সব জারিজুরি বেরিয়ে গিয়েছে। ফাঁস হয়নি শুধু আঙুলের ছাপ। গোপন নথি ফাঁসের পর বেআব্রু স্করপেন ডুবোজাহাজ নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ভরসা এখন এই টুকুই। নৌসেনার স্করপেন ডুবোজাহাজের তথ্য ফাঁসের খবর অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পর গত কাল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক দাবি করেছিল, এখনও পর্যন্ত চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু আজ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর স্বীকার করলেন, কিছু দুশ্চিন্তা থাকছেই। নথি ফাঁসের খবর সত্যি হলে, এর সব থেকে খারাপ ফল কী হতে পারে, তা ধরে নিয়েই এগোচ্ছে সরকার।
মন্ত্রীর আরও দাবি, ‘‘বিরাট দুশ্চিন্তার কিছু নেই। যে নথি ফাঁস হয়েছে, তাতে ডুবোজাহাজের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বা সিগনেচার নেই। কারণ ডুবোজাহাজের এখনও মহড়াই শুরু হয়নি।’’ ডুবোজাহাজের অস্ত্রশস্ত্র সংক্রান্ত কোনও তথ্যও ওই নথিতে নেই বলেও পর্রীকরের দাবি।
নৌসেনার ব্যাখ্যা, ডুবোজাহাজের সব থেকে স্পর্শকাতর তথ্য হল তার শব্দের বৈশিষ্ট্য বা ‘অডিও সিগনেচার’। যা অনেকটা মানুষের আঙুলের ছাপের মতো। প্রতিটি ডুবোজাহাজের ক্ষেত্রে আলাদা। এর মাধ্যমেই একটি ডুবোজাহাজ থেকে আর একটিকে আলাদা করা যায় বা তাকে চিহ্নিত করা যায়। ডুবোজাহাজের ইঞ্জিন, পাম্প, প্রপেলার থেকে কিছু শব্দ তৈরি হয়। কিন্তু ডুবোজাহাজ নিজে জলের তলায় অন্য জাহাজের গতিবিধি জানার জন্য শব্দ ছড়ায়। যেই শব্দ প্রতিফলিত হয়ে ফের ডুবোজাহাজেই ফিরে আসে। এই ‘অডিও সিগনেচার’ জানা হয়ে গেলেই শত্রুপক্ষের যুদ্ধজাহাজ বা ডুবোজাহাজ কিংবা সমুদ্রে নজরদারির যুদ্ধবিমান ওই ডুবোজাহাজটিকে ধরে ফেলতে পারে। নৌসেনার প্রথম স্করপেন সাবমেরিন আইএনএস কালবরী-র মহড়া শুরু হয়নি বলেই ওই অডিও সিগনেচারও তৈরি হয়নি। আজ পর্রীকর সেই দাবিই করেছেন।
এই দাবি সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অন্দরে যে আতঙ্ক সেঁধিয়ে বসেছে, তা স্পষ্ট। অস্ট্রেলিয়া সরকারও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ ফ্রান্সের ডিসিএনএস সংস্থাটি থেকে অস্ট্রেলিয়া ৩৮০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে একই ডুবোজাহাজের বরাত দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তারা ডিসিএনএস-কে সতর্ক করে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বলেছেন। ডিসিএনএস-র মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাঁদের তরফে প্যারিসে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাদের সংস্থা থেকে তথ্য ফাঁস হয়নি, চুরি হয়েছে বলে ডিসিএনএস-এর দাবি। ফরাসি সরকারেরও এ নিয়ে চিন্তা কম নয়। কারণ ফরাসি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে ভারতের সঙ্গে দরকষাকষি চলছে। এই নথি ফাঁসের ঠেলায় ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা বরাত পাওয়া প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।
এ দিকে যে সংবাদপত্রে গোপন নথি ফাঁসের খবর প্রকাশ হয়েছিল, সেই ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’ জানিয়েছে, এ বার তারা কী ভাবে এই নথি ফাঁস হল— তা প্রকাশ করবে। সংবাদপত্রটি প্রথম দিন বেশ কিছু গোপন নথি ওয়েবসাইটে দিয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতে তারা আরও কিছু নথি দেয়। তবে নথিতে স্পর্শকাতর তথ্য কালো কালিতে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। যা দেখিয়ে নৌসেনা দাবি করে, নথি থেকে বিপদের কিছু নেই। স্পর্শকাতর তথ্য ঢাকা দেওয়া রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলেছেন, অস্ট্রেলীয় সংবাদপত্র নথির স্পর্শকাতর তথ্য ঢেকে দিয়েছে বলে বিপদ নেই বলাটা বোকামি। এতেই বোঝা যাচ্ছে, স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস হয়ে গিয়েছে। সেই তথ্য পাকিস্তান বা চিনের হাতে এলে বিপদ বাড়বে। আজ পর্রীকর যে বলেছেন ডুবোজাহাজের অস্ত্রশস্ত্র সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস হয়নি, তাকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। কারণ ফ্রান্স থেকে টর্পেডোর বরাত দেওয়া হয়নি। সেখানে নৌসেনার পুরনো টর্পেডো লাগানোর কথা।
ডুবো সঙ্কেত
• ভারতের ভরসা
স্করপেন ডুবোজাহাজে আইএনএস কালবরী-র মহড়া শুরু হয়নি। তাই এর শব্দের বৈশিষ্ট্য বা ‘অডিও সিগনেচার’ ফাঁস হয়নি।
কী এই অডিও সিগনেচার?
• ডুবোজাহাজ অন্য জাহাজের গতিবিধি জানতে শব্দ ছড়ায়। যে শব্দ প্রতিফলিত হয়ে ফের ডুবোজাহাজেই ফিরে আসে। সমুদ্রে মহড়া শুরু হওয়ার পরেই তা ঠিক হয় এর বৈশিষ্ট্য কী?
• অনেকটা মানুষের আঙুলের ছাপের মতো, প্রত্যেকটি ডুবোজাহাজের ক্ষেত্রে যা আলাদা, এর মাধ্যমেই একটি ডুবোজাহাজকে আলাদা করা যায় বা তাকে চিহ্নিত করা যায় কী ভাবে বিপদ?
• ‘অডিও সিগনেচার’ জানা হয়ে গেলেই শত্রুপক্ষের যুদ্ধজাহাজ, ডুবোজাহাজ বা সমুদ্রে নজরদারির যুদ্ধবিমান ওই ডুবোজাহাজটিকে চিহ্নিত করে ফেলতে পারে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy