Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নিরাপত্তার পক্ষে ঝুঁকি রোহিঙ্গারা, আদালতে হলফনামা কেন্দ্রের

সেই হলফনামায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, ভারতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলির যোগসাজশ রয়েছে, যা দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে ঝুঁকির।

অসহায়: মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশের বালুখালি শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা মা জুলেখা বেগম। সোমবার। ছবি: এপি।

অসহায়: মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশের বালুখালি শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা মা জুলেখা বেগম। সোমবার। ছবি: এপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৪
Share: Save:

রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা নিয়ে আজ নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে সুপ্রিম কোর্টে একটি হলফনামা পেশ করল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই হলফনামায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, ভারতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলির যোগসাজশ রয়েছে, যা দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে ঝুঁকির।

হলফনামায় বলা হয়েছে, ‘ভারত এবং মায়ানমারের মধ্যে অরক্ষিত সীমান্তের সুযোগ নিয়ে রোহিঙ্গারা ভারতে এসেছেন। এ দেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ৪০ হাজারের কিছু বেশি। তাদের এখানে বসবাস করার বিষয়টির সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা প্রশ্নটি ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত।’ ১৭ পাতার হলফনামায় বিস্তারিত ভাবে এই রোহিঙ্গা-জঙ্গি সংযোগের কথা বলা হয়েছে। হলফনামার বক্তব্য, ‘বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ভারতীয় নাগরিকদের ওপর মৌলবাদী রোহিঙ্গাদের হামলার আশঙ্কা রয়েছে।’

আরও পড়ুন: দেশে ফেরার চেয়ে মরে যাওয়া ভাল, বলছেন রোহিঙ্গারা

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দেওয়ার দিনই শউমান হক নামে এক জনকে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ। দিল্লি পুলিশের দাবি, এই ব্যক্তি লস্করের হয়ে কাজ করে। মিজোরাম ও মণিপুরে জঙ্গি ঘাঁটি তৈরি ছাড়া রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসবাদে উস্কানি দেওয়ার পিছনেও তার হাত রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, দিল্লি পুলিশের এই গ্রেফতার এবং পরবর্তী সময়ে তদন্তের গতিপ্রকৃতিতে রোহিঙ্গা নিয়ে ভারতের অবস্থান আরও পোক্ত হবে।

এর আগে শুক্রবার কেন্দ্রের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দেওয়া হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছিল। তার পরে রাতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু রাতে জানান, সে দিন কোনও হলফনামা জমা দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। এর পরে শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জানান, সোমবার এই হলফনামা জমা দেওয়া হবে।

এমনিতেই রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কূটনৈতিক ভাবে নয়াদিল্লি যথেষ্ট চাপে। মানবাধিকার সংগঠনগুলিও এ বিষয়ে ভারতের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর কড়া নজর রাখছে। ২৪ অগস্ট রাতে মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর রোহিঙ্গা জঙ্গিদের হামলা এবং প্রায় ১৫০ জন পুলিশ ও সেনাকে হত্যার পরে নয়াদিল্লি সরকারি ভাবে সে দেশের সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। চিনের প্রভাবের কথা মাথায় রেখে মায়নমারকে এ ব্যাপারে সমর্থন করা ছাড়া সাউথ ব্লকের গত্যন্তর নেই। কিন্তু পাশাপাশি ভারত এটাও বুঝছে যে এই শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে মায়নমার আদৌ রাজি নয়। ঢাকাও চাপ তৈরি করছে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে ভারত যেন পাশে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন অবশ্য নবান্নে বলেন, ‘‘একটা সম্প্রদায়ের সবাই জঙ্গি, এটা বিশ্বাস করি না। জঙ্গি থাকলে সরকার কঠোর পদক্ষেপ করুক। বাকিদের সমস্যা মানবিক ভাবেই দেখা উচিত।’’ মমতা জানান, রোহিঙ্গা শিশুদের তালিকা বানিয়ে কেন্দ্র তাদের ফেরত পাঠাতে বলেছে। তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু আমাদের শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন এ কাজে পারদর্শী নয়।’’

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দাবি, জম্মু ও কাশ্মীরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আইএসআই এবং লস্করের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। এ ছাড়া দিল্লি, রাজস্থান, হরিয়ানাতেও রয়েছে বহু রোহিঙ্গা শরণার্থী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE