বেতন যতটা বেড়েছে, তার জন্য সঙ্কট। বেতন ততটা বাড়েনি, তার জন্যও সঙ্কট!
প্রথম সঙ্কটের কারণ, সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে বাড়তি যে টাকা লাগবে, তা কোথা থেকে আসবে বুঝতে পারছে না রেল। দ্বারস্থ হতে হচ্ছে অর্থ মন্ত্রকের। কিন্তু এখনও ইতিবাচক সাড়া আসেনি অরুণ জেটলির মন্ত্রকের কাছ থেকে।
দ্বিতীয় সঙ্কট নিচু তলার কর্মীদের অসন্তোষে। তাঁদের সংগঠনগুলি সাফ জানিয়েছে, সপ্তম বেতন কমিশনে বেতন যা বাড়ছে, তাতে তারা সন্তুষ্ট নয়। এর প্রতিবাদে আগামী ১১ জুলাই তারা ধর্মঘটে যাবে।
দু’মুখো এই চাপে পড়ে রেল মন্ত্রকের কর্তাদের এখন হিমশিম দশা। ষষ্ঠ বেতন কমিশনের মতো এ বারেও টাকার জোগানের প্রশ্নে ফের একপ্রস্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার মুখে রেল ও অর্থ মন্ত্রক। দুই মন্ত্রকের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও এতে ফের প্রকট হয়ে উঠেছে। এরই সঙ্গে গত কাল থেকে রেল-কর্তারা দফায় দফায় বৈঠক চালাচ্ছেন কর্মী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। যাতে কোনও রফা সূত্র বার করা যায়। নিচু তলার কর্মীরা ধর্মঘটে নামলে পুরো রেল ব্যবস্থাই বসে যাওয়ার আশঙ্কা। এই অবস্থায় হাতে মাত্র দিন দশেক সময়।
অথচ, সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে কোনও সমস্যা হবে না, টাকার ব্যবস্থা বাজেটেই রাখা হয়েছে— এমনটাই আশ্বাস দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী জেটলি। বাস্তবে দেখা গেল, বাজেটে বরাদ্দ রয়েছে ৭০ হাজার কোটি টাকা। আর নয়া বেতন কমিশনের কারণে বাড়তি দায় চাপছে মোট ১ লক্ষ ১৪ হাজার কোটি টাকার। ভাতা সংক্রান্ত সুপারিশগুলি অবশ্য এখনই কার্যকর করা হচ্ছে না। ফলে এই মুহূর্তে বাড়তি দায়ের অঙ্কটা নেমে দাঁড়াচ্ছে ৮৪ হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ এখনই বাজেটের বাইরে ১৪ হাজার কোটি টাকা জোগাড় করতে হবে সরকারকে। পরে ভাতা সংক্রান্ত ঘোষণা হলে বাকি ৩০ হাজার কোটি টাকার দায়ভারও চাপবে সরকারের উপরে।
রেলের অবস্থাও তথৈবচ। বিগত কয়েক দশক ধরে এমনিতেই তাদের ঢাকের দায়ে মনসা বিকিয়ে যাওয়ার জোগাড়। এবারে সপ্তম বেতন কমিশনের চাপে মাথায় হাত রেল মন্ত্রকের। ঘাড়ে চাপছে ৩১ হাজার কোটি টাকার বাড়তি দায়। যার মধ্যে বেতন খাতে বাড়বে ১২ হাজার কোটি টাকা ও পেনশন খাতে ৮ হাজার কোটি টাকা। কর্মীদের ভাতা-বাবদ খরচ বাড়বে ১১ হাজার কোটি টাকা।
শেষ পর্যন্ত রেলের জন্য কি হাত উপুড় করবেন জেটলি? রীতিমতো সংশয়ে রেল-কর্তরা। তাঁরা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন, অর্থ মন্ত্রক এগিয়ে না এলে রেলকেই গ্যাঁট থেকে তা মেটাতে হবে। রেল মন্ত্রকের একাংশের মতে, বেতন কমিশনের ধাক্কা সামলাতে গিয়ে ‘অপারেটিং রেশিও (১০০ টাকা আয় করতে যত খরচ হয়)’ ৯৫-এর কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়াবে। রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে মিত্তলও বলছেন, ‘‘অপারেটিং রেশিও এ বছর বাড়বেই। বাজেট লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে যাবে। গত বছর ছিল ৯০-এর কাছাকাছি। এ বার তা ৯২ ছাপিয়ে যাবে।’’
তবে এর মধ্যেও বিভিন্ন খাতে আয় বাড়িয়ে ও খরচ কমিয়ে কোষাগার ভরার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মিত্তল। তাঁর কথায়, ‘‘গতিমান, হামসফরের মতো ট্রেন চালিয়ে আয় বাড়ানো হচ্ছে। বিজ্ঞাপন ও স্টেশনের জমি বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ কিনে ৩ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি সাশ্রয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম কমার ফলেও কিছুটা সাশ্রয় হবে।’’
কিন্তু তাতেও কি বেতনের জন্য বাড়তি টাকার জোগাড় হবে? হিসেব মেলাতে ব্যস্ত রেল মন্ত্রক।
রেলের আর এক বড় চাপ ধর্মঘটের হুমকি। কমিশনের খসড়া রিপোর্ট সামনে আসতেই বিরোধিতার সুর চড়িয়েছিল রেল ইউনিয়নগুলি। প্রায় ৯৫% কর্মী রীতিমতো ভোট দিয়ে জানিয়েছিলেন, ওই সুপারিশ তাঁদের নাপসন্দ। মন্ত্রকের স্নায়ুর চাপ বাড়িয়ে অল ইন্ডিয়া রেলওয়েমেনস ফেডারশনের সাধারণ সম্পাদক শিবগোপাল মিশ্র আজ দাবি করেছেন, ‘‘ধর্মঘটে যাওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা খোলা নেই আমাদের কাছে।’’
রেলের নিচুতলার কর্মীরা যদি সত্যিই ধর্মঘটে যান তা হলে রেল চলবে কী করে, ভেবেই আঁতকে উঠছেন রেল-কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy