ভুটান সফরের সময়েই সমস্যাটা মাথাচাড়া দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এশিয়ার বাইরের প্রথম সফরটিতে (ব্রাজিল) তা আরও বড় হয়ে কিছুটা চাপে রেখেছে সাউথ ব্লককে।
সমস্যা দোভাষী নিয়ে। মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে হিন্দি জানা দোভাষী অনিবার্য হয়ে পড়েছে। কারণ চিনই হোক বা রাশিয়াবিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করছেন হিন্দিতেই। ভবিষ্যতেও বিদেশি রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে বহুপাক্ষিক এবং দ্বিপাক্ষিক মঞ্চে হিন্দিকেই যে ভারতের পক্ষ থেকে আলোচনার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হবে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর।
কিন্তু সমস্যা হল উপযুক্ত দোভাষীর বড়ই আকাল! ভুটান সফরের সময় লোকসভার সচিবালয়ে অনুরোধ করে তাদের কাছ থেকে একজনকে ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, এ বারের ব্রিকস সফরে সেই দোভাষীকে পাওয়া যায়নি। শুধু সেই দোভাষীটিই নন, যেহেতু লোকসভা অধিবেশন চলছে তাই সংসদ থেকে কোনও দোভাষীকেই ছাড়া যাবে না বলেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাউথ ব্লকের সামনে এখন রাস্তা একটিই। দক্ষিণ আমেরিকায় ভারতীয় দূতাবাসে যে সমস্ত হিন্দি ও বিদেশি ভাষা জানা অফিসার রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে থেকে মন্দের ভাল বেছে নেওয়া। ব্রিকস সম্মেলনে মোদীকে বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে। থাকবেন চিন, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, রাশিয়ার রাষ্ট্রনেতারা। এঁদের মধ্যে একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা ঝরঝরে ইংরেজিতে কথা বলেন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ডিলমা রৌসেফ বলেন পর্তুগিজে। রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন ইংরেজিতে স্বচ্ছন্দ হলেও দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সময় মাতৃভাষাই ব্যবহার করেন, চিনা প্রেসিডেন্ট যথারীতি মান্দারিন। বিদেশ মন্ত্রকের হাতে এমন কোনও দোভাষী নেই, যিনি এই তিনটি ভাষা (রুশ, মান্দারিন এবং পর্তুগিজ) থেকে হিন্দিতে বা হিন্দি থেকে ওই ভাষাগুলিতে কথাবার্তা চটজলদি অনুবাদে সক্ষম।
এমন সঙ্কট কিন্তু গত মাসে রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি রোগোজিনের সঙ্গে মোদীর বৈঠকের সময়েও দেখা গিয়েছিল। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে ভারতীয় দোভাষীর রুশ থেকে হিন্দিতে অনুবাদে সমস্যা হচ্ছে দেখে, শেষমেশ রুশ দূতাবাসের এক অফিসার এগিয়ে আসেন! হিন্দিতে তাঁর অবিশ্বাস্য দক্ষতা বিস্মিত করে দিয়েছিল নয়াদিল্লিকে। তিনি ভারতীয় দোভাষীকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিলেন মোদী-রোগোজিন বৈঠকের মর্মোদ্ধারে। তবে যে দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলছে, সেই দেশেরই কোনও অফিসার ভারতীয় ভাষায় তাঁদের বক্তব্য অনুবাদ করে দেবেন, এতে সমস্যা বাড়তে পারে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।
সূত্রের বক্তব্য, গত দশ বছরে কখনওই এই ধরনের দোভাষীর প্রয়োজন হয়নি বিদেশ মন্ত্রকের। তাই সে ভাবে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি। ইউপিএ সরকারের প্রথম এবং দ্বিতীয় দফায় যে ক’জন বিদেশমন্ত্রী থেকেছেন-- নটবর সিংহ, প্রণব মুখোপাধ্যায়, এস এম কৃষ্ণ বা সলমন খুরশিদসবাই আগাগোড়া ইংরেজিতে স্বচ্ছন্দ ছিলেন। তাঁরা চাইতেন বিদেশি রাষ্ট্রনায়কদের বক্তব্যের অনুবাদ ইংরেজিতেই যেন হয়। মোট ৩৩ জন দোভাষী রাখার কথা মন্ত্রকের, যার মধ্যে ২৬ জনের নিযুক্ত থাকার কথা বিভিন্ন দেশের ভারতীয় দূতাবাসে। হেড কোয়ার্টারে রয়েছেন মাত্র ৭ জন। দোভাষীর অনেকগুলি পদ খালিও রয়েছে।
আলোচনা চালানোর মতো ইংরেজি বলতে যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ মোদী। কিন্তু কূটনৈতিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হিন্দিতেই করতে পছন্দ করেন। নিজের ভাষায় সুক্ষ ভাবে শব্দের তারতম্য ঘটানো যায়, তেমনই কোনও বিতর্কিত বিষয়কে কিছুটা লঘু করে দেওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু তার সঙ্গত দেওয়ার জন্য প্রয়োজন পাকাপোক্ত ভাষাজ্ঞান সম্পন্ন একজন দোভাষী। ব্রিকস সম্মেলনে যার অভাবে ভুগতে হতে পারে প্রধানমন্ত্রীকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy