Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সাদিক মিয়াঁর মুখে গ্রাম শোনে রামকথা

ঠিকানা, জহানাবাদের কাঁকো থানার চাতর গ্রাম, হনুমানজি মন্দির। সেখানে পুজোপাঠ করেন সাদিক মিয়াঁ। জানালেন, ১৯৪৯ সাল থেকে নিয়মিত মন্দিরে পুজো করছেন। হিন্দু-মুসলিম কেউই কখনও বাধা দেননি।

শান্তির বাণী: সাদিক মিয়াঁ। চাতরের মন্দিরে। ছবি: রণজিৎ দে

শান্তির বাণী: সাদিক মিয়াঁ। চাতরের মন্দিরে। ছবি: রণজিৎ দে

দিবাকর রায়
চাতর (জহানাবাদ) শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৮ ০৩:২৬
Share: Save:

দেশ ভাগের সময়ে জহানাবাদের দাঙ্গা কেড়েছে মা ও বড়দাদাকে। তবু পাল্টা হিংসার কথা বলেন না কখনও। বরং দুই ধর্মের মানুষের বিভেদ মোছার কথাই প্রচার করেন তিনি। দেখেছেন মোহনদাস গাঁধী ও জওহরলাল নেহরুকে। শুনেছেন তাঁদের বক্তৃতা। ধর্মের নামে যাঁরা ঘৃণা ছড়ান, তাঁদেরও ক্ষমা করার পথে আনতে চান তিনি। বিহারের জহানাবাদ জেলার সাদিক মিয়াঁ। অনেকেই বলেন সাদিক বাবা।

ঠিকানা, জহানাবাদের কাঁকো থানার চাতর গ্রাম, হনুমানজি মন্দির। সেখানে পুজোপাঠ করেন সাদিক মিয়াঁ। জানালেন, ১৯৪৯ সাল থেকে নিয়মিত মন্দিরে পুজো করছেন। হিন্দু-মুসলিম কেউই কখনও বাধা দেননি। উল্টে সহযোগিতাই করেছেন। মন দিয়ে শুনেছেন তাঁর কথা।

চাতরের রমাকান্ত শর্মা, কৃষ্ণ কুমারেরা বলেন, ‘‘সাদিক বাবা আসার পর থেকে সকালগুলো আরও সুন্দর হয়েছে। সকলকে শান্তিতে থাকার কথা বলে তিনি আমাদের আপন করে নিয়েছেন।’’ গ্রামের আব্দুল শেখের কথায়, ‘‘উনি সন্ত মানুষ। সকলেই তাঁকে ভালবাসে। তাঁর কথা শোনে।’’

আরও পড়ুন: ‘হেরোদের মতো কথা’ বলছেন রাহুল: পাল্টা কটাক্ষ সীতারামনের

বাড়ি ছিল গয়া জেলার খিজরসরাইয়ে। মেধাবী ছাত্র ছিলেন গয়া কলেজের। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় ব্রিটিশরাজ বৃত্তি বন্ধ করে দেয়। ছোটবেলায় স্কুল পালিয়ে এক বার অযোধ্যা গিয়েছিলেন। সেই থেকেই রাম-সীতার প্রতি অনুরাগ। তিনি বলেন, ‘‘তৃতীয় শ্রেণিতে থাকার সময়ে গ্রামের সুরজজি মহারাজের কাছে পড়াশোনা করতে যেতাম। তখনই মহারাজের মুখে শুনে মনে গেঁথে যায় রাম-সীতার কাহিনি। কলেজে পড়ার সময়ে চলে যাই অরবল জেলার সোহসা গ্রামে। সেখানে রামজানকী মন্দিরের পুজারি শ্যামসুন্দর দাসের সঙ্গে পুজোর কাজে সাহায্য করা শুরু করি।’’ ভক্তরা পরে সোহসা থেকে রামজানকী মন্দিরের শাখা নিয়ে আসেন চাতরে হনুমান মন্দিরে। এখানে ধর্মচর্চা ও পুজোপাঠের পাশাপাশি রামায়ণ ও গীতা পাঠ করে শোনান সাদিক। গ্রামবাসীদের দিন শুরু হয় তাঁর গলায় তুলসীদাস ও কবীরের ভজন শুনে।

ব্রাহ্মণ, ভূমিহার, মুসহর মিলিয়ে প্রায় দেড়শো ঘরের বাস। গ্রামের সকলেই ভালবাসেন তাঁকে। কাশী-অযোধ্যায় তীর্থভ্রমণ সেরে এসেছেন। হিন্দু ধর্মগ্রন্থের বড়সড় ভাণ্ডার রয়েছে তাঁর কাছে। শুধু সংস্কৃত নয়, উর্দু, আরবি, বাংলা, গুজরাতি, ইংরেজি ও হিন্দিতে অনর্গল বলতে ও লিখতে পারেন। বয়স প্রায় ৮৫। পড়াশোনা করতে আজকাল একটু বেশি সময় লাগলেও নিয়মিত চিঠি লেখেন। বার্তা পাঠান মিলেমিশে থাকার। বলেন ক্ষমা করার কথা। তাঁর সহজ-সরল বিশ্বাস, ‘‘রাম-রহিম সব এক। আস্থার উপরে নির্ভর করেই ধর্মীয় ভাবনা তৈরি হয়। তাঁকে সম্মান করা উচিত সকলের। ধর্ম চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sadiq Mian Chatar Village Bihar Priest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE