Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাতিল নোটের উৎস কী, ধন্দে শিলচরের পুলিশ

বাতিল হওয়া ২ লক্ষাধিক টাকা কোথা থেকে এল, ৭ জনকে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টা পরও তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। আয়কর কর্তাদের বক্তব্য ভিন্ন। তাই ২৪ ঘণ্টা পরও ধৃতদের জেরা শুরু করেননি তাঁরা।

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৭
Share: Save:

বাতিল হওয়া ২ লক্ষাধিক টাকা কোথা থেকে এল, ৭ জনকে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টা পরও তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। আয়কর কর্তাদের বক্তব্য ভিন্ন। তাই ২৪ ঘণ্টা পরও ধৃতদের জেরা শুরু করেননি তাঁরা।

স্থানীয় আয়কর কর্তারা গত কাল জানিয়েছিলেন, এই সব বিষয় গুয়াহাটি থেকে নজরদারি করা হয়। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যোগাযোগ করে। গুয়াহাটি (সদর) আয়কর অফিসার অরিজিৎ দেব আজ জানিয়েছেন, ‘‘কবে কী ভাবে আমাদের তদন্তকারী দল কোথায় যাবে, তা গোপনীয় ব্যাপার।’’

ফলে শেষ বেলায় ধৃতদের আজ আদালতে তোলা হয়। বাতিল টাকা নিজের জিম্মায় রাখা একেবারে নতুন ব্যাপার। তাই আইনেও তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও নির্দেশিকা নেই। ফলে ধৃতদের কোন কোন ধারায় গ্রেফতার করা, আদালতে তোলার আগে তা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় পুলিশকে। ভারতীয় কার্যবিধির ৪২০ নম্বর ধারায় প্রতারণার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ধৃতদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতারণার অভিযোগ আনেনি। ২৫১ নম্বর ধারার সঙ্গে এই ধরনের পরিস্থিতির কিছুটা সামঞ্জস্য রয়েছে। সেখানেও সমস্যা। শুধু মুদ্রার কথা বলা হয়েছে ২৫১-তে। গত কাল বাজেয়াপ্ত পুরো টাকাই বাতিল ৫০০ ও ১ হাজার টাকার কাগজের নোট, ধাতব মুদ্রার ব্যাপারই নেই। ফলে তারও উল্লেখ চলে না।

কাছাড়ের পুলিশ সুপার রাকেশ রৌশন জানিয়েছেন, ধৃতদের বিরুদ্ধে ১৮৮ ধারায় মূল অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই ধারায় সরকারি বিজ্ঞপ্তি লঙ্ঘনে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ৪২০ ধারা। রাকেশবাবুর কথায়, ‘‘এটি প্রতারণাই, রাষ্ট্রের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা।’’ আয়কর বিভাগের তদন্তকারীরা এলে আয়কর আইনের ধারাও যোগ করা যেত বলে জানিয়েছেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্তা।

আদালত আজ ৫ জনকে জেল হেফাজতে পাঠিয়ে বলবীর সিংহ ও রঞ্জন পালকে মুক্তি দিয়েছে। পুলিশই বলবীর ও রঞ্জনকে এই মামলায় সাক্ষী হিসেবে পেতে চেয়েছিল। তাঁদের যুক্তি, বলবীরের কাছে ৪০ হাজার টাকার বাতিল নোট ছিল। মিজো মহিলারা আগে এক বার শিলচর এসে ৫০ শতাংশ কমিশনের শর্তে ওই টাকা নিয়ে যায়। পরে একটি টাকাও ফিরিয়ে দেয়নি। যোগাযোগেরও উপায় ছিল না। তারা ফের শিলচরে এসেছে, জানতে পেরে গত কাল দুপুরে বলবীর হোটেলে যায়। সঙ্গে নিয়ে যায় রঞ্জন পালকে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ তার বক্তব্যকে সত্য বলেই মনে করছে। আজ বলবীর ধৃত মিজো মহিলাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে পৃথক এক মামলাও করেছে।

ভাষা সমস্যা তদন্তের কাজে মুশকিলে ফেলেছে পুলিশকে। মূল অভিযুক্ত তিন মিজো মহিলা গ্রেফতারের আগে দালালদের সঙ্গে অনর্গল হিন্দিতে কথা বলছিল। এখন সব প্রশ্নেই না বোঝার ভান করছে।

রাকেশবাবুর কথায়, ‘‘তাতে রেহাই পাওয়ার সুযোগ মিলবে না। পুলিশ চতুর্দিক থেকে বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করছে।’’ আরও অনেকে তাতে জড়িত বলে তিনি নিশ্চিত। কারা জড়িত, এখন তা-ই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনও এক ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ কর্তার বিরুদ্ধেও এই চক্রে মদত দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, সে কথা জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘তার সত্যতা গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই করা হচ্ছে।’’

আরও একটি বিষয় তাঁকে ভাবাচ্ছে। তা হল, নোট বাতিলের পর এই অঞ্চলের মানুষ মিজোরামে টাকা লুকোতে চেয়েছিল। কারণ সেই রাজ্যে আয়কর আইনের বেশ কিছু শিথিলতা রয়েছে। এখন সেখান থেকে বাতিল টাকা বরাকে এল কেন? প্রাথমিক তদন্তে রাকেশবাবুর অনুমান, শুরুর দিকে মোটা টাকা কমিশনে মিজোরামের বাসিন্দারা প্রচুর বাতিল টাকা কিনে নেয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেখানেও সরকার কড়াকড়ি শুরু করলে একাংশ টাকা ঘরে পড়ে থাকে। ওই টাকাই এখন অসমে এনে পাল্টা কমিশনের বিনিময়ে বদলাতে চাইছে তারা। লক্ষ্য, মূল টাকাটাও যদি ঘরে তোলা যায়। আবার একটি দ্বিতীয় অনুমানও রাকেশবাবু উড়িয়ে দিতে পারছেন না। তদন্তকারী অফিসারদের একাংশের ধারণা, এই টাকা সরকারি তহবিলের। চুরির মাধ্যমে তা ধৃতদের হাতে গিয়েছে। হিসেববহির্ভূত সেই টাকা নিজের রাজ্যে বের করার সুযোগ মেলেনি।

তল্লাশিতে ২ লক্ষ ২১ হাজার টাকা উদ্ধার হলেও পুলিশ সুপারের অনুমান, আরও টাকা তারা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল। দু’দিনে সে সব বদল করে বিভিন্ন জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বা অন্য কোথাও লুকিয়ে রেখেছে। সেই কাজে ধৃত দালালরাই এখন পুলিশের প্রধান ভরসা। আয়কর কর্তাদের আসার অপেক্ষায় পুলিশ স্থানীয় দালালদেরও তেমন একটা জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Silchar Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE