Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪
প্রশ্নে প্রাক্তন স্পিকারের ভূমিকা

মীরা বলতেই দিতেন না, খোঁচা সুষমার

রামনাথ কোবিন্দের নাম ঘোষণার আগে থেকেই বিরোধী শিবিরে জোর আলোচনা ছিল, বিজেপি সুষমাকে প্রার্থী করলে সনিয়া বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে বিরোধিতা করা মুশকিল হবে। রামনাথের নাম ঘোষণার পর মমতা তো খোলাখুলিই সুষমার নাম করেন।

সুদিন: ২০১১ সালে মীরা তখন স্পিকার। লোকসভার বিরোধী নেত্রী সুষমার সঙ্গে। —ফাইল চিত্র।

সুদিন: ২০১১ সালে মীরা তখন স্পিকার। লোকসভার বিরোধী নেত্রী সুষমার সঙ্গে। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৭ ০৫:২৪
Share: Save:

মীরা কুমারের নাম রাষ্ট্রপতির প্রার্থী ঘোষণা করেই সনিয়া গাঁধী বলেছিলেন, প্রতিভা পাটিলের পর মীরা কুমার— এই নিয়ে দ্বিতীয় বার কোনও মহিলাকে প্রার্থী করা হল রাষ্ট্রপতি পদের জন্য। এ বারে সেই মহিলা প্রার্থীকে মোকাবিলা করতে বিজেপি আসরে নামাল এক মহিলাকেই। দলের বিজেপির ওজনদার নেত্রী সুষমা স্বরাজকে। বিরোধী শিবিরেও যাঁর যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

রামনাথ কোবিন্দের নাম ঘোষণার আগে থেকেই বিরোধী শিবিরে জোর আলোচনা ছিল, বিজেপি সুষমাকে প্রার্থী করলে সনিয়া বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে বিরোধিতা করা মুশকিল হবে। রামনাথের নাম ঘোষণার পর মমতা তো খোলাখুলিই সুষমার নাম করেন। এ হেন সুষমা আজ বেনজির ভাবে নিজের টুইটে তুলে আনেন চার বছর আগের একটি ভিডিও। তাতে দেখা যাচ্ছে, লোকসভার বিরোধী নেত্রী হিসেবে সুষমা তৎকালীন ইউপিএ সরকারের দুর্নীতি নিয়ে সংসদে বলছেন। আর তৎকালীন স্পিকার মীরা কুমার তাঁকে বাধা দিচ্ছেন। সুষমা টুইটে লেখেন, ছ’মিনিটের বক্তৃতায় স্পিকার ৬০ বার বাধা দিয়েছেন। স্পিকার মীরা কুমার লোকসভার বিরোধী দলনেত্রীর প্রতি এই রকম আচরণ করতেন!

মীরাকে বিরোধী শিবির প্রার্থী করার পরেই বিজেপি নেতৃত্ব স্থির করেন, তাঁকে নানা ভাবে বদনাম করা হবে। দলের নেতারা রাজনৈতিক আক্রমণ করবেন, আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে মীরার দুর্নীতির প্রসঙ্গ। সেই প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গিয়েছে। দলিত নেত্রী মীরার কাছে কী করে ঘোষিত ৩৬ কোটি টাকার সম্পত্তি এল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এরই মধ্যে রাজনৈতিক আক্রমণের জন্য বিজেপি নেতৃত্ব বেছে নিলেন তাঁদের মহিলা নেত্রী সুষমাকে। যিনি এক সময় সনিয়ার বিরুদ্ধে লড়ার সময়ে নেমে মাথা ন্যাড়া করারও হুমকি দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: রথ-অম্বেডকর ছুঁয়ে মোদী ইদেও

বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘আসলে রামনাথ কোবিন্দের পর মীরাকে প্রার্থী করে লড়াইটা দলিত বনাম দলিতে পর্যবসিত হয়েছে। বিরোধী শিবিরকে যতটা ছত্রভঙ্গ করা সম্ভব হবে ভাবা হয়েছিল, তা হয়নি। মীরাকে সামনে রেখে কংগ্রেস ও অন্য বিরোধীরা যাতে দলিত-তাস খেলতে না পারে, সেটাই বিজেপির লক্ষ্য। এই পরিস্থিতিতে অন্য নেতার পক্ষে যেটি স্বচ্ছন্দ ভাবে বলা সম্ভব নয়, সেটি মহিলা হিসেবে সুষমা বলতে পারেন। কারণ, বিরোধী শিবিরেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।’’

মীরা অবশ্য এ সবের পরোয়া না করে আজ আর একটি বিবৃতি জারি করেছেন। তাতে দলিত-তাসটি খেলে মীরা ‘বিবেক ভোট’ চেয়েছেন শাসক গোষ্ঠীর কাছেও। মীরা বলেন, ‘‘আমি জাতি ব্যবস্থায় জর্জরিত সমাজের মুক্তির লড়াইয়ে যুক্ত। আমার ভাবনাও এই লড়াইয়ে প্রভাবিত। শোষিত শ্রেণির অধিকারের জন্য সব দল মতভেদ ভুলে এক হয়ে যায়। রাষ্ট্রপতি পদ আইন তৈরির শেষ অধ্যায়। তাই কোনও সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ সেখানে কাজ করতে পারে না।’’ এর পরেই মীরার আবেদন, ইতিহাস তৈরির এই মুহূর্তে সকলের ‘অন্তরাত্মা’র আওয়াজ শোনা উচিত। মীরার প্রতিদ্বন্দ্বী রামনাথ কোবিন্দ আজ থেকেই রাজ্য সফর শুরু করেছেন। লখনউয়ে বিধায়ক-সাংসদদের সমাবেশে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘‘রামনাথের মনোনয়ন সামাজিক ন্যায়ের জয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE