নাগরিকত্ব নিয়ে বক্তব্য রাখছেন সুস্মিতা দেব। সাংসদের পাশে দুই বিধায়ক অমরচাঁদ জৈন ও মিহিরকান্তি সোম (ডানদিকে)। অন্য দিকে কমিশনার আনোয়ারউদ্দিন চৌধুরী, জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন ও অতিরিক্ত জেলাশাসক (নির্বাচন) জিতু রায়। বৃহস্পতিবার শিলচরে। ছবি: স্বপন রায়।
২০১৪ সালের ভোটার তালিকায় থাকা সকলের নাম এনআরসি-তে না তুললে ওই তালিকা তৈরি ও সংশোধন প্রক্রিয়াকেই চ্যালেঞ্জ করা হয়— এমনই মন্তব্য করলেন সুস্মিতা দেব।
আজ ভোটার তালিকা সংশোধনী সংক্রান্ত সভায় কংগ্রেস সাংসদের এমন বক্তব্যের জবাব দিতে পারলেন না কেউ-ই।
বরাক উপত্যকার কমিশনার আনোয়ারউদ্দিন চৌধুরী পৌরোহিত্য করলেও তিনি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। কাছাড়ের জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন ও নির্বাচন শাখার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক জিতু দাস কিছু বলতে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়েন। সাংসদের জেরায় দুই অফিসারই বলতে বাধ্য হন— ভোটার তালিকায় নাম তোলার সময় আবেদনকারী বা তাঁর পূর্বপুরুষ ১৯৭১ সালের আগে থেকে অসমে বসবাস করছেন কি না, তা পরীক্ষা করা হয়।
সে জায়গাতেই সুস্মিতাদেবীর প্রশ্ন, তা হলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে এনআরসি-র জন্য নথিপত্র পরীক্ষার যৌক্তিকতা কোথায়? তবে কি ভোটার তালিকায় নাম তোলা বা সংশোধনের সময় অফিসাররা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন না? নাকি সন্দেহভাজন বলে কয়েক লক্ষ মানুষের ভোটাধিকার স্থগিত করার পরও ভোটার তালিকায় বিদেশিরা থেকে গিয়েছেন?
নিজের সরকারের অফিসারদের বাঁচাতে সভায় উপস্থিত বিজেপির দুই বিধায়ক অমরচাঁদ জৈন ও মিহিরকান্তি সোম চেষ্টা করলেও পেরে উঠেননি। তাঁরা শুধু এনআরসি আজকের বিষয় নয় বলে প্রসঙ্গ বদলানোর পরামর্শ দেন। মিহিরবাবু বলেন, ‘‘এনআরসি-র শর্তগুলি অনেক আগে নানা প্রক্রিয়া মেনে চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ এ সব বলা অর্থহীন।’’
বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক নিত্যভূষণ দে নাগরিকত্বের কথা টেনে সাংসদকে আরও কথা বলারই সুযোগ করে দেন। তিনি বলেন, ‘‘ভোটার তালিকায় ১৯৭১ সালকে ভিত্তি ধরা হয়। আমরা চাই এর পরও যাঁরা নির্যাতনের শিকার হয়ে এসেছেন, তাদেরও নাগরিকত্ব দিতে হবে।’’
সেই সূত্রেই সুস্মিতা দেবীর প্রশ্ন— কী ভাবে দেওয়া হবে নাগরিকত্ব, সংশোধনী বিলে? বিজেপির নেতা-বিধায়কদের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের যে কোনও মাপের নেতাকে ডেকে আনুন, আমি প্রকাশ্য বিতর্কে প্রস্তুত। এই বিলে কোথাও নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা লেখা নেই। শুধু আবেদন করতে পারেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।’’
পরে বিজেপি নেতারা প্রসঙ্গ বদলেরই চেষ্টা করেন। তাঁরা ভোটার তালিকায় নামের বানান ভুলের কথা জোর দিয়ে উল্লেখ করেন। বিধায়ক অমরচাঁদ জৈনের স্থায়ী ঠিকানাই বদলে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। অমরবাবু জানান, তিনি আসলে মোহনপুর প্রথম খণ্ড এলাকার বাসিন্দা। কিন্তু ভোটার পরিচয় পত্রে লেখা হয়েছে মোহনপুর দ্বিতীয় খণ্ড। জটিলতা এড়ানোর জন্য এ বার মনোনয়ন পত্র দাখিলের সময় তাঁকে দ্বিতীয় খণ্ডই উল্লেখ করতে হয়।
একাংশ বিএলও ঠিকঠাক কাজ করেন না বলে অভিযোগ জানান কাটিগড়ার বিধায়ক অমরবাবু। উধারবন্দের বিধায়ক মিহিরকান্তি সোম আরেক ধাপ এগিয়ে বলেন, ‘‘বিএলও মহিলারা কোনও কাজই করেন না। কাজ করেন তাঁদের স্বামীরা। ফলে বিএলও-ভোটার সম্পর্কই গড়ে ওঠে না। বিএলও-রা তাই কোনও কিছু বলতেও পারেন না।’’
ভোটার তালিকা সংশোধনী প্রক্রিয়া নিয়ে আজ শিলচরে জেলা প্রশাসনের দু’টি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সাংসদ, বিধায়ক এবং রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি। এ ছাড়া কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার আজ শহরের বিশিষ্টজনদের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলেন। উভয় সভায় কমিশনার আনোয়ারউদ্দিন চৌধুরী জানান, খসড়া ভোটার তালিকা প্রত্যেক বিএলও-র কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আছে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেও। যে কেউ তা দেখতে চাইতে পারেন। কোনও ধরনের ভুল থাকলে বা কারও নাম বাদ পড়লে নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে পারেন। নতুন ভোটাররাও এখন আবেদন করে নাম তুলতে পারবেন। আবেদন পত্র বা ফর্মও ভোটকেন্দ্র ও বিএলও-দের কাছে পাওয়া যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy