প্রতীকী ছবি।
চোখ কপালে উঠে গিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের। মুম্বইয়ের বান্দ্রা এলাকার বাসিন্দা এক সাধারণ নাগরিক নিজের অঘোষিত আয়ের হিসাব প্রকাশ করার পর প্রবল চাঞ্চল্য ছড়ায় আয়কর বিভাগে। আবদুর রজ্জাক মহম্মদ সৈয়দ নামে বান্দ্রার জনৈক এক বাসিন্দার সম্পদের পরিমাণ ২ লক্ষ কোটি টাকা! মুকেশ অম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মোট মূল্য যেখানে দেড় লক্ষ কোটি টাকার সামান্য বেশি, সেখানে এক জন সাধারণ নাগরিক ২ লক্ষ কোটি টাকার মালিক হতে পারেন কী করে? এই প্রশ্ন তুলে অঘোষিত আয়ের হিসেব প্রকাশ প্রকল্পে আবদুর রজ্জাক মহম্মদ সৈয়দের ঘোষণা বাতিল করে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রক। শুধু তাই নয়, এত টাকা ঘোষণাকারীদের কাছে থাকতে পারে না বলে মনে করছে আয়কর দফতর। এই ভুয়ো ঘোষণাপত্র দাখিল করার পিছনে কী উদ্দেশ্য রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে আয়কর দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।
২০১৬-১৭ অর্থবর্ষের বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে একটি বিশেষ প্রকল্প ঘোষণা করা হয়, যাতে অঘোষিত আয়ের হিসেব প্রকাশ করা যাবে এবং কর তথা জরিমানা বাবদ সেই সম্পদের ৪৫ শতাংশ সরকারকে দিয়ে বাকি অংশকে বৈধ করে নেওয়া যাবে। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটি চালু ছিল। তার মধ্যে মোট ৭১ হাজার ৭২৬ জন এই প্রকল্পের আওতায় নিজেদের অঘোষিত সম্পদ বা উপার্জনের হিসাব আয়কর দফতরকে জানিয়ে দেন। এঁদের মধ্যে দুই ব্যক্তির ঘোষণাপত্র সরকার মানছে না। প্রথম জনই হলেন মুম্বইয়ের বান্দ্রা এলাকার বাসিন্দা আবদুর রজ্জাক মহম্মদ সৈয়দ। তিনি ২ লক্ষ কোটির টাকার সম্পদের হিসাব দিয়েছেন। দ্বিতীয় জন গুজরাতের আহমেদাবাদের মহেশকুমার শাহ। তিনি ১৩ হাজার ৮৬০ কোটি টাকার অঘোষিত সম্পদের হিসাব প্রকাশ করেছেন। আয়কর বিভাগ আবদুর রজ্জাক মহম্মদ সৈয়দ এবং মহেশকুমার শাহের ঘোষণাপত্র বাতিল করে দিয়েছে। তাঁরা যে অঙ্কের অঘোষিত সম্পদের হিসাব দিয়েছেন, সেই অঙ্ক ঘোষিত কালো টাকার অঙ্কের সঙ্গে যোগ করাও হয়নি। ৭১ হাজারের বেশি ঘোষণাকারীর ঘোষিত মোট অঘোষিত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। সেখানে শুধুমাত্র মুম্বই ও আহমেদাবাদের ওই দুই ব্যক্তির ঘোষিত কালো টাকার পরিমাণই ২ লক্ষ ১৩ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। প্রাথমিক তদন্তের পর আয়কর কর্তারা মনে করছেন, ওই দুই ব্যক্তি ভুয়ো ঘোষণাপত্র দিয়েছেন।
আবদুর রজ্জাক যদি ২ লক্ষ কোটি টাকার মালিক হয়ে থাকেন, তা হলে তিনিই ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি, মুকেশ অম্বানি নন। কেন্দ্রীয় সরকার নোট বাতিল করার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাঙ্কে যে পরিমাণ টাকা জমা পড়েছে, তার পরিমাণ ৮ লক্ষ কোটি টাকার আশেপাশে। সেখানে বান্দ্রার আবদুর রজ্জাকের পরিবারের হাতেই শুধু ২ লক্ষ কোটি! অনামী, অখ্যাত এক ব্যক্তির কাছে এই পরিমাণ সম্পদ থাকা অস্বাভাবিক। সেই কারণেই আবদুর রজ্জাক মহম্মদ সৈয়দের ঘোষণাপত্র নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। আহমেদাবাদের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী মহেশকুমার শাহের ঘোষণাপত্রটি নিয়েও তদন্ত শুরু হয়। তদন্তের পর আয়কর বিভাগ জানিয়েছে, এই দুই ব্যক্তিই সন্দেহজনক প্রকৃতির। ভুয়ো ঘোষণাপত্র দেওয়ার পিছনে তাঁদের অসদুদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কী উদ্দেশ্যে এই ঘোষণাপত্রদু’টি জমা দেওয়া হয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মানুষের থেকে টাকা তুলে উধাও আর্থিক সংস্থা সবচেয়ে বেশি গুজরাতে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy