Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চিনের সঙ্গে ‘মউ’, জানাই নেই কেন্দ্রের

রাজ্যের তরফে যখন চিনকে সহযোগী দেশ হিসেবে ছাড়পত্র না দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছিল, তখনই বিদেশ মন্ত্রক সূত্র বলেছিল, এমন কোনও প্রস্তাব তাদের কাছে আসেনি।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪০
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গের দাবি, এ বার ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’-এ ‘পার্টনার কান্ট্রি’ (সহযোগী দেশ) হতে চেয়েছিল চিন। সে দেশের পাঁচটি সংস্থার সঙ্গে ‘মউ’ স্বাক্ষরের প্রস্তাবও ছিল। কিন্তু কেন্দ্রের আপত্তিতে সে সবই আটকে গিয়েছে। কিন্তু রাজ্যের সেই অভিযোগ উড়িয়ে বিদেশ মন্ত্রক রাজ্যসভায় জানিয়ে দিল, এমন কোনও প্রস্তাব কস্মিনকালেও তাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি!

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, কে ঠিক বলছে?

রাজ্যের তরফে যখন চিনকে সহযোগী দেশ হিসেবে ছাড়পত্র না দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছিল, তখনই বিদেশ মন্ত্রক সূত্র বলেছিল, এমন কোনও প্রস্তাব তাদের কাছে আসেনি। আর ইলেকট্রনিক্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, পরিকাঠামো নির্মাণের মতো ক্ষেত্রে চিনা সংস্থার সঙ্গে মউ স্বাক্ষরের অনুমতি না দেওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়েছিল, রাজ্য সরকার দেরি করে প্রস্তাবগুলি পাঠিয়েছে। যে হেতু চিনের বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর, বিশেষ করে ডোকলাম-কাণ্ডের পরে, তাই চিনা সংস্থাগুলির আগ্রহের ‘নেপথ্য’ কারণ যাচাই না-করে অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে আইন-সহ বিভিন্ন মন্ত্রক এবং এজেন্সির মতামত নিতে সময় লাগবে। যদিও রাজ্যের তরফে দেরিতে প্রস্তাব পাঠানোর কথা অস্বীকার করা হয়েছিল। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে এখন বলা হচ্ছে, ‘মউ’-এর ব্যাপারে রাজ্য খসড়া প্রস্তাব দিলে কেন্দ্রের অনুমোদনের পরে তা চূড়ান্ত হয়। কিন্তু বিষয়টি খসড়ার স্তর থেকে অগ্রসর হয়নি।

সম্প্রতি এ ব্যাপারে রাজ্যসভায় প্রশ্ন পেশ করেন সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানতে চান, ২০১৮ সালের বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন চিনা সংস্থার পাঁচটি মউ সই করার ব্যাপারে বিদেশ মন্ত্রক অনুমতি দেয়নি— এই তথ্য কি ঠিক? যদি ঠিক হয়, তা হলে তার কারণ কী? দু’দিন আগে এই প্রশ্নের লিখিত জবাবে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ বলেছেন, ‘এই ধরনের কোনও প্রস্তাব মন্ত্রকের নজরে আসেনি।’ ফলে দ্বিতীয় প্রশ্নটির অবকাশই নেই।

কেন্দ্রের এহেন জবাবের ব্যাখ্যা দিয়ে কূটনৈতিক মহল বলছে, চিন যে মউগুলি করতে চাইছে, সেগুলি পরোক্ষ ভাবে তাদের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পকেই পুষ্ট করবে। ইউরেশীয় দেশগুলির মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই চিনা উদ্যোগের ঘোরতর বিরোধী ভারত। কিন্তু ডোকলাম পরবর্তী পরিস্থিতিতে যে হেতু চিনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছুটা সমঝে পা ফেলা হচ্ছে, তাই রাজ্যের প্রস্তাব সম্পর্কেই অজ্ঞতা প্রকাশ করে বিষয়টি নিয়ে আর হইচই করতে এবং বেজিংকে নেতিবাচক বার্তা দিতে চাইছে না নয়াদিল্লি। সেই কারণেই রাজ্যের শিল্প সম্মেলনে চিনের সহয‌োগী দেশ হওয়ার প্রস্তাব সম্পর্কে ঋতব্রতের প্রশ্নের উত্তরেও বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ‘এই ধরনের কোনও প্রস্তাবের কথা মন্ত্রক শোনেনি’ বলে জানিয়েছেন বলে মত কূটনৈতিক মহলের।

কিন্তু এর ফলে কি সংসদে অধিকার ভঙ্গের (প্রিভিলেজ) আওতায় পড়বেন না বিদেশ প্রতিমন্ত্রী? তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা এ দিন বলেছেন, ‘‘বিদেশ প্রতিমন্ত্রী সংসদে যে উত্তরটা দিয়েছেন, তার ফলে মোদী সরকারকে ভবিষ্যতে বড় বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হবে।’’

কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, বাস্তব এবং রাজ্যের দাবির মধ্যে একটু ফাঁক রয়েছে। রাজ্য প্রস্তাব পাঠিয়েছিল ঠিকই কিন্তু সেটি ছিল খসড়ামাত্র। কেন্দ্র সেটি দেখে প্রয়োজনীয় পরিমার্জন করার পরই চূড়ান্ত প্রস্তাব পাঠানোর প্রশ্ন উঠত। কিন্তু কেন্দ্র সেই খসড়ার স্তর থেকে আর অগ্রসর হয়নি। মন্ত্রী সংসদে সে কথাই বলেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE