Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

স্বপ্নের প্রকল্প থেকে সরলেন শীর্ষ আমলা

আমলাতন্ত্র নিয়ে সরকারের অন্দরমহলে টানাপড়েন চলছিলই। তার মধ্যেই নতুন মোড়। এ বার নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের প্রকল্প ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর দায়িত্বে থাকা শীর্ষ আমলাই স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে নিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৫৫
Share: Save:

আমলাতন্ত্র নিয়ে সরকারের অন্দরমহলে টানাপড়েন চলছিলই। তার মধ্যেই নতুন মোড়। এ বার নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের প্রকল্প ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর দায়িত্বে থাকা শীর্ষ আমলাই স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে নিলেন।

দু’দিন আগেই স্বরাষ্ট্রসচিবের পদ থেকে স্বেচ্ছাাবসর নিয়েছেন এল সি গয়াল। সেই বিতর্কের রেশ কাটার আগেই আর এক উচ্চপদস্থ আইএএস বিজয়লক্ষ্মী জোশী স্বেচ্ছাবসর নিলেন। তাঁর অবসরের আরও তিন বছর বাকি ছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের পানীয় জল ও নিকাশি দফতরের সচিব হিসেবে বিজয়লক্ষ্মী নরেন্দ্র মোদীর মস্তিষ্কপ্রসূত ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর প্রধান দায়িত্বে ছিলেন। প্রকল্পের এক বছরও পূরণ হয়নি, তার আগেই এই সিদ্ধান্ত ওই শীর্ষ আমলার।

অভিযোগ, স্বচ্ছ ভারত অভিযান-এর কাজে অখুশি প্রধানমন্ত্রী। সেই কারণেই চাপের মুখে সরে যেতে হল বিজয়লক্ষ্মীকে। কংগ্রেসের অভিযোগ, মোদী সরকারের মত না মানলেই আমলাদের সরে যেতে হবে। এতে মোদী সরকারের দাবি, চাপ নয়, ব্যক্তিগত কারণেই স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন বিজয়লক্ষ্মী। পানীয় জল ও নিকাশি দফতরটি গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চৌধুরী বীরেন্দ্র সিংহ এ দিন বলেন, ‘‘দেড়-দু’মাস আগে উনি নিজেই পারিবারিক সমস্যার কারণে সরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।’’

তাৎপর্যপূর্ণ হল, দায়িত্ব থেকে সরে গেলেন যিনি, সেই বিজয়লক্ষ্মী জোশী গুজরাত ক্যাডারের আইএএস। মোদী জমানায় গুজরাত ক্যাডারের অফিসারদেরই রমরমা। যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে, বিশেষ করে যে সব প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহ রয়েছে, সেগুলির দায়িত্বে এই অফিসারদেরই বসানো হচ্ছে। তবে গুজরাত ক্যাডারের হয়েও সেই তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন বিজয়লক্ষ্মী। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের মন্তব্য, ‘‘উনিও হয়তো গুজরাত ক্যাডারের বাকি অফিসারদের মতো উঁচুতে পৌঁছতে চাইছিলেন। তা না হওয়াতেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।’’

কারণ যা-ই হোক, কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীবর্গ দফতরের তথ্য বলছে, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে অন্তত ৫৬ জন অফিসার কেন্দ্রের ডেপুটেশনের মেয়াদ ফুরোনোর আগেই নিজের রাজ্যে ফিরে গিয়েছেন। যা দেখিয়ে কংগ্রেসের নেতা আর পি এন সিংহর অভিযোগ, ‘‘মোদী সরকারের কথা মতো কাজ না করলেই আমলাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। তাঁরা সরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।’’ আপ-নেতা আশুতোষের কটাক্ষ, ‘‘আসলে মোদী সরকারের অন্দরমহলেই স্বচ্ছতা অভিযান চলছে।’’

বিজয়লক্ষ্মী জোশী এর আগে ছিলেন পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রকে। তাঁকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিকাশি দফতরে বদলি করা হয়। এর পর ২ অক্টোবর মহাত্মা গাঁধীর জন্মদিবসে ঢাকঢোল পিটিয়ে স্বচ্ছ ভারত অভিযান শুরু করেন মোদী। বিজয়লক্ষ্মীর হাতে পুরো প্রকল্পের দায়িত্ব চলে আসে। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, স্বচ্ছ ভারত অভিযানের যতখানি ঢাক পেটানো হয়েছিল, বাস্তবে তার তেমন কোনও ফল চোখে পড়েনি। প্রধানমন্ত্রী দফতর এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, বিজয়লক্ষ্মীর কাজে তাঁর কোনও অসন্তোষ ছিল না।

বিজয়লক্ষ্মীর স্বামী জি পি জোশীও গুজরাত ক্যাডারের আইএএস ছিলেন। সাত বছর আগে তিনিও রাজ্যের অর্থ দফতরের সচিব হিসেবে কর্মরত অবস্থায় স্বেচ্ছাবসর নেন। গুজরাতের কংগ্রেসের নেতাদের বক্তব্য, জোশীর মতো অনেক যোগ্য অফিসার মোদী জমানায় আগাম অবসর নিয়েছেন। রাজ্য সরকারের বহু আমলা ২০০১-এ মোদী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে আগাম অবসর নেন। অস্বস্তিতে পড়ে সরকার অনেককে পদত্যাগপত্র ফেরত নিতেও বাধ্য করেছিল। তার পরেও আগাম অবসরের পালা ফুরোয়নি। এ বার কেন্দ্রে মোদী জমানায় তারই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE