Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
National News

৪০ লক্ষ টাকার হীরে কুড়িয়ে পেয়েও ফিরিয়ে দিল রক্ষীর ছেলে

খেলাশেষে বাড়িতে গিয়ে একান্তে প্যাকেটটা খুলতেই চোখ বিস্ফারিত হয়ে যায় বিশালের। ভাবে, ঠিক দেখছি তো! হ্যাঁ, ঠিকই দেখেছিল সে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
সুরাত শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৭ ১২:২৩
Share: Save:

মাহিদাপুরার ডায়মন্ড স্ট্রিটে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলছিল একাদশ শ্রেণির ছাত্র বিশাল। খেলতে খেলতে বল চলে যায় রাস্তার পাশে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায়। বলটা কুড়োতে গিয়েছিল বিশাল। কিন্তু তার হাত আটকে যায় একটা প্যাকেটের উপর পড়ে। একটি বাইকের চাকার পাশে পড়েছিল প্যাকেটটা। বিশাল সেটা কৌতুহলবশত তুলে পকেটে ভরে নেয়।

আরও পড়ুন: ‘বোকো না আমায়, একটু ভালবেসে পড়াও!’

খেলাশেষে বাড়িতে গিয়ে একান্তে প্যাকেটটা খুলতেই চোখ বিস্ফারিত হয়ে যায় বিশালের। ভাবে, ঠিক দেখছি তো! হ্যাঁ, ঠিকই দেখেছিল সে। হীরেতে ভর্তি ছিল প্যাকেটটা। বিষয়টা যেমন বন্ধুদের অগোচরে রেখেছিল, তেমনই বাড়িতেও প্যাকেট সম্পর্কে কাউকে কিছু বলেনি বিশাল। সে জানায়, শুধু মনে হচ্ছিল এই প্যাকেটের মালিককে যে ভাবেই হোক এটা ফেরত দিতে হবে। সে দিন রাতের মতো তার খাওয়া-ঘুম সব উড়ে গিয়েছিল। শুধু ভোরের আলো ফোটার প্রহর গুনছিল সে। যেখানে প্যাকেটটা পেয়েছিল পর পর দু’দিন সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল বিশাল। কিন্তু মালিকের হদিস পায়নি। তৃতীয় দিন যখন সে ওই পার্কিংয়ের কাছে দাঁড়িয়েছিল, এক ব্যক্তিকে ফোনে হীরের একটি প্যাকেটের কথা কারও সঙ্গে আলোচনা করতে শোনে সে। বিশাল বলে, “আমি লোকটাকে অনুসরণ করলাম। তার পর তাঁকে ডেকে প্যাকেটটা দেখাতেই উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন তিনি। তাঁকে বললাম, প্যাকেটটা আমার কাছেই রেখে দিয়েছিলাম আসল মালিকের হাতে তুলে দেব বলে।”

আরও পড়ুন: কেজরীর জন্মদিনে ব্যঙ্গ ভিডিও পোস্ট, বিতাড়িত আপ বিধায়ক কপিল মিশ্রের

ডায়মন্ড স্ট্রিটের বিখ্যাত হীরে ব্যবসায়ী মনসুখ সাভালিয়াই প্যাকেটটি হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি বলেন, “প্যাকেটটা যে ফিরে পাব তা আশাই করিনি। এই ছেলেটাই আমাকে ও আমার পরিবারকে বাঁচিয়ে দিল। না হলে এই দেনা শোধ করতে ঘরবাড়ি বিক্রি করে দিতে হত!” বিশালের সততায় খুব খুশি ডায়মন্ড স্ট্রিটের ব্যবসায়ীরা। এই সততার পুরস্কারও দেওয়া হয় তাকে। সাভালিয়া নিজে ৩০ হাজার টাকা এবং ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে আরও ১১ হাজার টাকা পুরস্কার দেয় বিশালকে। সাভালিয়া জানান, মোট ৭০০ ক্যারাটের হীরে ছিল ওই প্যাকেটে। যার বাজারমূল্য আনুমানিক ৪০ লক্ষ টাকা।

খুব একটা সচ্ছল পরিবারের ছেলে নয় বিশাল। মা সেলাইযের কাজ করে, বাবা একটি দোকানের ওয়াচম্যান। দাদা একটা অ্যাকাউন্ট্যান্ট অফিসে কর্মরত। এত মূল্যবান জিনিস পেয়ে কী ভাবে লোভ সামলাল সে? বিশালের স্পষ্ট জবাব, একটা ৫০ টাকার নোটই তাঁকে শিক্ষা গিয়েছে।

কেমন?

আরও পড়ুন: দিল্লির রাস্তায় ১২ ঘণ্টা পড়ে, কেউ এড়িয়ে গেল, কেউ পকেট মারল

বিশাল জানায়, অনেক দিন আগে মা তাঁকে ৫০ টাকার নোট দিয়ে কিছু কিনতে পাঠিয়েছিল। কিন্তু সেটা অসাবধানতাবশত হারিয়ে যায়। টাকা হারিয়ে খুব মুষড়ে পড়েছিল সে। বলে, “তখন একটা উপলব্ধি হয়েছিল, ৫০ টাকা হারিয়েই এমন অবস্থা আমার, যাঁর কোনও মূল্যবান জিনিস হারায় সে ব্যক্তির মনের অবস্থা কী হবে তা হলে?” এই উপলব্ধিই তাঁকে শিখিয়েছে কোনও হারিয়ে যাওয়া বস্তু পেলে সেটা সেই মালিকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE