এখনও নামেনি জল। তাই জল ঠেলেই মা ও মেয়ে নতুন আস্তানার খোঁজে। সোমবার শ্রীনগরে।
জম্মু-কাশ্মীরের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে আজ একহাত নিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি আর এম লোঢার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আজ স্পষ্টই জানিয়েছে, ত্রাণ সরবরাহ, উদ্ধারকাজ আর পুনর্বাসনের গোটা প্রক্রিয়াটাই শ্রীনগর শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ। রাজ্যের অন্য জেলাগুলির জলবন্দি মানুষগুলো এখনও অবহেলায় রয়েছে বলেও আজ মন্তব্য করেছে শীর্ষ আদালত। আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ, গোটা রাজ্যে সব মানুষের কাছে যাতে ত্রাণ আর সাহায্য পৌঁছয়, অবিলম্বে তার ব্যবস্থা করুক কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার।
প্রধান বিচারপতি আজ বলেছেন, “সব গুরুত্বই শ্রীনগর পাচ্ছে। অন্য জেলায় সেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। ওই সব এলাকার অবস্থাও শ্রীনগরের মতোই খারাপ। কোনও কোনও এলাকার অবস্থা আরও ভয়াবহ। আমার মনে হয় না, অন্য জেলাগুলি শ্রীনগরের মতোই গুরুত্ব পাচ্ছে।” অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতাগির পেশ করা একটি রিপোর্টের ভিত্তিতেই আজ এ ভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।
দিন কয়েক আগেই জম্মু-কাশ্মীরের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটি রিপোর্ট চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। আজ সরকারের তরফে সে বিষয়ে একটি রিপোর্ট পেশও করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট তার প্রেক্ষিতে জানায়, সবার আগে বন্যাকবলিত সব মানুষের জন্য জল, খাদ্য আর ওষুধের ব্যবস্থা করুক রাজ্য সরকার। তবে বন্যা মোকাবিলা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের খানিকটা প্রশংসাও আজ করেছে আদালত। আদালতের পর্যবেক্ষণ, কোর্টের নির্দেশ ছাড়াই বন্যাকবলিতদের জন্য অনেক কিছু করেছে কেন্দ্র। কিন্তু পুনর্বাসনের দিকটা আরও ভাল ভাবে হওয়া দরকার বলে মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের।
ত্রাণ শিবিরে জামা-কাপড়ের স্তূপ থেকে জামা খুঁজে নিচ্ছে দুই খুদে। সোমবার শ্রীনগরে।
এ দিকে, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি। জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়ক ১২ দিন ধরে বন্ধ থাকলেও আজ থেকে রাজ্যের কিছু এলাকায় রেল পরিষেবা চালু হয়েছে। রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, আজ রাস্তা সারিয়ে শ্রীনগর ও বারামুলার মধ্যে ট্রেন চালানো সম্ভব হয়েছে। শ্রীনগর থেকে নয়াদিল্লি হয়ে ইনদওর পর্যন্ত ট্রেন চালিয়ে আটকে পড়া বেশ কিছু পর্যটককে সরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলে রেল সূত্রের খবর। যাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে খাবার আর জল বিতরণের ব্যবস্থা করেছে বিভিন্ন গুরুদ্বার ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তবে রেলপথ আংশিক খুললেও জাতীয় সড়ক বন্ধ থাকার ফল রাজ্যবাসী ভাল মতোই টের পাচ্ছেন। বাজারে সব্জির আকাল। গ্যাসও অমিল। যত দ্রুত সম্ভব রাস্তা সারিয়ে সড়ক খোলার চেষ্টা করছে সেনা।
এর মধ্যেই আজ প্রশাসনিক সূত্রে জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত দু’লাখ ২৬ হাজার জলবন্দি মানুষকে উদ্ধার করেছেন সেনা ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা। রাজ্য সরকার আজই বন্যা দুর্গতদের মধ্যে ৩৩ হাজার কম্বল বিতরণ করেছে। বন্যা-পরবর্তী রোগের প্রকোপ কমাতেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজ্য সরকারের এক মুখপাত্র। শ্রীনগর ও জম্মু মিলিয়ে মোট ১৯টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীরের পাশাপাশি পড়শি দেশ পাকিস্তানেও প্রবল বন্যায় প্রায় তিনশো জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সে দেশের প্রায় কুড়ি লক্ষ মানুষ।
ছবি: রয়টার্স
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy