Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
National News

‘সর্বজিতের স্ত্রীর সিঁদুরও মুছে দিয়েছিল পাক পুলিশ’

পাক প্রশাসনের সীমাহীন অমানবিকতা, অসৌজন্য এবং অভব্য আচরণের বিরুদ্ধে এ বার সরব হলেন সর্বজিতের বোন দলবীর কউর।

পাক প্রশাসনের বিরুদ্ধে এ বার সরব হলেন সর্বজিতের বোন দলবীর কউর। ফাইল চিত্র।

পাক প্রশাসনের বিরুদ্ধে এ বার সরব হলেন সর্বজিতের বোন দলবীর কউর। ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
চণ্ডীগড় শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৪:৪৫
Share: Save:

সাক্ষাত্ পর্বের নামে প্রহসন শুধু কূলভূষণের পরিবারের সঙ্গেই ঘটেনি, একই রকম নিষ্ঠুর ব্যবহার করা হয়েছিল সর্বজিতের পরিবারের সঙ্গেও। পাক প্রশাসনের সীমাহীন অমানবিকতা, অসৌজন্য এবং অভব্য আচরণের বিরুদ্ধে এ বার সরব হলেন সর্বজিতের বোন দলবীর কউর।

কাচের পুরু দেওয়ালের ওপার থেকে মা এবং স্ত্রীকে মঙ্গলসূত্র এবং টিপ ছাড়া দেখে চমকে উঠেছিলেন পাক জেলবন্দি কূলভূষণ যাদব। পাকিস্তান থেকে ফিরে এসে কূলভূষণের মা অবন্তী যাদব এবং স্ত্রী চেতনকুল জানিয়েছিলেন তাঁদের চরম হেনস্থার কথা। কী ভাবে মঙ্গলসূত্র এবং টিপ খুলতে বাধ্য করা হয়েছিল। কী ভাবে খালি পায়ে ফিরতে বাধ্য করা হয়েছিল। এমনকী ইংরাজি এবং হিন্দি ছাড়া কথা বলার অধিকারটুকু ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল তাঁদের থেকে।

পাক প্রশাসনের যে অসংবেদনশীল আচরণের মুখোমুখি হয়েছিলেন অবন্তী যাদব এবং চেতনকুল, সেই একই হেনস্থার প্রাচীর পেরোতে হয়েছিলেন সর্বজিতের স্ত্রী সুখপ্রীত কউর, দুই মেয়ে স্বপনদ্বীপ ও পুনম, এবং বোন দলবীর কউরকেও। শুধু সময়টা আলাদা।

আরও পড়ুন:

মঙ্গলসূত্র কই! চমকে ওঠেন কুলভূষণ

অসমে গিয়ে মঞ্চেই অসুস্থ নিতিন গডকরী

দীর্ঘ ১৮ বছরের বাধা পেরিয়ে লাহৌর জেলে বন্দি সর্বজিতের সঙ্গে তাঁর পরিবার দেখা করার অনুমতি পায় ২০০৮ সালে। সে দিনের বিবরণ দিতে গিয়ে কান্নায় গলা ধরে আসে দলবীরের। তিনি বলেন, ‘‘ভাইয়ের দেখা পাওয়ার আনন্দে বুক ভরে উঠেছিল। কিন্তু বুঝিনি কী ভয়ানক পরিস্থিতি অপেক্ষা করে আছে আমাদের জন্য।’’ দলবীর জানান, সাক্ষাতের আগে থেকেই তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন পাক কর্তৃপক্ষ। এক মহিলা পুলিশকর্মী সুখপ্রীতের সিঁথির সিঁদুর মুছে দেন। চুলের কাঁটা খুলে ফেলতে বাধ্য করা হয় সুখপ্রীত ও তাঁকে। খুলে নেওয়া হয় হাতের কড়া। সর্বজিতের দুই মেয়ের সঙ্গেও অভব্য আচরণ করেন পুলিশকর্মীরা।

দলবীর জানিয়েছেন, পাকিস্তানে গিয়ে যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল, তাতে এক লহমায় অপমান ও যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গিয়েছিল তাঁদের গোটা পরিবার। করলার সবজি খেতে ভালবাসতেন সর্বজিত। বাড়ি থেকে তাই যত্ন করে বানিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সুখপ্রীত। কিন্তু সেই খাবার ছুঁতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি সর্বজিতকে। উল্টে তাঁদেরই খেতে বাধ্য করা হয় সেই খাবার। বারবার ভিসা দেখাতে বাধ্য করা হয় তাঁদের। এমনকী জরুরি নথিপত্রেও গলদ আছে বলে দাবি করে পাক প্রশাসন। দলবীরের কথায়, ‘‘২০১১ সালে আমাকে এক বার সর্বজিতের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়। শুধু আমাকেই ভিসা দেওয়া হয়েছিল। সে বার আমার কৃপান ছুঁড়ে ফেলে দেয় ওরা। এটা আমার ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে।”

সন্ত্রাসবাদী এবং গুপ্তচর তকমা দিয়ে ভারতীয় নাগরিক সর্বজিতকে ১৯৯১ সালে প্রাণদণ্ডের নির্দেশ দেয় পাক আদালত। লাহৌর জেলে বন্দি সর্বজিতের মুক্তির জন্য লড়াই করে ভারত সরকার। ২০০৮-এ পাক-সরকার অনির্দিষ্ট কালের জন্য সর্বজিতের প্রাণদণ্ড মুলতুবি রাখে। কিন্তু ২০১৩ সালে কয়েকজন সহ-বন্দির আক্রমণে নিহত হন সর্বজিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE