছি-করব করে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। তখন রাহুলের তরফেই লালুকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, তিনি জোটে আগ্রহী না হলে বিহার ভোটে কংগ্রেস ও জেডিইউ জোট গড়ে লড়বে। এমনকী নীতীশের সঙ্গে দেখা করলেও লালুকে সাক্ষাতের সময় পর্যন্ত দেননি সনিয়া-রাহুল। রাহুল-নীতীশ বৈঠকের পর দিনই জোটের ব্যাপারে সম্মতি দেন লালু। এমনকী নীতীশের নেতৃত্বও মেনে নেন।
কংগ্রেস নেতারা এখন লালুর প্রশংসাও করছেন। এআইসিসি-র এক সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘আসলে ভোট রয়েছে লালুর সঙ্গে। তুলনায় নীতীশের জনভিত্তি কম। কারণ রাহুল-লালু কতটা মিললেন বা না মিললেন তার থেকেও বড় জেডিইউ এবং আরজেডি কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে মাঠে নামানো।’’ নেতারা জানেন, নিচুস্তরে তেলে জলে মেশানো কতটা কঠিন। লালুর আগ্রহেই অনেকটা সমন্বয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। চম্পারণের সভার মাধ্যমে সেই ছবিটাই আরও মজবুত করে তুলে ধরতে চান রাহুল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy