তাঁকে জয়ার মরদেহ আগলে থাকতে দেখেছে গোটা দেশ। জয়াকে সমাহিত করে শশিকলার গাড়ি পৌঁছেছে পোয়েজ গার্ডেনের প্রাসাদে। এই প্রাসাদে বসেই পর্দার আড়াল থেকে এ বার তামিলনাড়ুর সরকার চালাতে চাইছেন শশিকলা। কর্তৃত্ব নিতে চাইছেন দলের।
গত ২৭ বছর ধরে যে পদে ছিলেন জয়ললিতা, এ বার এডিএমকে দলের সাধারণ সম্পাদকের সেই পদটি দখল করতে চান জয়ার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী শশিকলা। জয়ার অনুপস্থিতিতেও তিনি যে কতটা প্রভাবশালী, এ দিন সেটা বোঝাও গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পনীরসেলভম-সহ এডিএমকের মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্য আজ পোয়েজ গার্ডেনের বাড়িতে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন। ঘটনা হল, জয়া অসুস্থ থাকাকালীনই শশিকলা গোপনে নানা অঙ্ক কষা শুরু করে দিয়েছিলেন। পরবর্তী ‘সুপার চিফ মিনিস্টার’ হওয়ার দৌড়ে নেমে পড়েছিলেন। কিন্তু অ্যাপোলো হাসপাতালে জয়ললিতা যখন মৃত্যুশয্যায়, এডিএমকে বিধায়করা মিলে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করেন তাঁর আস্থাভাজন পনীরসেলভমকে। জয়া নিজেও অতীতে দু’বার পনীরসেলভমকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়েছেন। বিধায়কদের মন বুঝে তাই আপত্তি করেননি শশিকলা। এখন নতুন অঙ্ক নিয়ে নতুন করে মাঠে নামছেন তিনি।
জয়ললিতা বেঁচে থাকার সময়েই দল ও পোয়েজ গার্ডেনের মধ্যে প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে থাকতেন শশিকলা। দলের অনেক নেতাকেই জয়ার কাছে তাঁদের কোনও অনুরোধ পাঠাতে হলে যেতে হতো শশিকলার মাধ্যমে। এমনকী এক সময় এমন অভিযোগও উঠেছিল, আম্মা দলের দফতরে কম আসছেন, জেলা সম্পাদকদের সঙ্গেও দেখা করছেন না! ক্ষোভ বেড়েছিল শশিকলাকে নিয়ে। তবে সে সবে গুরুত্ব দেননি নেত্রী স্বয়ং।
১৯৯৬ সালে বিধানসভা ভোটে জয়ার পরাজয়ের পরে শশিকলা ও তাঁর আত্মীয়দের ভূমিকা নিয়ে আবার প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। চেন্নাইয়ে তখন করুণানিধির সরকার। ফেরা আইনভঙ্গের মামলায় গ্রেফতার হন শশিকলা। আম্মা তখন সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, শশিকলা কখনওই সংবিধানের উপরে উঠে ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করেননি। আবেগের সঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘রাজনীতিকদের এমন কাউকে চাই, যে তাঁর ঘরবাড়ি দেখভাল করবে। এক জন পুরুষ রাজনীতিকের থাকেন স্ত্রী, মহিলা রাজনীতিকদের থাকেন স্বামী অথবা ভাই। কিন্তু আমার কেউ নেই। শশিকলাই আমার বাড়িটা সামলান। তার ফলে আমি বাইরের কাজটা দেখতে পারি।’’
আম্মা বারবার বলতেন, এমজিআরের মৃত্যুর পরে খুবই কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হয়েছে তাঁকে। সে সময় শশিকলা ও তাঁর স্বামী সহযোগিতার প্রস্তাব দিলে তিনি বিশ্বাস করে তাঁদের পোয়েজ গার্ডেনের বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন। জয়ার টাকাকড়ি সংক্রান্ত বিষয়ক কাজকর্মগুলি শশিকলার স্বামী নটরাজন দেখতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে নেত্রীর বিরাগভাজন হতে থাকেন তিনি। জয়া নিজেই বলেছিলেন, ‘‘নটরাজন সীমা ছাড়াচ্ছিল। তাই আমি ওকে পোয়েজ গার্ডেন থেকে বের করে দিয়েছি। কিন্তু শশিকলা আমাকে ছেড়ে যায়নি। আমার জন্য সে নিজের জীবনে অনেক কিছু ছেড়ে দিয়েছে।’’ শশিকলাই নাকি তাঁর জীবন রক্ষা করেছেন— নিজমুখে এ কথাও এক বার জানিয়েছিলেন আম্মা। বলেছিলেন, ‘‘শশিকলার জন্যই আমার জীবন টিঁকে রয়েছে। ওঁর জন্যই ৯১-এর ভোটে জয় পেয়েছিলাম।’’
জয়ললিতার সঙ্গে শশিকলার বিশেষ ঘনিষ্ঠতার সম্পর্ক রয়েছে বলেও এক সময় জল্পনা শুরু হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে পারিবারিক ডাক্তারকে লেখা জয়ললিতার একটা চিঠি ফাঁস হয়। এ নিয়ে হাওয়া দিতে প্রচার শুরু করেছিল ডিএমকে। কিন্তু জয়া ও সেই ডাক্তার এমন কোনও চিঠির কথা স্বীকার করেননি। পরে সিমি গ্রেবালের একটি অনুষ্ঠানে জয়ললিতা মন্তব্য করেছিলেন, এই ধরনের ফালতু অভিযোগে কান দিতে চান না তিনি।
দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর সঙ্গে যাঁর এমন সম্পর্ক, আজ নেত্রীর অনুপস্থিতিতে তিনি তো ডালপালা মেলার চেষ্টা করবেনই। এডিএমকে নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, করুণানিধি সরকার এক বার শশিকলাকে রাজসাক্ষী করে জয়ললিতার বিরুদ্ধে মামলা চালাতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই প্রবল চাপও সহ্য করে নিয়েছিলেন শশিকলা। সে দিনও তিনি জয়ললিতার বিরুদ্ধে যাননি। দলীয় সংগঠনের শীর্ষ পদে বসার জন্য এই সব কথাকে এখন হাতিয়ার করছে শশিকলা শিবির। তবে এডিএমকে নেতা মৈত্রেয়নের ব্যাখ্যা, সাধারণ সম্পাদকের পদে কে বসবেন, তা নিয়ে এখনও ফয়সালা হয়নি। যত দিন না হচ্ছে, তত দিন পোয়েজ গার্ডেনের আড়াল থেকে এক জন যে সক্রিয়তা আরও বাড়িয়ে যাবেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy