সেই কোলাজ। সঙ্ঘের সভায় নিতিন গডকড়ী, পর্দায় শ্যারন স্টোন।
বছর চারেক আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় হুহু করে ছড়িয়ে পড়েছিল ছবির কোলাজটা। পাশাপাশি দু’টো ছবি। যার একটা ‘বেসিক ইনস্টিংক্ট’ ছবিতে লাস্যময়ী শ্যারন স্টোনের। মোম-মসৃণ পা দু’টো একটা আর একটার ওপর তুলে সিগারেট ধরাচ্ছেন শ্যারন। পাশের ছবিটা নিতিন গড়কড়ীর। আরএসএসের এক সভায় খাকি হাফপ্যান্ট, সাদা শার্ট আর কালো টুপি পরে সোফায় বসে আছেন বিপুলদেহ বিজেপি নেতা। আর বসার ভঙ্গিমায় শ্যারনের সঙ্গে অদ্ভুত মিল! ক’দিন তুমুল ঠাট্টা-ফাজলামো চলেছিল নানা আড্ডায়।
ফের উঠছে ছবিটার কথা। কেউ কেউ বলছেন, রাজস্থানের নাগৌরে সদ্য শেষ হওয়া রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রতিনিধি সভার ‘যুগান্তকারী’ সিদ্ধান্তটা বছর চারেক আগে নেওয়া হলে হয়তো ওই বিড়ম্বনার থেকে বেঁচে যেতেন বর্তমান জাহাজমন্ত্রী।
কারণ, আর হাফ নয়— এ বার থেকে ফুলপ্যান্ট!
তিন দিনের প্রতিনিধি সভা শেষে আরএসএসের নেতা সুরেশ (ভাইয়াজি) জোশী আজ সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষণা করলেন, তাঁদের ‘ইউনিফর্ম’ অবশেষে পাল্টাচ্ছে। খাকি ঢোলা হাফপ্যান্টের বদলে আসছে বাদামি রঙের ফুলপ্যান্ট! ভাইয়াজি সাফ বলেছেন, ‘‘সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতেই এই পরিবর্তন।’’
সঙ্ঘ নেতাদের দাবি, গত এক বছরে ১ লক্ষ ৩৫ হাজারেরও বেশি যুবক তাঁদের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। শাখার সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু তবুও যুব সমাজ যে হাফপ্যান্ট থেকে হাঁফ ছাড়তে চাইছে, বেশ কয়েক বছর ধরেই তা টের পাচ্ছিলেন নেতারা। একান্তে এক জন মেনেও নিলেন, ‘‘একবিংশ শতাব্দীতে ঢোলা হাফপ্যান্ট আর নতুন প্রজন্মকে টানছে না।’’ সঙ্ঘের অন্দরে এ নিয়ে একটা সমান্তরাল আলোচনা চলছিলই। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় নরেন্দ্র মোদীও হাফপ্যান্টের বদলে ফুলপ্যান্টের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত গত বছর রাঁচিতে আরএসএসের প্রতিনিধি সভায় মোটামুটি সিদ্ধান্ত হয়ে যায়, হাফপ্যান্ট আর নয়।
এর পরেও একটা ঝক্কি ছিল রং নিয়ে। কারও পছন্দ ছিল নীল, কারও ধূসর। কেউ আবার চেয়েছিলেন, খাকিই থাক। ভাইয়াজির কথায়, ‘‘যে রংই আমরা বাছতাম, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠত। যদি সাদা বা কালো রং বাছা হতো, তাতেও প্রশ্ন উঠত। গেরুয়া হলে তো আরও। বাদামি রংটা দেখতে ভাল। সহজে পাওয়াও যায়, তাই শেষ পর্যন্ত এই রং বাছা হয়েছে। আমাদের এ সব নিয়ে কোনও জড়তা নেই!’’
সঙ্ঘের কোনও কোনও সমালোচক বলে থাকেন, ইতালির মুসোলিনি আর জার্মানির হিটলারের অনুপ্রেরণাতেই এক সময়ে খাকি শার্ট আর হাফপ্যান্টের প্রচলন করেছিল আরএসএস। যদিও ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ১৯২০ সালে নাগপুরে কংগ্রেসের অধিবেশনে খাকি শার্ট, খাকি শর্টস, কালো টুপি, লম্বা মোজা আর বুটের প্রচলন করেছিলেন কেশব বলিরাম হেগড়েওয়াড়। অনেকে বলেন, টুপিটি নাকি গাঁধী টুপি থেকে অনুপ্রাণিত। পরে কংগ্রেসে মোহভঙ্গ হওয়ায় ১৯২৫ সালে আরএসএস প্রতিষ্ঠা করেন হেগড়েওয়াড়। কিন্তু পোশাকটি অপরিবর্তিত থেকে যায়। শুধু শার্টের রং পাল্টে খাকি থেকে সাদা হয়। বদলায় চামড়ার বুট, বেল্ট। কিন্তু নব্বই বছরেও হাফপ্যান্ট কখনও ফুল হয়নি।
সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ নেতা রাকেশ সিন্হা জানালেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ভাবনা থেকেই স্বয়ংসেবকদের পোশাকের রং খাকি রাখা হয়েছিল। বিভিন্ন শারীরিক কসরতের জন্য হাফপ্যান্টই তখন উপযুক্ত বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম যেমন হাফপ্যান্টে স্বচ্ছন্দ নয়, তেমনই শীতের সময়ে বালক ও প্রবীণ সদস্যদের এই পোশাকে কষ্ট হয়। তা ছাড়া পুলিশও খাকি ইউনিফর্ম পরে। সব দিক ভেবেই তাই বদল আসছে প্যান্টে। তবে ফুলপ্যান্টও কিন্তু হবে এখনকার হাফপ্যান্টের মতোই ঢলঢলে, যাতে ব্যায়াম করতে সুবিধে হয়!
রাকেশ বলছিলেন, ‘‘রং বদলালেও কিন্তু আমাদের বিচারধারা বদলায়নি।’’ ঘটনাচক্রে, ঠিক এই কথা বলেই সঙ্ঘকে বিঁধেছেন কংগ্রেস নেতা প্রদীপ জৈন। বলেছেন, ‘‘যতই ‘ইমেজ মেকওভার’ হোক, ওঁদের দলিত ও মহিলা-বিরোধী মানসিকতা যাবে কোথায়?’’ গত কালই কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ আরএসএসকে জঙ্গি-গোষ্ঠী আইএস-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তার পরেই দাবি উঠেছে, ক্ষমা চাইতে হবে গুলাম নবিকে!
তাতে অবশ্য চাপা পড়ছে না মোক্ষম আপ্তবাক্য— যে কোনও পরিবর্তনই আদপে বিষম দায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy