Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নৌকা চালিয়ে স্কুলে যায় হাওরের পড়ুয়ারা

স্কুলের পাশে নৌকা নোঙর করে ক্লাসে ঢোকে বছর আট-দশের পড়ুয়ারা! অসমের কাছাড় জেলার কাটিগড়ার হাওর অঞ্চলের (জলবেষ্টিত নীচু এলাকা) ছবি এমনই। জহাঙ্গির হোসেন, কনজুদ আলম, জামিল আহমেদের মতো ছাত্ররা নৌকা নিয়ে যায় স্কুলে।

জলে ভেসে: স্কুলের পথে পড়ুয়ারা। অসমের কাটিগড়ায়।  —নিজস্ব চিত্র।

জলে ভেসে: স্কুলের পথে পড়ুয়ারা। অসমের কাটিগড়ায়।  —নিজস্ব চিত্র।

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৪০
Share: Save:

স্কুলের পাশে নৌকা নোঙর করে ক্লাসে ঢোকে বছর আট-দশের পড়ুয়ারা!

অসমের কাছাড় জেলার কাটিগড়ার হাওর অঞ্চলের (জলবেষ্টিত নীচু এলাকা) ছবি এমনই। জহাঙ্গির হোসেন, কনজুদ আলম, জামিল আহমেদের মতো ছাত্ররা নৌকা নিয়ে যায় স্কুলে। যাদের নৌকা নেই, তাদেরও সঙ্গে তুলে নেয়। বছরের কয়েক মাস নৌকাই সেখানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। শিক্ষকরাও স্কুলে যান নৌকাতেই।

হাওরের অনেক স্কুলে একটিই ঘর। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়ারা বসে পাশাপাশি। ছুটি হলে প্রতিযোগিতা চলে, কে কার বৈঠা কাঁধে নৌকোয় পা রাখবে।

আরও পড়ুন: বিশ্রাম কমিয়ে ৫১ ট্রেন বাড়াবে রেলমন্ত্রক

সিংজুরি নদী এঁকেবেকে গিয়েছে কাটিগড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা দিয়ে। ডান-বাঁয়ে অসংখ্য বিল। পুরো এলাকা এতটাই নীচু যে বর্ষার মরসুমে এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নদী-বিল-রাস্তা-জমি একাকার হয়ে যায়। স্কুলগুলি হয়ে ওঠে দ্বীপের মতো। অনেক পড়ুয়া ৩০-৪০ মিনিট বৈঠা ঠেলে পৌঁছয় স্কুলে।

কয়েকটি স্কুল মাসদুয়েক থাকে জলের নীচেই। মোহনপুর প্রথম (নিউ) এলপি স্কুলে এখনও ক্লাসঘরে জল-কাদা। ছেলেমেয়েদের দাঁড়ানোর উপায় নেই। তারই মধ্যে শিক্ষকরা প্রার্থনা করান, শিক্ষণীয় কথা বলেন। জলে দাঁড়িয়ে ছাত্ররা রুটিন-সঙ্কল্প করে— ‘আমি সর্বদা আমার স্কুলকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখব।’ মুসিউর রহমান এলপি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আবদুল্লা জানান, শুকনোর তুলনায় জলে ডোবা দিনই ভাল। নৌকা একেবারে স্কুলপ্রাঙ্গণে ঠেকে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে জল নামতে শুরু করে। তখন না চলে নৌকা, না শুকোয় রাস্তা। হাঁটু-কাদায় পা ডুবিয়ে স্কুলে আসা কষ্টকর।

এ সব কারণে হাওর অঞ্চলের ৩০টি স্কুলে বছরে ৬ মাস ক্লাস হয়, তা জানান ব্লকের শিক্ষা অফিসার মনোজকুমার কৈরি। তাঁর কথায়, ‘‘কী করা যাবে! প্রকৃতির বিরুদ্ধে কত লড়াই করবো।’’

চতুর্থ শ্রেণির জামিল আহমেদের মন্তব্য, ‘‘জল তো কী হয়েছে! আমাদের দুটো নৌকা। বাবার একটা, ভাইবোনদের জন্য আরেকটা। তা নিয়ে স্কুলে আসি। নৌকা চালাতে কীসের ভয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Water Logged Assam Boating School Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE