Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দলিলে বদল, বিনা ভোটেই জয় ইয়েচুরি লাইনের

সিপিএমের ২২তম পার্টি কংগ্রেস যে রাজনৈতিক প্রস্তাব ‘সর্বসম্মত ভাবে’ গ্রহণ করল, তার মানে দাঁড়়াচ্ছে— সংসদের ভিতরে ও বাইরে কংগ্রেস-সহ গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তির সঙ্গে সমঝোতার রাস্তা খোলা।

কমরেড: সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চে ইয়েচুরি এবং কারাট। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র

কমরেড: সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চে ইয়েচুরি এবং কারাট। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র

সন্দীপন চক্রবর্তী
হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৪২
Share: Save:

পার্টি কংগ্রেসে দলের ‘সরকারি’ খসড়়া প্রস্তাব পেশ করে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, তাঁরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেই পার্টি কংগ্রেসই ৪৮ ঘণ্টায় প্রকাশ কারাটকে বুঝিয়ে দিল, সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাঁর পক্ষে নেই! গোটা দেশের প্রতিনিধিদের সওয়ালের চাপে শেষ পর্যন্ত বিনা ভোটেই কারাটের তত্ত্বকে পরাস্ত করে জয়ী হল সীতারাম ইয়েচুরির বৃহত্তর সমঝোতার লাইন।

সিপিএমের ২২তম পার্টি কংগ্রেস যে রাজনৈতিক প্রস্তাব ‘সর্বসম্মত ভাবে’ গ্রহণ করল, তার মানে দাঁড়়াচ্ছে— সংসদের ভিতরে ও বাইরে কংগ্রেস-সহ গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তির সঙ্গে সমঝোতার রাস্তা খোলা। তবে ‘রাজনৈতিক জোট’ কংগ্রেসের সঙ্গে হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাশ হওয়া খসড়়া দলিলে কংগ্রেসের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনও রকম সমঝোতা না করার যে কথা ছিল, সেই অনুচ্ছেদটিই বাদ দিয়ে দেওয়া হল পার্টি কংগ্রেসে। পরিবর্তে ইয়েচুরির যুক্তি মেনে সংশোধনী এনে নতুন একটি অনুচ্ছেদ রাজনৈতিক প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।

বঙ্গ ব্রিগেড-সহ সিপিএমের বড়় অংশের মতে, আগের দলিলে কংগ্রেসের জন্য দরজা একেবারে বন্ধ ছিল। এ বার সমঝোতার নামে অর্ধেক দরজা খোলা হল। বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেস-সহ ধর্মনিরপেক্ষ সব দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাস্তায় নামলে ভবিষ্যতে আরও ঐক্যের বাতাবরণ তৈরি করা যাবে। যেখানে সিপিএম নেই, সেখানে বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেসের প্রার্থীকে সমর্থনেও বাধা থাকবে না বলে ওই নেতাদের দাবি। এই প্রস্তাব পাশ মানেই বাংলায় সিপিএম রাতারাতি ঘুরে দাঁড়়াবে, এমন দাবি অবশ্য কেউ করছেন না। তবে বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করে আলিমুদ্দিন ভুল করেছিল বলে যে পর্যালোচনা রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক দলিলে রয়েছে, এ বার তার সংশোধন চেয়ে কাল, শনিবার প্রস্তাব ফেলবে বাংলার সিপিএম।

মাত্র তিন মাস আগে কলকাতায় কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভোটাভুটিতে খারিজ হয়ে গিয়েছিল ইয়েচুরির এই লাইন। তার পরেও পার্টি কংগ্রেসে যে এ ভাবে ফিরে আসা যায়, সিপিএমের রাজনীতিতে তাকে ‘অসাধ্য সাধন’ হিসেবে ধরা হচ্ছে!

পার্টি কংগ্রেসে বক্তাদের অধিকাংশই বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে তাঁরা একমত নন। প্রতিনিধিরা দিয়েছেন ৩৭৩টি সংশোধনী। এবং তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ১৫টি রাজ্যের প্রতিনিধি লিখিত ভাবে দাবি করেন, রাজনৈতিক প্রস্তাবের উপরে গোপন ব্যালটে তাঁরা ভোট দিতে চান!

বিতর্ক শেষ হওয়ার পরে আজ বিকেলে স্টিয়ারিং কমিটির ম্যারাথন বৈঠকে বাংলার নেতারা দাবি করেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মেনে ভোটই হোক। তত ক্ষণে কারাট শিবিরও বুঝে গিয়েছে প্রতিনিধিদের মনোভাব। চাপের মুখে ‘মধ্যপন্থা’ই বেছে নেন কারাট। বৈঠক থেকে অধিবেশন কক্ষে এসে ইয়েচুরি দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার আবেদন করেন। কারাট ব্যাখ্যা করেন, সঙ্ঘ-বিজেপির আগ্রাসনের মোকাবিলায় তাঁরা সর্বোচ্চ শক্তির সমাহার চান।

এ সবের শেষে রাতে আনন্দবাজারের কাছে ইয়েচুরির মন্তব্য, ‘‘এটা কোনও ব্যক্তির জয় বা পরাজয় নয়। দলের নিচু তলা থেকে যা দাবি উঠে এসেছে, গণতান্ত্রিক পথে সেটাই স্বীকার করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Sitaram Yechury Prakash Karat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE