এত দিন গোটা ব্যাপারটাই ছিল লুকিয়ে-চুরিয়ে। চোরাগোপ্তা। এ বার হচ্ছে রীতিমতো সরকারি ভাবে!
এ যাবৎ ভারতীয় সেনার নজর এড়িয়ে সীমান্ত পেরিয়ে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে উপত্যকার যুবকদের প্রশিক্ষণ নিতে পাঠাত জঙ্গি সংগঠনগুলি। কিন্তু এ বার তাতে পড়ল সরকারি সিলমোহর। রীতিমতো পাকিস্তানের বৈধ ভিসা নিয়ে কাশ্মীরের যুবকেরা সে দেশে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। সম্প্রতি হিজবুল মুজাহিদিনের তিন জঙ্গিকে জেরা করে এ নিয়ে তথ্য পেয়েছে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। নাশকতার পাশাপাশি এই জঙ্গিদের অন্যতম দায়িত্ব ছিল, কাশ্মীরের যুবকদের মগজধোলাই করে পাকিস্তানে পাঠানো।
অমরনাথ যাত্রীদের উপর হামলার পর থেকেই গোটা উপত্যকা জুড়ে ধরপাকড় শুরু করেছে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। দিন দু’য়েক আগে উত্তর কাশ্মীরের বারামুলা থেকে গ্রেফতার হয় হিজবুলের তিন জঙ্গি। ধৃতদের নাম হল আনসারুল্লা, আব্দুল রশিদ বাট, মেহরাজুদ্দিন কাক। পুলিশের দাবি, তারা সকলে বারামুলা জেলারই বাসিন্দা। ওই জেলার এসএসপি ইমতিয়াজ হুসেন মির জানিয়েছেন, ‘‘হিজবুল কম্যান্ডার পারভেজ ওয়ানি ওরফে মুবাশিরের অধীনে উত্তর কাশ্মীরে সক্রিয় ছিল ওই জঙ্গিরা। নাশকতা ছাড়াও এদের কাজ ছিল মূলত কাশ্মীরের যুবকদের বৈধ ভিসার মাধ্যমে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো। একই সঙ্গে অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলিকে অস্ত্র-গোলাবারুদ জুগিয়ে সাহায্য করত এরা।’’
আরও পড়ুন: মসুলের জেলে ৩৯ ভারতীয়, ধারণা সুষমার
তদন্তে দেখা যায় তিন জনের মধ্যে আব্দুল রশিদ বাট বছরের শুরুতে পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য নয়াদিল্লির পাকিস্তানি হাইকমিশনে আবেদন জানায়। তার হয়ে সুপারিশ করে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনও। গত মে মাসে রশিদের ভিসা মঞ্জুর করে পাকিস্তান। সেই মাসেই ইসলামাবাদে উড়ে যায় সে। সেখান থেকে পাক- অধিকৃত কাশ্মীরে হিজবুল জঙ্গি গোষ্ঠীর খালিদ বিন ওয়ালিদ শিবিরে অস্ত্র চালানোর পাশাপাশি বিস্ফোরকের ব্যবহার শিখে ফের বৈধ ভাবেই ভারতে ফিরে আসে রশিদ। শুরু করে জঙ্গি কার্যকলাপ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা মুবাশিরের নেতৃত্বে নিরাপত্তা বাহিনীর শিবিরে হামলার ছক কষছিল। ধৃত রশিদের কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও এক লক্ষ টাকা নগদ উদ্ধার হয়েছে।
এ দিকে সাত দিন কেটে যাওয়ার পরেও অমরনাথ হামলার মূল মাথা আবু ইসমাইল বা তার তিন সঙ্গীকে এখনও গ্রেফতার করতে ব্যর্থ নিরাপত্তা বাহিনী। ফলে চাপ বাড়ছে কেন্দ্রের উপরেও। বস্তুত কারা এই হামলার জন্য দায়ী তা নিয়ে গোড়ায় টানাপড়েন ছিল কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ গোড়া থেকেই লস্কর জঙ্গি ইসমাইলের দিকে আঙুল তুলেছিল। কিন্তু এই হামলার পিছনে হিজবুল রয়েছে বলে মনে করেছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
এই পরিস্থিতিতেই আগামিকাল থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশনে। বিরোধী শিবির বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। তাই আজ আগেভাগেই মোদী বিরোধীদের জানিয়ে দেন, ‘‘সরকার অমরনাথের হামলার পিছনে যে সন্ত্রাসবাদীরা রয়েছে তাদের শাস্তি দিতে দায়বদ্ধ। শুধু তাই নয়, জম্মু-কাশ্মীর থেকে দেশবিরোধী শক্তিকেও নির্মূল করবে সরকার।’’ অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে কাশ্মীর নিয়ে সরকারের যে নীতি ছিল সেই নীতি মেনেই কেন্দ্র এগোচ্ছে বলে সাংসদদের আশ্বস্ত করেন মোদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy