এই মন্দিরেই নির্যাতিত হয়েছিল মেয়েটি। —নিজস্ব চিত্র।
শুনশান শুঁড়িপথ আর জঙ্গলে ঘেরা মন্দিরটা যেন থম মেরে রয়েছে। জম্মু পুলিশের চার্জশিট অনুসারে এখানেই আটকে রেখে দিনের পর দিন অত্যাচার করা হয়েছিল শিশু মেষপালিকাকে। স্থানীয় ড্রাইভারের সহায়তায় মন্দির চত্বরে পৌঁছনো তো গেল। কিন্তু ভিতরে ঢুকতেই যুগপৎ আতঙ্ক এবং বিস্ময়।
আধো অন্ধকার ঘরের এক প্রান্তে মঞ্চ। সেখানে স্থানীয় কুলদেবতাদের বিগ্রহ। ঘরটিতে পাক খাচ্ছেন বছর পঁচিশের এক যুবা। হাতে লম্বা বাঁশের লাঠির আগায় বাঁকানো ইস্পাতের ফলা! অপরিচিত ব্যক্তিকে ঢুকতে দেখেই সেই ফলা চলে এল তাঁর নিজের গলার কাছে! সঙ্গে স্থানীয় ডোগরি ভাষায় হুঙ্কার।
নিয়মিত সাংবাদিকরা আসছেন এখানে। তাঁদের সামনে ওই ব্যক্তির এটা নাকি প্রতীকী প্রতিবাদ! ইনি অভিযুক্ত প্রধান পূজারীর (যিনি আপাতত বিচারাধীন এবং জেলবন্দি) নিকটাত্মীয়। দিল্লি থেকে এসেছি শুনে হুঙ্কার বদলে গেল হিন্দিতে। বললেন, ‘‘মেহবুবা মুফতি আমাদের শেষ করে দিতে চাইছেন। বিনা দোষে ফাঁসানো হচ্ছে। সঙ্গে অস্ত্র রেখেছি নিজেকে বাঁচানোর জন্য!’’ ক্ষোভের এই বহিঃপ্রকাশ কিছুটা বিচিত্রই। কিন্তু কাঠুয়া এবং জম্মুর অন্যান্য এলাকা ঘুরেও দেখা যাচ্ছে, জানুয়ারি মাসের ওই ঘটনার পর থেকে জম্মুতে মেরুকরণের হাওয়া আরও জোরদার হয়েছে। হিন্দুত্বের জিগিরও প্রবলতর।
জম্মু পঠানকোট হাইওয়ের পাশে একটি বটগাছের বাঁধানো বেদীতে বিশ দিন হয়ে গেল কাঠুয়া নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবিতে ধর্নায় বসেছেন অভিযুক্তের আত্মীয়স্বজন। বেশির ভাগই মহিলা। নিচে শতরঞ্চি বিছিয়ে স্থানীয় সরপঞ্চ এবং গ্রামের বিজেপি নেতারা। ‘‘আপনি তো কলকাতার, তার মানে বামপন্থী। আমাদের বিরুদ্ধে লিখবেন!’’ ঝাঁঝিয়ে উঠলেন সরপঞ্চ কান্ত কুমার। বহু কষ্টে বিশ্বাস অর্জনের পর মুখ খুললেন। ‘‘জম্মুর হিন্দুরা মেহবুবা মুফতির দু’চোখের বিষ। মুসলিম যাযাবরেরা কাশ্মীর থেকে এসে যে কোনও জমি জবরদখল করতে পারেন। আমরা রা কাড়তে পারি না। কারণ উপজাতি কল্যাণ মন্ত্রকের নির্দেশ এমনই।’’
ঘটনা হল, জম্মুর ২৯ শতাংশ মুসলিমদের বড় অংশই বাকারওয়াল এবং গুজ্জর সম্প্রদায়ের। জোটসঙ্গী হয়েও বিজেপি এখন প্রচার চালিয়ে দাবি করছে, ‘‘মেহবুবা নিজের রাজনৈতিক চাপ কাটাতে জম্মুতে মুসলিমদের পাকা আস্তানা করতে চাইছেন। জম্মুর হিন্দুপ্রধান জনচরিত্র বদলানোর কৌশল চলছে!’’ এমনকী কাঠুয়া নিয়েও গেরুয়া শিবিরের একাংশ প্রচার করছে, বাকারওয়াল সম্প্রদায় নিজেরা অপরাধ করে হিন্দুদের উপর চাপিয়ে দেয়। এই ধর্ষণের ঘটনাও তার ব্যতিক্রম নয়!
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy