Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নাভেদের পরে ফের পাকড়াও পাক জঙ্গি

নাভেদের পর এ বার সাজ্জাদ। এক মাসের মধ্যেই ফের সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ল আর এক পাক জঙ্গি। জেরার মুখে জঙ্গি-প্রশিক্ষণ নিয়ে নাভেদ যা যা জানিয়েছিল, সেই সূত্রগুলোই খানিক জোরদার ভাবে প্রতিষ্ঠিত হল নতুন এই গ্রেফতারিতে।

ধৃত সাজ্জাদ। ছবি: পিটিআই।

ধৃত সাজ্জাদ। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩৪
Share: Save:

নাভেদের পর এ বার সাজ্জাদ। এক মাসের মধ্যেই ফের সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ল আর এক পাক জঙ্গি। জেরার মুখে জঙ্গি-প্রশিক্ষণ নিয়ে নাভেদ যা যা জানিয়েছিল, সেই সূত্রগুলোই খানিক জোরদার ভাবে প্রতিষ্ঠিত হল নতুন এই গ্রেফতারিতে।

উত্তর কাশ্মীরের রাফিয়াবাদ থেকে ধরা হয়েছে সাজ্জাদ ওরফে আবু আবাইদুল্লা ওরফে জাভেদ আহমেদকে। সেনার হাত থেকে পালাতে একটি পাহাড়ি গুহায় লুকিয়ে ছিল সাজ্জাদ-সহ আরও তিন জঙ্গি। সেনা সূত্রে খবর, চার জনেই লস্কর-ই-তইবার সদস্য। বাড়ি পাকিস্তানে।

দিন দশেক আগেই লাই-ডিটেক্টর টেস্ট-এ নিজেকে পাকিস্তানি বলে স্বীকার করে নিয়ে নাভেদ জানায়, তার মতো আরও অনেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করার অপেক্ষায় রয়েছে। তার সঙ্গেই এ দেশে ঢুকেছিল আরও ১৮ জন। এদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে লস্কর-ই-তইবা। ২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম মূল চক্রী হাফিজ সইদকে সে নিজে চোখে দু-দু’বার দেখেছে বলে জানিয়েছিল নাভেদ। হাফিজ ও তার ছেলে তলহা যে এই শিবিরগুলোতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, তা-ও জানায় সে। গোয়েন্দাদের কাছে নাভেদ আরও জানিয়েছে, হাফিজ সইদের উদ্দেশ্যই হল কাশ্মীর উপত্যকায় সন্ত্রাস জারি রাখা। যার উদাহরণ মিলেছে গুরদাসপুর বা উধমপুরের ঘটনাতেও।

সেনা সূত্রে খবর, নাভেদের স্বীকারোক্তির পাশাপাশি তারা আরও খবর পায় সম্প্রতি উরি সেক্টরের কাছে সীমান্ত পেরিয়ে ফের জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এক সেনা অফিসার জানান, ২৩-২৪ অগস্ট নাগাদ তাঁরা জানতে পারেন পাহাড়ে ঘেরা ‘কাফিরখান’ এলাকা দিয়ে জঙ্গিদের একটি দল কাশ্মীরে ঢুকেছে। উরি, রাফিয়াবাদ থেকে আরও উঁচুতে কাজিনাগের দিকে যাচ্ছে তারা। কিন্তু সেনাবাহিনী যে সে খবর পেয়েছে, তা জানতে পেরে যায় জঙ্গিরাও। রাফিয়াবাদের দিকে পালাতে থাকে তারা।

ওই সেনা অফিসার বলেন, ‘‘গত কাল সকালে প্রথম জঙ্গিদের সাক্ষাৎ পাই আমরা। তখনই আমাদের গুলিতে নিহত হয় এক জঙ্গি। বাকি চার জন পালিয়ে যায়।’’ জঙ্গিদের পিছু ধাওয়া করে সেনাবাহিনীও। গত কাল তল্লাশি অভিযানে নামে আধাসামরিক বাহিনী, রাষ্ট্রীয় রাইফেলস ও স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপের (এসওজি) একটি দল। ওই অফিসার বলেন, ‘‘কঠিন পার্বত্য এলাকা। খাড়াই ঢাল। পরিকল্পনামাফিক তাই ধীর গতিতে এগিয়েছিলাম আমরা। ২৬ অগস্ট ফের ওদের দেখা পাই। একটা গুহার মধ্যে গা ঢাকা দিয়ে ছিল ওরা।’’ ফের শুরু হয় দু’পক্ষের গুলি বিনিময়। বিকেল পর্যন্ত চলে যুদ্ধ।

ইতিমধ্যে সেনার আরও একটি দল চলে আসে ওই এলাকায়। সূত্রের খবর, হেলিকপ্টার করে সেনা নামানো হয়। গুলির শব্দ নিশানা করে জঙ্গিদের গুহার একেবারে কাছে পৌঁছে যায় সেনার ওই দলটি। এ বার শুরু হয় সরাসরি গুলির লড়াই। শেষে গুহা থেকে জঙ্গিদের বার করে আনতে গুহা লক্ষ করে লঙ্কা গুঁড়ো ভর্তি গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে থাকে সেনা।

এক সময় সব শান্ত হয়ে যায়। থেমে যায় গুহার ভিতর থেকে পাল্টা গুলি ছুটে আসা। এর পর গুহায় প্রবেশ করে সেনা। ভিতরে ঢুকে দেখে তিন জঙ্গির নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, গুহার ভিতরে এক জায়গায় লুকিয়ে ছিল সাজ্জাদ। সেনার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। কাকুতি মিনতি করতে থাকে, তাকে যাতে মেরে ফেলা না হয়। সেনাবাহিনীই তাকে জল ও খাবার দেয়। প্রাথমিক চিকিৎসাও করা হয়। পাহাড়ি রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ হাঁটায় তার পা ফুলে গিয়েছিল। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল সে। পরে জেরার মুখে সে জানায়, তার নাম সাজ্জাদ। বয়স ২২। লস্কর-ই-তইবার সদস্য। তার বাড়ি পাকিস্তানের মুজফ্ফরগড়ে। আরও জেরা করতে শ্রীনগরে এসওজি-র সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সাজ্জাদকে।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু আজ বলেন, ‘‘আবার এক পাকিস্তানি জঙ্গি ধরা পড়ল। আমাদের অবস্থানটাই আরও জোরদার হল এতে। বড় প্রমাণ। কোনও সন্দেহই নেই যে গোটা ঘটনার আড়ালে পাকিস্তান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pakistan Terrorist Encounter North Kashmir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE