Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

গণতন্ত্রই কি বিপন্ন হতে পারে আধারে

আধার-তথ্য ফাঁসের আশঙ্কা, আধারের মাধ্যমে ব্যক্তিপরিসরে দখলদারির অভিযোগ নিয়ে মোট ২৭টি আবেদনের সূত্রে এই মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে।

সংবাদ সংস্থা 
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৮ ০৫:১২
Share: Save:

হয়েছে কি না সেই প্রশ্ন আলাদা। কিন্তু আধার তথ্য কোনও ভাবে বেহাত হলে, দেশের গণতন্ত্রকে কি বাঁচানো যাবে? প্রশ্নটি তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট।

এ পর্যন্ত যত বারই আধার তথ্য ফাঁস হওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তত বারই আধার কর্তৃপক্ষ (ইউআইডিএআই) জোর গলায় দাবি করেছেন, সব তথ্য সুরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু ফেসবুক থেকে তথ্য চুরি করে বিলেতের ব্রেক্সিট বা আমেরিকার ভোটে প্রভাব ফেলার অভিযোগ নাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বকে। ভারতেরও ৬ লক্ষের বেশি মানুষের তথ্য ফেসবুক থেকে চুরি গিয়েছে বলে অভিযোগ। এই পরিপ্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালত গত সপ্তাহে ১৩০ কোটি ভারতীয়ের তথ্য অপব্যবহার হতে পারে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে ইউআইডিএআই জবাবে জানিয়েছিল, আধার তথ্য কোনও ‘পরমাণু বোমা’ নয়। কিন্তু আশঙ্কাটি যে তাতে দূর হচ্ছে না, সেটাই আজ স্পষ্ট করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ওই প্রশ্ন।

আধার-তথ্য ফাঁসের আশঙ্কা, আধারের মাধ্যমে ব্যক্তিপরিসরে দখলদারির অভিযোগ নিয়ে মোট ২৭টি আবেদনের সূত্রে এই মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে। তারই শুনানিতে আজ আধার কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের তথ্য সুরক্ষিত রাখার পদ্ধতি জানতে চাওয়া হয়। বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘আসল চিন্তাটি হল, (মানুষের) তথ্য নির্বাচনের ফলকে প্রভাবিত করতে পারে।... আধারের তথ্য যদি ভোটে প্রভাব ফেলার জন্য ব্যবহার করা হয়, তবে কি দেশের গণতন্ত্র সুরক্ষিত থাকবে!’’

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার মতো সংস্থা তথ্য হাতিয়ে আমেরিকার ভোটে প্রভাব ফেলেছিল বলে স্বীকার করে নিয়েছেন ফেসবুকের কর্তা মার্ক জ়াকারবার্গ। এটাও এখন গোপন তথ্য নয় যে ব্রিটিশ সংস্থা কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ভারতীয় শাখা দীর্ঘদিন ধরেই ভারতে সক্রিয়। কারা এদের সাহায্য নিয়েছে, তা নিয়ে গত মাসে ধুন্ধুমার তরজা বেধেছিল দেশের প্রধান দুই দল বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে। নাম জড়ায় জেডিএসেরও। সরাসরি উল্লেখ না করেও সুপ্রিম কোর্ট আজ বাস্তব পরিস্থিতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয় আধার কর্তৃপক্ষকে। বেঞ্চের বক্তব্য, ‘‘এটা ঘটনা যে আমরা একটা আইনকে সামনে রাখতে চলেছি, যা আমাদের ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করবে। ফলে বাস্তবটা ঠিক কী, তা নিয়ে কোনও ধোঁয়াশা রাখা যেতে পারে না। কারণ সমস্যাটাকে নেহাতই কিছু উপসর্গ বলে ভাবার কারণ নেই। সমস্যাটা পুরোপুরি বাস্তব।’’ আধার কর্তৃপক্ষের কাছে তাই সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, ‘‘তথ্য-সুরক্ষার আইন যদি না থাকে, সেই পরিস্থিতিতেও তথ্য সুরক্ষিত রাখার কী ব্যবস্থা আপনাদের হাতে রয়েছে?’’

ইউআইডিএআই-এর বক্তব্য, গত বছর প্রথম বার তথ্য ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর থেকেই আধারের বিরুদ্ধে প্রবল চাপ তৈরি করা হচ্ছে। এর পিছনে একটা ষড়যন্ত্রও দেখতে পাচ্ছে তারা। তথ্য ফাঁসের সম্ভাবনা উড়িয়ে আধার কর্তৃপক্ষের আইনজীবী রাকেশে দ্বিবেদী বলেন, ‘‘এক জন আবেদনকারী এমন দাবিও করেছেন যে আধারের চেয়ে স্মার্ট কার্ড বেশি উন্নত। তাঁরা স্মার্টকার্ড চান এই কারণে যে, গুগলের মতো সংস্থা চায় না আধার সফল হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE