Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
National News

জোটের জোরেই মেরুকরণ ফিকে, বিপদে বিজেপি

উপনির্বাচনে জোরদার ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। গোবলয়ের প্রাণকেন্দ্রে গেরুয়া রথ এ ভাবে ধাক্কা খাবে, তা আঁচ করতে পারেননি বিজেপি নেতৃত্ব। কারণ বিশ্লেষণ করলে কিন্তু আভাস পাওয়া যাচ্ছে, ভবিষ্যতেও অপেক্ষায় রয়েছে এই রকম ধাক্কা। বিজেপি-কে অন্য পথ খুঁজতেই হবে।

উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার ইঙ্গিত দিয়ে গেল, বিরোধীরা এক হলে চিন্তা বাড়তে পারে নরেন্দ্র মোদীর। গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।

উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার ইঙ্গিত দিয়ে গেল, বিরোধীরা এক হলে চিন্তা বাড়তে পারে নরেন্দ্র মোদীর। গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৮ ১৫:৫৫
Share: Save:

হিন্দুত্বের রেশ কাটলেই শুকনো লাগছে পদ্মফুলকে। ২০১৪-য় কংগ্রেস বিরোধী জিগির ছিল। এখন আর সে সুযোগ নেই। তাই মেরুকরণ যতক্ষণ তীব্র, ততক্ষণই অপ্রতিরোধ্য বিজেপি। নজর যে-ই ঘুরছে অন্যান্য ইস্যুতে, সংখ্যাগুরু বনাম সংখ্যালঘুর লড়াই সরে গিয়ে যখনই মাথা তুলছে মণ্ডল বনাম কমণ্ডল, তখনই জোর ধাক্কা খাচ্ছে গেরুয়া রথ। দেখিয়ে দিল উত্তরপ্রদেশ-বিহারের উপনির্বাচন। অখিলেশ-মায়াবতীর অসামান্য রণকৌশল শিক্ষা দিয়ে গেল রাহুল গাঁধীকেও।

২০১৪-র নির্বাচনে যেমন ব্যবধানে জয় হয়েছিল গোরক্ষপুর এবং ফুলপুর লোকসভা কেন্দ্রে, ২০১৮-র উপনির্বাচনে তার চেয়েও বেশি ব্যবধানে জিতবে বিজেপি। ভোটগ্রহণ চলাকালীন দাবি করেছিলেন উত্তরপ্রদেশের দোর্দণ্ডপ্রতাপ মুখ্যমন্ত্রী তথা কট্টর হিন্দুত্বের পোস্টারবয় যোগী আদিত্যনাথ। ভোটের ফল বলছে, মসনদে বসে থাকা যোগী আঁচ করতেই পারেননি, পাটিগণিত কতখানি বদলে গিয়েছে মাটিতে।

সপা এবং বসপা আলাদা ভাবে লড়েছিল ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে। ফুলপুর এবং গোরক্ষপুরে আলাদা আলাদা লড়ে যত ভোট সপা ও বসপা পেয়েছিল, তা যোগ করলেও কিন্তু জয় আসত না। ২০১৪-র হিসেব বলছে, ফুলপুরে সপা-বসপার সম্মিলিত ভোটের পরিমাণ ছিল ৩৭.৪ শতাংশ। সেখানে ২০১৮-র উপনির্বাচনে জোটবদ্ধ সপা-বসপার প্রার্থী পেয়েছেন ৪৬.৯ শতাংশ ভোট। আর গোরক্ষপুরে ২০১৪-য় সপা-বসপার মোট ভোট ছিল ৩৮.৮ শতাংশ। ২০১৮-য় তা পৌঁছে গিয়েছে ৪৮.৯ শতাংশে। অর্থাৎ ফুলপুরে বেড়েছে ৯.৫ শতাংশ। গোরক্ষপুরে বেড়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি।

বিজেপি-র ভোট বাড়া-কমার ছবিটা কেমন? ২০১৪ সালে ফুলপুরে বিজেপি প্রার্থী কেশবপ্রসাদ মৌর্য পেয়েছিলেন প্রদত্ত ভোটের ৫২.৪ শতাংশ। ২০১৮ সালের উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী পেলেন ৩৮.৮ শতাংশ। গোরক্ষপুরে ২০১৪ সালে যোগী আদিত্যনাথ পেয়েছিলেন প্রদত্ত ভোটের ৫১.৮ শতাংশ। আর এ বার বিজেপি প্রার্থী পেলেন ৪৬.৫ শতাংশ। অর্থাৎ ফুলপুরে ভোট কমল সাড়ে ১৩ শতাংশেরও বেশি। গোরক্ষপুরে কমল সাড়ে ৫ শতাংশের কাছাকাছি।

কেন এই অবস্থা হল বিজেপির? এমনটা কি প্রত্যাশিত ছিল? যে কোনও উপনির্বাচনেই শাসক দল অ্যাডভান্টেজে থাকে। বিজেপি উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের শাসক দল তো বটেই, কেন্দ্রেও শাসক দল। অতএব নিজেদের আসন ধরে রাখতে পারা মোটেই শক্ত ছিল না গেরুয়া শিবিরের পক্ষে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব এবং মায়াবতী ‘মাস্টারস্ট্রোক’ দিলেন। চমকে দিল গোরক্ষপুর-ফুলপুর।

সপা এবং বসপা বরাবরই উত্তরপ্রদেশে অত্যন্ত শক্তিশালী দল। বেশ কয়েক দশক ধরে দুই বৃহৎ জাতীয় দল কংগ্রেস ও বিজেপি উত্তরপ্রদেশে সপা-বসপার থেকে অনেকখানি পিছিয়ে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে লড়াই ছিল চতুর্মুখী। কংগ্রেস, বিজেপি, সপা, বসপা আলাদা আলাদা লড়েছিল। উত্তরপ্রদেশের ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৭৩টি জিতে নিয়েছিল বিজেপি ও তার সঙ্গী আপনা দল। সপা-র বিজয় তালিকা সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল পরিবারের মধ্যে। মুলায়ম সিংহ যাদব জিতেছিলেন আজমগঢ় এবং মৈনপুরী থেকে। আর তাঁর পুত্রবধু তথা উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের স্ত্রী ডিম্পল জিতেছিলেন কনৌজ থেকে। কংগ্রেসের দশাও সে রকমই হয়। গাঁধী পরিবারের সুপ্রাচীন গ়ড় রায়বরেলী এবং অমেঠি থেকে সনিয়া গাঁধী এবং রাহুল গাঁধী জয়ী হন। কিন্তু অন্যান্য আসনে নাস্তানাবুদ হয়ে যান কংগ্রেস প্রার্থীরা। আর মায়াবতীর বসপা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

২০১৪ সালের এই আসনসংখ্যার দিকে তাকালে কিন্তু মনে হতে পারে, বিজেপি-র বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোর কেউ নেই উত্তরপ্রদেশে। যদি কিছুটা প্রতিরোধ সম্ভব হয়, তা হলে তা সম্ভব ৩টি ও ২টি আসনে জয়ী হওয়া সপা ও কংগ্রেসের দ্বারাই। কিন্তু বাস্তবটা তেমন নয়। শতাংশের বিচারে বিজেপির পিছনেই ছিল সপা ও বসপা, কংগ্রেস ছিল অনেক পিছনে। সেই বাস্তবতার মাথায় রেখে যদি ২০১৭-র বিধানসভা ভোটের রণকৌশল স্থির করত বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলো, তা হলে উত্তরপ্রদেশের ফল অন্য রকম হতেও পারত বলে বিশেষজ্ঞদের মত। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বিজেপির বড়সড় জয়ের পর মুখ্যমন্ত্রী হন যোগী আদিত্যনাথ।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শিবাজী প্রতিম বসুর কথায়, ‘‘২০১৪ সালের ভোটটা ছিল কংগ্রেস তথা ইউপিএ বিরোধিতার ভোট। আর তার পরে ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার নির্বাচন ছিল মেরুকরণের ভোট।’’ অধ্যাপক বসুর ব্যাখ্যা, ‘‘এক দিকে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের তাস সফল ভাবে খেলেছিল বিজেপি। অন্য দিকে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ব্যর্থ হয়েছিল বিরোধীরা।’’

সপা এবং বসপার ভোটব্যাঙ্ক পরস্পরের চেয়ে আলাদা ঠিকই। কিন্তু অভিন্ন প্রতিপক্ষকে হারানোর প্রশ্নে যে সপা এবং বসপার ভোটাররা এক হতে পারেন, তা উত্তরপ্রদেশে আগেও প্রমাণিত হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে কাঁসিরামের নেতৃত্বাধীন বসপা এবং মুলায়মের নেতৃত্বাধীন সপা এক হয়ে লড়েছে এবং বাবরি কাণ্ড পরবর্তী পরিস্থিতিতেও বিজেপি-কে রুখে দিয়েছে। শিবাজীবাবুর কথায়, ‘‘২০১৭ সালেও যদি একই পথ নিতে পারতেন অখিলেশ-মায়াবতী, তা হলে বিজেপি জিততে পারত না। কিন্তু অখিলেশ জোট গড়লেন রাহুল গাঁধীর সঙ্গে। ওই জোট কিছুতেই সফল হতে পারে না। উত্তরপ্রদেশে জাতপাতের সমীকরণটা যে রকম, তাতে কংগ্রেস আর সপার ভোটব্যাঙ্ক কিছুতেই এক জায়গায় আসতে পারে না। ফলে সপার অনেক ভোটারই কংগ্রেসকে ভোট দেননি। আর কংগ্রেসের সঙ্গে থাকা ব্রাহ্মণ বা অন্যান্য তথাকথিত উচ্চবর্ণের ভোটাররা সপা-কে ভোট দেননি, ঢলে পড়েছেন বিজেপির দিকে। লাভ হয়েছে বিজেপির।’’

আরও পড়ুন: মানুষ ভোলেননি সন্তান হারানোর যন্ত্রণা, প্রতিফলন যোগী-গড়ে

বসপা ২০১৭ সালে কারও সঙ্গে জোট করেনি। কিন্তু মায়াবতী কি তাতে নিজের দলিত গণভিত্তি অটুট রাখতে পেরেছিলেন? হিসেব বলছে পারেননি। সপা এবং কংগ্রেসের মতো বসপার ভোটও অনেকটাই চলে গিয়েছিল বিজেপি-র দিকে। এর কারণ কী?

অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘মেরুকরণেই অন্য সব হিসেব গুলিয়ে দিয়েছিল বিজেপি।’’ কী ভাবে? উদয়নবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘উত্তরপ্রদেশে যাদব, দলিত, ওবিসি এবং মুসলিম ভোটব্যাঙ্কই সবচেয়ে বড় নির্ণায়ক শক্তিতে পরিণত হয় ফি বছর। ব্রাহ্মণ এবং অন্যান্য বর্ণহিন্দু সম্প্রদায় প্রভাবশালী। কিন্তু সংখ্যায় তাঁরা কম। জাতপাতের সমীকরণ অনুযায়ী যাদব এবং মুসলিমরা সপার সঙ্গে। দলিত এবং অন্য অনগ্রসররা বসপার পক্ষে। তথাকথিত বর্ণহিন্দুরা মূলত বিজেপি ও কংগ্রেসের দিকে। ফলে সাধারণ অবস্থায় কংগ্রেস-বিজেপি-কে একটু ব্যাকফুটেই থাকতে হয় সে রাজ্যে। কিন্তু মেরুকরণের হাওয়া যখন বইতে শুরু করে, তখন তো ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-যাদব-দলিত-ওবিসি সবাই এক। সবাই তখন হিন্দু। তাই ২০১৭-র নির্বাচনে সপা, বসপা, কংগ্রেস, আরএলডি— সবার ঘরেই থাবা বসিয়ে দিতে পেরেছিল বিজেপি।’’

বেশ কয়েক বছর পরে উত্তরপ্রদেশে সপা-বসপা শিবিরে এই রকম উচ্ছ্বাসের অবকাশ তৈরি হল। অখিলেশ এবং মায়াবতী তাই ২০১৯ পর্যন্ত অন্তত এই জোট বহাল রাখতেই চাইবেন। ছবি: এএফপি।

ভোট মিটেছে, মেরুকরণের প্রয়োজনীয়তাও ফুরিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই আবার মাথাচাড়া দিয়েছে জাতপাতের বিভাজন। নিজেদের হিন্দু পরিচয়ের কথা মাথায় রেখে পদ্মফুলে ছাপ দিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁরা ফের ফিরে গিয়েছেন জাতপাতের সমীকরণে। যোগী আদিত্যনাথের রাজত্বে কী পেল দলিত, কী পেল ওবিসি, ব্রাহ্মণেরই বা কী লাভ হল? সব সম্প্রদায় নিজের নিজের ভাগটা বুঝে নিতে উদগ্রীব এ বার। ফলে গেরুয়া রঙের দাপট ফিকে হওয়ারই ছিল।

গেরুয়া রং যে ফিকে হতে শুরু করেছে, এই মুহূর্তে হাত মেলালে যে বিজেপি-কে ধাক্কা দেওয়া সম্ভব, সে কথা সময় মতো বুঝতে পারাটাই অখিলেশ এবং মায়াবতীর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১৭-র নির্বাচনে বিজেপি যে রকম মরিয়া ভঙ্গিতে মেরুকরণের চেষ্টা শুরু করেছিল, এ বারের উপনির্বাচনে যে তেমনটা করবে না, তা সপা-বসপা নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। সহারানপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় তথাকথিত উচ্চবর্ণের লোকজনের সঙ্গে দলিতদের একাধিক সংঘর্ষের জেরে হিন্দু সমাজে জাতপাতের বিভাজন যে ফের তীব্র হচ্ছে, তাও অখিলেশ-মায়াবতীরা আঁচ করে নিয়েছিলেন। তারই ফলশ্রুতি ‘বুয়া-বাবুয়া’ সমঝোতা এবং নিজের গড়ে বিজেপির ভরাডুবি।

আরও পড়ুন: হারের দায় কার, দু’পক্ষই কাঠগড়ায়

এ কথা ঠিক যে, ২০১৪ সালে যতটা ভোট পড়েছিল গোরক্ষপুর-ফুলপুরে, এ বার তার চেয়ে অনেকটা কম ভোট পড়েছে। কারা ভোট দিতে যাননি, তা বিশ্লেষণ করা জরুরি। জয়ের বিষয়ে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে অথবা কোনও কারণে বীতশ্রদ্ধ হয়ে মূলত বিজেপি-র ভোটাররাই কি বুথমুখী হলেন না এ বার? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা অবশ্যই দরকার। কিন্তু অখিলেশ-মায়াবতী যে অত্যন্ত কুশলী চাল দিয়েছিলেন, তা অস্বীকার করা কঠিন।

গোবলয়ে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা কিন্তু বিহারেও প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৫-র বিধানসভা নির্বাচনে জেডি(ইউ)-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়েছিল আরজেডি। সেই জেডি(ইউ) এখন আর সঙ্গে নেই। তা সত্ত্বেও নিজেদের অররিয়া লোকসভা এবং জহনাবাদ বিধানসভায় নিজেদের দাপট কায়েম রাখল আরজেডি। আর আগের বার একলা লড়া বিজেপি এ বার জেডি(ইউ)-কে সঙ্গে নিয়েও নিজেদের হাতে থাকা ভভুয়া আসনটুকু ধরে রাখা ছাড়া আর কিছুই করতে পারল না। সেই একই তত্ত্ব— ভোটব্যাঙ্ক সমভাবাপন্ন নয়, তাই বিজেপি-র ভোট জেডি(ইউ)-তে বা জেডি(ইউ)-এর ভোট বিজেপিতে পড়া খুব কঠিন।

অতএব উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের উপনির্বাচন খুব বড় শিক্ষা দিয়ে গেল বিজেপি-কে। হিন্দু সমাজে জাতপাতের সমীকরণ মাথাচাড়া দিলেই বিপদ বাড়বে গেরুয়া শিবিরের, আরও একবার বুঝে গেলেন, মোদী-শাহ-যোগীরা। উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এই বিপদ যে রয়েছে, তা বিজেপি জানত। তাই আরএসএস-কে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল স্তরে জাতপাতের ভাবনা কিছুটা মুছে হিন্দু অস্মিতা জাগানোর চেষ্টা হয়েছিল। সে চেষ্টা যে সফল হয়নি, প্রমাণ হয়েই গেল।’’

মেরুকরণে ভর করে সর্বক্ষণ রাজনীতি করা কঠিন। কিন্তু জাতপাতের সমীকরণকে ফিকে করে দেওয়ার জন্য মেরুকরণ ছাড়া অন্য কোনও শক্তিশালী অস্ত্রের সুলুক-সন্ধান বিজেপি-র কাছে আপাতত নেই। উপনির্বাচন তাই বুঝিয়ে দিল, গোবলয়ে টিকে থাকতে গেলে অন্য কোনও পথ খুঁজে বার করতেই হবে বিজেপি-কে।

এই উপনির্বাচন কিন্তু খুব বড় শিক্ষা কংগ্রেসের জন্যও। রাহুল গাঁধী উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ-মায়াবতীদের পাশে দাঁড়াননি। তাতে অখিলেশ-মায়াবতীদের জয় যে আটকায়নি, সে তো দেখাই যাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে দুই আসনেই কংগ্রেসের জমানাত জব্দ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ কংগ্রেসকে এই লড়াইতে প্রাসঙ্গিক বলেই মনে করেননি ভোটাররা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কংগ্রেস সভাপতিকে বুঝতে হবে, বিজেপি-র বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই চালানোই টিকে থাকার একমাত্র পথ কংগ্রেসের সামনে। এবং সেই লড়াই যে একা একা লড়া যাবে না, যেখানে যে অ-বিজেপি শক্তি সবচেয়ে বলশালী, সেখানে যে তার পাশেই দাঁড়াতে হবে, এ কথা রাহুলকে বুঝতেই হবে

গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে নির্বাচনী সাফল্যের চেয়ে বড় সাফল্য আর কিছুই নেই। এখনও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য নির্বাচনী সাফল্য পাননি বলেই রাজীব তনয় রাহুল এবং করুণানিধির পুত্র স্ট্যালিন নিজেদেরকে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে পারলে যে বিজেপি-র বিরুদ্ধে সফল হওয়া যায়, গুজরাতে রাহুল তার প্রমাণ পেয়েছেন। তার পরেও উত্তরপ্রদেশে তিনি অ-বিজেপি মহাজোটে সামিল হলেন না। আর ঠিক উল্টো পথে হেঁটে অখিলেশ যাদব সময়ের দাবি মেনে নিলেন, নিজের চরম প্রতিপক্ষ মায়াবতীর সঙ্গে হাত মেলালেন। নির্বাচনী সাফল্যে সওয়ার হয়ে অখিলেশ প্রমাণ করে দিলেন, নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে আর লাভ নেই, সপা-র শীর্ষ পদে মুলায়মের সুযোগ্য উত্তরসূরি তিনিই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE