Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Surgical Strike

উত্তরপ্রদেশ জয়ে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকেই ভরসা অমিতের

বিরোধীরা যা-ই বলুক, উন্নয়নকে পিছনে রেখে সেনা অভিযানকেই উত্তরপ্রদেশ ভোট-প্রচারের প্রধান হাতিয়ার করার নির্দেশ দিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ২০:০১
Share: Save:

বিরোধীরা যা-ই বলুক, উন্নয়নকে পিছনে রেখে সেনা অভিযানকেই উত্তরপ্রদেশ ভোট-প্রচারের প্রধান হাতিয়ার করার নির্দেশ দিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।

বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, দলের নেতাদের কাছে অমিত শাহ বলেছেন, অভিযানে সেনার সাফল্য হলেও নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে আক্রমণের সিদ্ধান্ত ‘রাজনৈতিক’। আর সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার হিম্মত দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে এই অমিত শাহের হাত ধরেই নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের অ্যাজেন্ডায় আশিটির মধ্যে সত্তরের বেশি আসন বিজেপি ঝুলিতে পুড়েছিল। দলের নেতাদের অমিত শাহ জানিয়েছেন, দেশের জন্য উন্নয়নও আসলে জাতীয়তাবাদ। এ বারে দেশের নিরাপত্তাও আরও বড় জাতীয়তাবাদ। ফলে সেটিকে পুঁজি করেই উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতা দখলে ঝাঁপাতে হবে।

‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নিয়ে বিজেপির এই রাজনীতিতে তিতিবিরক্ত বিরোধীরা পরিস্থিতি মোকাবিলার কুল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না। আগামিকাল সংসদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির বৈঠক আছে। সেখানে সেনার পক্ষ থেকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নিয়ে সাংসদদের জানানোর কথা ছিল। কিন্তু এখন শেষমুহূর্তে সেই অ্যাজেন্ডা বদলে ফেলা হয়েছে। কারণ, কংগ্রেস সেখানে সেনাকে চেপে ধরার তালে ছিল। সদ্য গতকালই প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর বলেছেন, ২০১১ সালের তিন পাকিস্তানি সেনার মুণ্ড কেটে এনেছিল ভারতের জওয়ানরা, সেটি ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দাবি, এর আগে কখনও ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ হয়নি।

সংসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য কংগ্রেসের সাংসদ অম্বিকা সোনি তাই ২০০৪ সাল থেকে ক’টা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ভারতীয় সেনা করেছে, তা নিয়ে আগামিকাল চেপে ধরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অ্যাজেন্ডাই বদলে দেওয়ায় এখন তা নিয়ে সোচ্চার হতে শুরু করেছে কংগ্রেস। অম্বিকা সোনি আজ বলেন, ‘‘সাংসদ হিসেবে আমরাও গোপনীয়তার শপথ নিয়েছি। সেনা যদি বিরোধী দলের নেতাদের জানাতে পারে, আমাদের কেন জানাবে না? ইউপিএ আমলেও ক’টি ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ হয়েছে, সেটিও আমাদের জানার আছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী অতীতের হামলা অস্বীকার করে সেনার মনোবল খাটো করার চেষ্টা করছেন।’’ খোদ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর যেভাবে আগরা, লখনউতে সেনা অভিযানের কুর্নিস নিচ্ছেন, সেনার বাহাদুরি নিয়ে কংগ্রেসের জমানার খোট বের করছেন, তা নিয়ে সংসদ শুরু হতেই পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিরোধীরা।

কিন্তু অমিত শাহ ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-কে সামনে রেখেই নরেন্দ্র মোদীর জয়ধ্বনি তুলতে চাইছেন। বাকি দলগুলি উত্তরপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী মুখ ঘোষণা করলেও বিজেপি আপাতত মোদীকে সামনে রেখেই এগোতে চাইছে। গোড়া থেকেই জাত-পাতের ঊর্ধ্বে উঠে গোটা হিন্দুভোটকে একজোট করাই তাঁর লক্ষ্য ছিল। কিন্তু দলিত-সংখ্যালঘু নিগ্রহ বিতর্কে বিজেপির ভিত নড়বড়ে হতে শুরু করে। তার উপর প্রতিমুহূর্তে মোদীর ‘অচ্ছে দিন’ না আসার প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। এই অবস্থায় উন্নয়নের পুরনো তাসটিও এখন ক্লিশে হয়ে গিয়েছে। সে কারণে সেনা অভিযানকে সামনে রেখে জাতীয়তাবাদের হাওয়াকেই এত চড়া মাত্রায় নিয়ে যেতে চাইছেন অমিত শাহ, যাতে বাকি সব বিতর্ক ধামাচাপা পড়ে যায়। শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, লাগোয়া ভোটমুখী উত্তরাখণ্ড ও পাক-সীমান্তে পঞ্জাবেও এর প্রভাব ফেলতে চাইছেন এই তাসে।

আর সেই হিন্দু-ভোট একজোট করার কৌশলে ভর করেই দশমীতে লখনউ গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঠারে ঠারে সন্ত্রাস মোকাবিলার কথা বলে বক্তব্যের শুরু ও শেষে বারবার ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান তুলেছেন। যাতে জাতীয়তাবাদের হাওয়ায় নরম হিন্দুত্বের সুড়সুড়ি দেওয়া যায়। কিন্তু মোদীর মুখে এত দিন পর ‘জয় শ্রীম রাম’ ধ্বনি শুনেও বিরোধীরা বিরোধিতার আসরে নেমে গিয়েছেন। যা শুনে বিজেপির এক শীর্ষ নেতার সরস মন্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর মুখে কী ‘জয় রাবণ’ শুনতে চাইছিলেন তাঁরা?”

আরও পড়ুন:ভোটের দায়েই বাহাদুরি জাহিরে পর্রীকর

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Surgical Strike BJP Amit Shah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE