Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
জানাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক

সরকারের পরামর্শে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুপারিশে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন মোদী

পরামর্শ সরকারের। এর পরে সুপারিশ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। তার ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। নোট-বাতিলের সিদ্ধান্তের পিছনে আসলে কে? এই প্রশ্নের জবাবে সংসদীয় কমিটিকে এই ব্যাখ্যাই দিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যদিও নোট-বাতিল নিয়ে বিরোধীদের মিলিত আক্রমণের মুখে মোদী সরকারের মন্ত্রীরা বলে আসছিলেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কই এর সুপারিশ করেছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তা কার্যকর করেছেন মাত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৭
Share: Save:

পরামর্শ সরকারের। এর পরে সুপারিশ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। তার ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। নোট-বাতিলের সিদ্ধান্তের পিছনে আসলে কে? এই প্রশ্নের জবাবে সংসদীয় কমিটিকে এই ব্যাখ্যাই দিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যদিও নোট-বাতিল নিয়ে বিরোধীদের মিলিত আক্রমণের মুখে মোদী সরকারের মন্ত্রীরা বলে আসছিলেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কই এর সুপারিশ করেছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তা কার্যকর করেছেন মাত্র।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট বলছে, ৭ নভেম্বর সরকারের তরফেই লিখিত পরামর্শ এসেছিল ৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিলের বিষয়টি বিবেচনার জন্য। সেই ‘অ্যডভাইস’-এর সূত্রেই পরের দিন বৈঠকে বসে রিজার্ভ ব্যঙ্কের কেন্দ্রীয় বোর্ড। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারকে নোট-বাতিলের পদক্ষেপ করার সুপারিশ করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। প্রধানমন্ত্রী সেই রাতেই টিভিতে ঘোষণা করেন, রাত ১২টার পর থেকে অচল হয়ে যাবে ৫০০-১০০০ টাকার নোট। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ৭ পাতার এই নোটটি পাঠিয়েছে সংসদের অর্থ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির কাছে। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা বীরাপ্পা মইলি এই কমিটির প্রধান।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর ওয়াই ভি রেড্ডি গত কালই অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের প্রাতিষ্ঠানিক সত্তা নষ্ট হয়েছে। দাঁত বসানো হয়েছে এর স্বায়ত্তশাসনে। সরকার ‘পরামর্শ’ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তড়িঘড়ি যে ভাবে তাতে সায় দিয়েছে, তাতে রেড্ডির অভিযোগের সত্যতাই প্রমাণিত হল বলে মনে করছে বিরোধী দলগুলি।

তথ্য জানার আধিকার আইনে একটি সংবাদপত্র সংস্থা জানতে চেয়েছিল, কী পরিস্থিতিতে, কবে নোট বাতিল নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এর জবাবে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, তাদের কেন্দ্রীয় বোর্ডের ৮ নভেম্বরের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সরকারকে সুপারিশ করার সিদ্ধান্তও হয় ওই বৈঠকেই। ওই বৈঠকের আলোচনার বিবরণী অবশ্য দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে রিজার্ঙ ব্যাঙ্ক। যুক্তি, তথ্য জানার অধিকার আইন ২০০৫ –এর ৮(১)ক ধারায় এ বিষয়ে ছাড় দেওয়া রয়েছে।

সংসদীয় কমিটিকে দেওয়া নোটে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানাচ্ছে, দু’হাজারি নোট চালু করার সুপারিশ করা হয়েছিল অনেক আগে। ২০১৬-র ১৮ মে কেন্দ্রীয় সরকার এ ব্যাপারে সায় দেওয়ার পরের দিন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কেন্দ্রীয় বোর্ড ২০০০-এর নোট চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। তখন বা এর পরে জুলাই ও অগস্টে কেন্দ্রীয় বোর্ডের যে যে বৈঠক হয়েছে, সেখানে কখনওই নোট-বাতিলের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়নি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর পদে রঘুরাম রাজনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬-র ৪ সেপ্টেম্বর। উর্জিত পটেল দায়িত্ব নেন পরের দিন। অর্থাৎ রাজনের জমানায় নোট বাতিল নিয়ে কখনও আলোচনা হয়নি বলে স্পষ্ট জানাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

দু’হাজারের নোট চালুর আগে তার চেয়েও বড় অঙ্কের নোটের কথা ভেবেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ২০১৪ সালের ৭ অক্টোবর মোদী সরকারকে তারা ৫ হাজার ও ১০ হাজার টাকার নোট চালু করার প্রস্তাব দিয়েছিল। যুক্তি ছিল, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। বড় নোট এলে লেনদেনের সুবিধা হবে। কিন্তু সরকার তাতে সায় দেয়নি। কী কারণে? তার একটা ব্যাখ্যাও মিলেছে, সংসদীয় কমিটিকে দেওয়া রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নোটে। তাতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ‘এনফোর্সমেন্ট’ সংস্থা ও গোয়েন্দা সূত্রে বেশ কিছু দিন ধরেই খবর মিলছিল, কালো টাকা ও জাল টাকার কারবারিদের সুবিধে করে দিচ্ছে বড় অঙ্কের নোট। মূলত বড় নোটেই জোগানো হচ্ছে জঙ্গি কাজকর্মের অর্থ।

এই সবের মোকাবিলায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও সরকার নিজেদের মতো করে চেষ্টা চালাচ্ছিল। এক দিকে সরকার যেমন কালো টাকা নির্মূল করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ করছিল, পাশাপাশি রিজার্ভ ব্যাঙ্কও নতুন সিরিজের নোট চালু করা এবং নোটের সুরক্ষা-বৈশিষ্ট্যগুলি আরও উন্নত করার প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছিল। কারণ জাল নোট ঠেকাতে এটা করতেই হতো।

একটা পর্যায়ে এসে সরকার ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক উভয়েরই মনে হয় বড় নোট বাতিল করে নতুন সিরিজের নোট চালু করলে একই সঙ্গে তিনটে সমস্যার মূলে আঘাত করা যাবে। গত ৭ নভেম্বর কেন্দ্র নোট-বাতিলের কথা ভাবার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে পরামর্শ দিয়েছিল মূলত তিনটি সমস্যা মোকাবিলার কথা উল্লেখ করে: l জাল নোটের ব্যবহার রোখা l সন্ত্রাসবাদীদের অর্থের জোগান বন্ধ করা ও l কালো টাকার কবল থেকে অর্থনীতিকে মুক্ত করা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কেন্দ্রীয় বোর্ড সরকারের ওই পরামর্শকে সঙ্গত মনে করে ৮ নভেম্বর তার সুপারিশ জানিয়ে দেয়। সেই রাতেই মোদী টিভিতে জানিয়ে দেন, ৯ নভেম্বর থেকে ৫০০-১০০০-এর নোট বাতিলের কথা।

কিন্তু একই সঙ্গে কেন দু’হাজারি নোট চালুর ঘোষণা? রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতে, সেটা ‘সমাপতন’। তারা এর সুপারিশটি করেছিল সাড়ে পাঁচ মাসেরও বেশি আগে। -

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

RBI Demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE