বেজায় গোল বেঁধেছে তাঁর পাওনা আদায় নিয়ে। তার জেরে মামলা লড়ার টাকাই নেবেন না রাম জেঠমলানী! শুধু তাই নয়, দরকারে ভবিষ্যতেও তিনি বিনে পয়সাতেই মামলা লড়ে দেবেন অরবিন্দ কেজরীবালের হয়ে!
যুক্তি? প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ তথা প্রবীণ পেশাদার এই আইনজীবী বলছেন, অরুণ জেটলির চেয়ে তাঁর মক্কেল কেজরীবাল ঢের বেশি সৎ। সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত।
কেজরীবালের কাছে তাঁর পাওনার অঙ্কটি নেহাত কম নয়। ৩ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী সেই টাকা সরকারি কোষাগার থেকে দিতে বলাতেই বেজায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বিজেপি নেতারা বলছেন, এটা তো খোলাখুলি জনগণের টাকা লুট করা! আর কেজরীবালের বক্তব্য, ‘‘আমি তো আর নিজের সম্পত্তি বাঁচাতে লড়ছি না। তা হলে পকেট থেকে টাকা দেব কেন?’’ আপের অন্য নেতারাও বলছেন, অরুণ জেটলির বিরুদ্ধে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে মামলা লড়তে হচ্ছে ক্রিকেটকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য। সেই মামলা লড়ার টাকা তাই সরকারকেই জোগাতে হবে।
উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়াও সেই যুক্তিতে মোহর বসিয়েছেন সরকারি কাষাগার থেকে ওই টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে। সেই নির্দেশ চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপ-রাজ্যপাল অনিল বাইজলের কাছে পৌঁছলে তিনি এ নিয়ে সলিসিটর জেনারেল রঞ্জিৎ কুমারের পরামর্শ চেয়েছেন। জানতে চেয়েছেন, কেজরীবালের বিরুদ্ধে জেটলির করা মামলার খরচ দিল্লি সরকারের জোগানো উচিত কি না।
মণীশ সিসৌদিয়া, আশিস খেতানের মতো আপ নেতারা অবশ্য এ দিনও দাবি করেছেন, সরকারি তহবিল থেকেই জেঠমলানীর প্রাপ্য টাকা মেটানো হবে। কারণ, দিল্লি ক্রিকেট সংস্থায় দুর্নীতির তদন্তের আদেশ দিয়েছিল কেজরীবাল সরকার। তার জেরেই এই মামলা। ফলে সরকারই মামলা লড়বে।
দিল্লি সরকারের সচিবালয়ে সিবিআই হানা দেওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবাল দাবি করেছিলেন, দিল্লি ক্রিকেট সংস্থার দুর্নীতিতে জেটলি জড়িত। সেই দুর্নীতি সংক্রান্ত ফাইল সরাতেই এসেছিল সিবিআই। এর পরেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জেটলি। আর কেজরীবালের হয়ে সওয়াল করার সিদ্ধান্ত নেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ জেঠমলানী।
গত মাসে সেই মামলার শুনানিতে দু’দিন ধরে জেটলি বনাম জেঠমলানীর রীতিমতো বাগ্যুদ্ধ হয়। যা শুনতে প্রচুর মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন দিল্লি হাইকোর্টে। শুনানিতে জেঠমলানী এমনও বলেন, ‘‘আপনি তো আমৃতসরে ভোটে দাঁড়িয়ে হেরে গিয়ছিলেন। আপনার মান কোথায় যে মানহানি হবে?’’ এই সব সংবাদমাধ্যমে ফলাও প্রচার পায়। অস্বস্তিতে পড়েন বিজেপি নেতৃত্ব। রাজনীতিকদের মতে, জেটলির সঙ্গে বরাবরই জেঠমলানীর পেশাগত দ্বন্দ্ব ছিল। বিজেপির অন্দরেও তাঁরা কোনও দিনই একে অপরের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন না। সেই বিরোধের ছায়াই পড়েছে এই মামলায়। রাজনীতির লোকজনেরা ঘরোয়া ভাবে বলছেন, পেশাদার হলেও প্রবীণ আইনজীবী জেঠমলানীর কাছে জেটলির বিরুদ্ধে মামলা লড়া ও তাঁকে কোণঠাসা করাটা সে কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। এবং সম্ভবত সে কারণেই জেঠমলানী আজ জানিয়ে দিয়েছেন, কেজরীবাল বিল মেটাতে না পারলে তাঁর আপত্তি নেই। তিনি টাকা না নিয়েই সওয়াল করবেন।
এই সূত্রে বিজেপি নেতৃত্বকে কটাক্ষ করে আশিস খেতানের বক্তব্য, ‘‘নরেন্দ্র মোদীজি, আপনার অর্থমন্ত্রী আজীবন কেলেঙ্কারিতে জড়িত প্রভাবশালীদের মামলা লড়েছেন। তিনি নামী আইনজীবী নিয়োগ করতেই পারেন। কেজরীবালজি লড়েছেন গরিবের জন্য। নামী আইনজীবীর প্রাপ্য টাকা দেওয়ার ক্ষমতা তাই কেজরীবালজির নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy