বাবার জন্য ন্যায়বিচার চেয়ে লড়াই করছেন আইনের ছাত্রী বছর পঁচিশের জিনাত।
সালটা ১৯৯৩। এক রাতে শ্রীনগরের ফতেহ কাদাল এলাকা ঘিরে ফেরেছিল সেনা। সে রাতে সেনা তুলে নিয়ে গিয়েছিল মুশতাক আহমেদ ভুট্টোকে। পরে বাড়ি ফিরেছিল তাঁর দেহ। তাঁর মেয়ে জিনাতের বয়স তখন এক। এখন বাবার জন্য ন্যায়বিচার চেয়ে লড়াই করছেন আইনের ছাত্রী বছর পঁচিশের জিনাত। দোষীদের শাস্তি চান তিনি।
বাবার কাহিনি মা মেহমুদার কাছে বার বার শুনেছেন জিনাত। ১৯৯৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ফতেহ কাদাল ঘিরে ফেলে সেনা। সে দিন অসুস্থ ছিলেন মুশতাক। সেনার ডাকে বাড়ির বাইরে বেরোতে হয় তাঁকে। অসুস্থ থাকায় হয়তো তাঁর মুখে আশঙ্কার ভাবও বেশি ফুটে উঠেছিল। মেহমুদা ভাবেন, তাই সেনার সন্দেহ বাড়ে। মুশতাককে নিয়ে যায় তারা।
পরের কয়েক দিন মুশতাকের খোঁজ মেলেনি। অনেক খোঁজ করার পরে মেহমুদার সঙ্গে যোগাযোগ হয় বাদামিবাগ ক্যান্টনমেন্টের এক সাফাইকর্মীর। সে মুশতাকের ঘড়ি সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। মেহমুদাকে ঘড়িটা দিয়ে সে জানায়, মুশতাককে বাদামিবাগেই বন্দি করে রাখা হয়েছে। তাঁকে বাড়িতে খবর দিতে বলেছে মুশতাক। ঘড়িটা পাঠিয়েছে যাতে মেহমুদা তাঁকে বিশ্বাস করেন।
জিনাত জানাচ্ছেন, ঘটনার আগেই তাঁর ঠাকুর্দা মারা গিয়েছিলেন। তাঁর মা বাদামিবাগ ক্যান্টনমেন্টে যান। সঙ্গে ছিলেন দাদু-দিদিমা। সেখানে মুশতাকের সঙ্গে দেখাও হয় তাঁদের। মুশতাক তাঁদের জানান, সেনা অত্যাচার করছে। কিছু দিন পরে তাঁকে কোটবালওয়াল জেলে পাঠানো হয়।
পরিবারের সদস্যেরা শরণাপন্ন হন রাজনীতিকদের। শেষ পর্যন্ত ন্যাশনাল কনফারেন্সের আলি মহম্মদ সাগর মুশতাকের মুক্তির আদেশ দেন। ১৯৯৩ সালের ২৯ এপ্রিল মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু বাড়িতে আসে তাঁর দেহ। জিনাতের দাবি, তাঁর বাবাকে খুন করেছে সেনারই একাংশ।
সাত বছর বয়স পর্যন্ত জিনাতকে বলা হত, তাঁর বাবা দিল্লিতে কাজ করেন। কোনও বিমান উড়ে গেলেই মা বলতেন, ‘‘ওই তোমার বাবা এসে গেলেন।’’ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে সত্যিটা আর চেপে রাখেননি কেউই। তখন থেকেই লড়াই করার কথা ভেবেছেন জিনাত। প্রথমে পুলিশ অফিসার হওয়ার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু উপত্যকায় বেশি মহিলা পুলিশ অফিসার নেই। সেকারণে আইনজীবী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ধর্মবিশ্বাসী জিনাত হিজাব পরেন। কাশ্মীরে হিজাব পরেও সওয়াল করা যায়।
২০০৯ সালে দিদিকে দিয়ে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে আর্জি পেশ করান জিনাত। সেনার কাছ থেকে বাবার মৃত্যু সংক্রান্ত রিপোর্ট চাওয়ার পাশাপাশি পরিবারের এক জনকে সরকারি চাকরি দেওয়ার আর্জিও জানানো হয়। জিনাতের কথায়, ‘‘মা সেলাইয়ের কাজ করতেন। তবে রোজগার হত না। দাদু-দিদিমা-ই দু’বোনকে মানুষ করেছেন। কিন্তু এখন তাঁরাও আর নেই। খুব কষ্টে আছি।’’
২০০৯ সালেই সেনার কাছ থেকে মুশতাক সম্পর্কে তথ্য চেয়েছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। কিন্তু সেনা জবাব দেয়নি। মুশতাক নির্দোষ প্রমাণিত না হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রশ্নই নেই। শ্রীনগরে মোতায়েন সেনার জনসংযোগ আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘অনেক পুরনো ঘটনা। পুলিশের রেকর্ডে আমাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। তাহলে কেন আমাদের দায়ী করা হচ্ছে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy