চমক নয়, এ বার সঙ্কটের কথাই বেশি করে বলছেন রাখি সঙ্ঘের কর্মকর্তারা। বাজার মন্দা, মূল্যবৃদ্ধি, সভা ডাকতে দেরি, চাঁদা তোলায় নতুন প্রজন্মের অনুপস্থিতি, পুরনো মণ্ডপশিল্পীর কাজে অনীহা, নতুন শিল্পী খুঁজে পেতে সম— সে সব। বলা যেতে পারে, তাঁদের সাম্প্রতিক সঙ্কটই বড় চমক হতে পারে দর্শনার্থীদের কাছে।
তবু হতাশ হয়ে ফিরতে হবে না কাউকে, এমনই দাবি পুজো কমিটির কার্যবাহী সভাপতি নিরূপম বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর বক্তব্য, ১৯৬৯ সাল থেকে পুজো হচ্ছে। ১৯৮৪ থেকে বড় বাজেট। এর দু’বছরের মধ্যে প্রথম পুরস্কার মেলে। সে বার থার্মোকলের মণ্ডপ গড়েছিল রাখি সঙ্ঘ। শিলচরের প্রথম থার্মোকলের মণ্ডপ। তখন থেকেই দর্শনার্থীদের প্রত্যাশা বেড়ে যায় তাঁদের কাছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন সোনাই রোডে। ওই সব ভেবে শেষে আলোকসজ্জায় গুরুত্ব দেওয়া হয়।
নিরূপমবাবু জানান, মণ্ডপ সাধারণই হচ্ছে, প্রতিমা গত বারের মতো। তবে সারা পথ আলোর বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়া হবে। পথে-পথে মানুষ দেখবেন রামায়ণ-মহাভারতের নানা কাহিনি। স্থানীয় বিভিন্ন বিষয়েও থাকবে আলোর খেলা। রাখি সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক গণেশ চক্রবর্তী শোনান, ১৯৮৪ সালে ৬৪ হাজার টাকা চাঁদা উঠেছিল। সে বার বড় পুজো করায় পরের বছরেই প্রায় দ্বিগুণ অর্থ আসে পূজা তহবিলে। সেটা প্রতি বছর ক্রমে বাড়ছিল। গত বছর সংগ্রহ হয় আট লক্ষ টাকা। কিন্তু এ বার সঙ্কটে পড়তে হল। ফলে বাজেট কমানো হয়েছে। সবেতেই কাটছাঁট। বাদ দেওয়া হয়েছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও।
নিরূপমবাবু শোনালেন, সঙ্কট শুধু মানুষ কম চাঁদা দিচ্ছেন, সেটাই নয়। কম হোক আর বেশি, কে বা কারা চাঁদা আদায় করবে, এও এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন প্রজন্ম এই সব ব্যাপারে মোটেও উৎসাহ দেখাচ্ছে না। ফলে কাজ করা বেশ মুশকিল। সে জন্যই এ বার সভা ডাকতে দেরি হয়ে যায়। তাতে পিছিয়ে যায় কমিটি গঠন সহ যাবতীয় প্রস্তুতি। শেষে করুণা নাথকে সভাপতি ও নির্মলেন্দু দেবকে সম্পাদক মনোনীত করা হয়। ততক্ষণে পুজো-বেলা অনেকটাই গড়িয়ে গিয়েছে। অন্য বারের মণ্ডপশিল্পী জানিয়ে দিয়েছেন, এই বছর তিনি কাজ করতে পারবেন না। শুরু হয় নতুন শিল্পীর সন্ধান। সে এক বিরাট সমস্যা। যেখানে যাচ্ছিলেন সেখানেই শুনতে পান, এই সময়ে নতুন কাজ হাতে নেওয়ার সুযোগ নেই। শেষ পর্যন্ত দিলীপ দাসকে সম্মত করা গিয়েছে। তিনিই কাঠ-কাপড়ে কাল্পনিক মন্দির তৈরি করছেন। দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে ৪৫ মিটার। প্রতিমা শিল্পী অবশ্য আগের বারের বঙ্কা পালই।
পুজো আয়োজকরা আশাবাদী, শেষ পর্যন্ত খুব একটা খারাপ হবে না। তবু নিরূপমবাবুর আক্ষেপ, ‘‘ছোটবেলায় মণ্ডপে ঢাক ভাড়া করে আনা হতো। তাকিয়ে থাকতাম, কখন ফাঁকা পাওয়া যাবে। একটু বাজাব। আজকের তরুণ প্রজন্মের সে সবে আগ্রহ নেই। সে জন্য ঢাকির জন্যও টাকা দিতে হয়।’’ এ বারের অভিজ্ঞতায় পুজোর ভবিষ্যৎ নিয়েই আশঙ্কায় নিরূপমবাবু, গণেশ চক্রবর্তীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy