Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
গ্রেফতার ধর্মগুরু রামপাল

অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে আশ্রম থেকে বার করল পুলিশ

বুধবার রাত আটটা। হিসারের বারওয়ালার আশ্রমে তখন থিকথিক করছে পুলিশ আর আধা সেনা বাহিনীর জওয়ান। সংবাদমাধ্যমে টানটান উত্তেজনা। যে কোনও মুহূর্তে গ্রেফতার হতে পারেন রামপাল। যাঁকে ঘিরে কার্যত দু’দিন অচল হয়েছিল হরিয়ানার হিসার। বেশ কিছু ক্ষণ পরে আশ্রম থেকে একটা বড় অ্যাম্বুল্যান্স বেরোতে দেখা গেল। রাত তখন পৌনে দশটা। পুলিশ জানাল, আশ্রমের ভিতরে ঢুকে স্বঘোষিত ধর্মগুরু রামপালকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আশ্রমের বাইরে ভক্তদের গাড়ি জ্বালিয়ে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবি: এএফপি।

আশ্রমের বাইরে ভক্তদের গাড়ি জ্বালিয়ে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
চণ্ডীগড় শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৫
Share: Save:

বুধবার রাত আটটা। হিসারের বারওয়ালার আশ্রমে তখন থিকথিক করছে পুলিশ আর আধা সেনা বাহিনীর জওয়ান। সংবাদমাধ্যমে টানটান উত্তেজনা। যে কোনও মুহূর্তে গ্রেফতার হতে পারেন রামপাল। যাঁকে ঘিরে কার্যত দু’দিন অচল হয়েছিল হরিয়ানার হিসার। বেশ কিছু ক্ষণ পরে আশ্রম থেকে একটা বড় অ্যাম্বুল্যান্স বেরোতে দেখা গেল। রাত তখন পৌনে দশটা। পুলিশ জানাল, আশ্রমের ভিতরে ঢুকে স্বঘোষিত ধর্মগুরু রামপালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এত দিন রামপালের স্বাস্থ্যকে ঢাল করেই বারবার তাঁর গ্রেফতারিতে বাধা দিয়েছেন ভক্তেরা। তাই আজ কোনও ঝুঁকি না নিয়ে পুলিশ একটি অ্যাম্বুল্যান্সই হাজির করে আশ্রমের বাইরে। রামপালকে নিয়ে যেটি দ্রুত রওনা হয় চণ্ডীগড়ের উদ্দেশে। সেখানে তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা হবে। পানীপতের পুলিশ সুপার সতীশ বালান জানিয়েছেন, আগামী কাল, আদালতের নির্ধারিত সময়ের এক দিন আগেই হাজির করানো হবে রামপালকে।

এই আদালতে হাজিরা দেওয়া নিয়েই যাবতীয় ঝামেলার সূত্রপাত। একটি খুনের মামলায় অভিযুক্ত আশ্রম প্রধান রামপালকে শুক্রবারের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট। এর আগে ৪২ বার হরিয়ানার বিভিন্ন আদালতের সমন অগ্রাহ্য করেছেন রামপাল। কয়েক সপ্তাহ আগেও বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল ওই আশ্রমের সামনে। কিন্তু গত কাল পুলিশ যখন রামপালকে গ্রেফতার করতে যায়, তখনই বিপত্তি বাড়ে। রামপালের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী পুলিশকে আশ্রমে ঢুকতে বাধা দিতে শুরু করে। সশস্ত্র ওই বাহিনী পুলিশকে লক্ষ্য করে অ্যাসিড, পেট্রোল বোমাও ছোড়ে। পুলিশের দাবি, ঢাল করা হয় আশ্রমের মহিলা ও শিশুদেরও।

এই অবস্থায় কাল রাতে অভিযান স্থগিত রাখে হরিয়ানা পুলিশ। পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়ার জন্য সমালোচনার মুখে পড়ে মনোহরলাল খাট্টারের সরকার। কংগ্রেসের অভিযোগ, পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ নবগঠিত বিজেপি সরকার। সমালোচনার মুখে পড়ে শেষে আধা সেনাকে অভিযানে সামিল করে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। আজ বিকেল থেকে আশ্রমের সামনে প্রায় ৫০০ জওয়ান মোতায়েন করা শুরু হয়। রাতে নয়াদিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করেন খাট্টার। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন, আইনের পথ মেনেই গ্রেফতার করা হবে রামপালকে, যিনি একটা সময় হরিয়ানা সরকারেরই এক দফতরে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে অবহেলার জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় তাঁকে।

রাতের দিকে রামপালকে গ্রেফতার করা হলেও আজ দিনভর উত্তপ্ত ছিল হিসার। আজ সকালেই ওই আশ্রম থেকে উদ্ধার করা হয় পাঁচ মহিলা ও এক শিশুর দেহ। কী ভাবে আশ্রমের ওই আবাসিকদের মৃত্যু হয়েছে তা নিয়ে অন্ধকারে পুলিশও। প্রাথমিক ময়না-তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলাদের দেহে আঘাতের কোনও চিহ্ন নেই। তবে আশ্রমের বেশ কিছু আবাসিক জানিয়েছেন, খাবার আর জলের অভাবেই মৃত্যু হয়েছে ওই মহিলাদের। গত এক সপ্তাহ ধরে আশ্রমের বাসিন্দারা ঠিক মতো খাবার পাচ্ছেন না। জল আর বিদ্যুতের লাইনও কেটে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় আশ্রমে থাকাটা নারকীয় হয়ে উঠছিল বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। আঠারো মাসের শিশুটি জন্ডিসে ভুগছিল। সম্ভবত চিকিত্‌সার অভাবেই মৃত্যু হয়েছে তার। গত কয়েক দিনে রামপালের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীরা আশ্রমের বেশ কিছু মহিলাকে ধর্ষণ করেছে বলেও অভিযোগ।

আজ বিকেলেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার জানিয়ে দিয়েছিলেন, রামপালকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত পুলিশের এই অভিযান শেষ হবে না। টুইটারে তিনি লেখেন, “সরকার এবং পুলিশ হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে চলতে বদ্ধ পরিকর। তবে কোনও নিরীহ মানুষের যাতে প্রাণহানি না হয়, তা আমরা দেখছি।” তার আগেই অবশ্য রামপাল, তাঁর ভাই পুরুষোত্তম দাস এবং তাঁর কিছু সহকারীর বিরুদ্ধে প্ররোচনা এবং দেশদ্রোহ-সহ একাধিক মামলা দায়ের করে ফেলেছে হরিয়ানা পুলিশ।

আজ সকালেই পালানোর চেষ্টা করেছিলেন পুরুষোত্তম। তখনই তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। রাতে রামপালের ছেলে-সহ আশ্রমের প্রায় ৭০ জন নিরাপত্তারক্ষীকে গ্রেফতার করা হয়। কাল রাতেই আশ্রমের অর্ধেকের বেশি বাসিন্দারা আশ্রম ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। আজ রাতে অভিযানের আগে খালি করে দেওয়া হয় আশ্রম। শুধুমাত্র রামপাল আর তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকারীরা রয়েছেন, নিশ্চিত হয়েই আশ্রমের ভিতরে ঢোকে পুলিশ। তত ক্ষণে কে বা কারা আশ্রমের বাইরে দাঁড় করানো বেশ কয়েকটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। ঝামেলা শুরু হয়ে যায় হিসারের অন্য এলাকাতেও। রামপাল-বিরোধী একটি মিছিল রাস্তাতেই আটকে দেয় পুলিশ। রামপালের গ্রেফতার পরবর্তী ঝামেলা ও গোলমাল এড়াতে বিশাল পুলিশ মোতায়েন করে কার্যত অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে হিসারকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE