চিন্তিত। শুক্রবার মুম্বইয়ের দায়রা আদালতে সলমন খান। ছবি: পিটিআই।
গাড়ি চাপা দিয়ে মানুষ মারার মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যে বলে দাবি করলেন সলমন খান। তেরো বছরের পুরনো এই মামলায় আজই প্রথম আদালতে গিয়ে নিজের বক্তব্য জানিয়েছেন তিনি।
পুলিশের অভিযোগ, ২০০২-এর ২৮ সেপ্টেম্বর ভোররাতে বান্দ্রার এক বেকারির সামনে ফুটপাথে উঠে পড়ে সলমনের গাড়ি। চাকায় পিষে মারা যান এক ফুটপাথবাসী। আহত হন চার জন। পুলিশের দাবি, সে সময় চালকের আসনে ছিলেন সলমনই। দুর্ঘটনার পর গাড়ি ছেড়ে কার্যত পালিয়ে যান তিনি।
শুক্রবার মুম্বইয়ের দায়রা আদালতে সলমন জানান, সে দিন গাড়ি চালাচ্ছিলেন তাঁর চালক অশোক সিংহ। তা হলে এক প্রত্যক্ষদর্শী কী ভাবে তাঁকে চালকের আসনে দেখেন, প্রশ্ন করেন আইনজীবী। অভিনেতার দাবি, ২৮ সেপ্টেম্বর গাড়ির বাঁ দিকের দরজা আটকে যাওয়ায় চালকের আসন পেরিয়ে এসেই নামতে হয়েছিল তাঁকে। যেটুকু সময় ওই আসনে ছিলেন, তার মধ্যে কেউ তাঁকে দেখে থাকতে পারেন বলেও মন্তব্য করেছেন সলমন।
শুক্রবার সকাল এগারোটা। মুম্বইয়ের দায়রা আদালতের বাইরে এসে দাঁড়ায় সলমনের গাড়ি। দেহরক্ষীরা ছাড়াও এ দিন সলমনের সঙ্গে ছিলেন দুই বোন অলভিরা ও অর্পিতা। প্রায় আধ ঘণ্টা বাদে শুরু হয় শুনানি। অভিনেতার বয়ান যাতে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত না হয়, বিচারক ডি ডব্লিউ দেশপাণ্ডের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন সলমনের কৌঁসুলি শ্রীকান্ত শিভাড়ে। সেই আবেদন খারিজ করে দিলেও বিচারক নির্দেশ দেন, অভিনেতার বক্তব্য শেষ হওয়ার আগে তা সম্প্রচার করা যাবে না। অন্য কারও সাক্ষাৎকার নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে এই মামলা সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্তে না আসার কথাও বলেন বিচারক।
শুক্রবার সারা দিনে মোট ৪১৮টি প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল সলমন খানকে। আজ তিনি কোর্টে জানান, সে দিন মোটেই মদ্যপ ছিলেন না। কয়েক জন বন্ধু ও ভাইয়ের সঙ্গে যে পানশালায় গিয়েছিলেন, সেখানে তিনি কয়েক গ্লাস জল খেয়েছিলেন।
আগে সরকার পক্ষের আইনজীবী আদালতে জানিয়েছিলেন, অভিনেতার রক্তে অ্যালকোহলের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেশি। এ দিন সেই অভিযোগ উড়িয়ে সলমনের দাবি, যিনি রক্তের নমুনা পরীক্ষা করেছিলেন সেই বালশঙ্কর এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞই নন। এমনকী যে ভাবে পরীক্ষা হয়েছিল, তার পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আদালতকে জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনার পর প্রায় পালিয়ে যান সলমন। শুক্রবার সেই অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, পুলিশে খবর দেওয়ার কথা তিনিই বলেছিলেন চালককে। ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে দুর্ঘটনাস্থলে মিনিট পনেরো ছিলেন তিনি। তার পরও কীভাবে পালিয়ে যাওয়ার প্রশ্ন ওঠে!
প্রায় তেরো বছর ধরে চলা এই মামলার পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন বহু মানুষ। কখনো টাকা দিয়ে সাক্ষীদের বয়ান বদলের অভিযোগ উঠেছে। কখনও আবার নামকরা অভিযুক্ত আদালতে হাজিরার সময় বার করতে পারছেন না বলে পিছিয়ে গিয়েছে শুনানি। গুরুত্বপূর্ণ এই মামলা এত দীর্ঘদিন চলায় এক সময় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন খোদ বিচারক। এমনকী সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশের ভূমিকাও। অভিযুক্ত প্রভাবশালী হওয়ায় এক জনের মৃত্যুর পরও আইনের লঘু ধারায় মামলা করা হয়েছে বলে আপত্তি জানিয়েছিলেন অনেকে। বিতর্ক শুরু হলে শেষ পর্যন্ত সলমন খানের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের হয়। অপরাধ প্রমাণ হলে দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে এই অভিনেতার।
নিম্ন আদালত এই মামলার রায় কবে শোনায়, এখন শুধু তারই প্রতীক্ষা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy