Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নিজেদের শক্তি বাড়াতে তৎপর দুই জাতীয় দল

স্তার ধারে ওৎ পেতে থাকতেন। বিধায়কের গাড়ি গেলেই পাকড়াও করে পাঠাতেন জয়ললিতার কাছে। এই করেই তখন সদ্য প্রয়াত এম জে রামচন্দ্রনের স্ত্রী জানকীর শিবির থেকে বিধায়ক ভাঙিয়ে এনে জয়ললিতাকে কুর্সিতে বসিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৩
Share: Save:

স্তার ধারে ওৎ পেতে থাকতেন। বিধায়কের গাড়ি গেলেই পাকড়াও করে পাঠাতেন জয়ললিতার কাছে। এই করেই তখন সদ্য প্রয়াত এম জে রামচন্দ্রনের স্ত্রী জানকীর শিবির থেকে বিধায়ক ভাঙিয়ে এনে জয়ললিতাকে কুর্সিতে বসিয়েছেন।

তিনি সুব্বুরামন তিরুনাভুক্কারাসর। এমজিআরের হাত ধরে তামিল রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন। এডিএমকে-র মন্ত্রীও হয়েছিলেন। এখন অবশ্য তিনি তামিলনাড়ু কংগ্রেসের সভাপতি। গত বিধানসভায় কংগ্রেসের ভরাডুবির পরে তাঁকে এই পদে বসানো হয়। বিধায়ক ভাঙানোর খেলায় সুব্বুরামনের সঙ্গী ছিলেন শশিকলার স্বামী এম নটরাজন। এখন সুব্বুরামন অবশ্য দাবি করেন, সে সব ৩০ বছর আগেকার কথা। শশিকলা বা তাঁর স্বামীর সঙ্গে এখন কোনও লেনদেন নেই। কিন্তু পনীরসেলভমের বিদ্রোহের পরে শশিকলা নিজেই তো কংগ্রেসের থেকে সাহায্য চেয়েছিলেন। যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সময় কংগ্রেসের আট বিধায়কের সমর্থন মেলে।

কিন্তু রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি যতই মনে মনে শশিকলার পাশে দাঁড়াতে চান, পি চিদম্বরমের মতো দলের হেভিওয়েট নেতা আগেভাগেই শশিকলার বিরোধিতা করে রেখেছেন। আজ সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশের আগেই চিদম্বরম বলে দেন, শশিকলার না আছে রাজ্য চালানোর অভিজ্ঞতা, না আছে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা। এমন এক ব্যক্তিকে কখনওই মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানো ঠিক হবে না। এরই মধ্যে রাহুল গাঁধী রাজ্য নেতৃত্বকে দিল্লিতে ডেকে বৈঠক করেছেন। স্থির হয়েছে, এডিএমকের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রকাশ্যে কেউ নাক গলাবে না। তামিলনাড়ুতে কংগ্রেস এখন ডিএমকে-র সঙ্গে। ভবিষ্যতে এডিএমকে-র কাউকে বিধানসভায় সমর্থনের পরিস্থিতি এলে তখন কৌশল স্থির হবে। আজ দিল্লিতে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা তাই শুধু বিজেপির সমালোচনা করেই চুপ থেকেছেন। কংগ্রেসের দাবি, বিজেপি কেন্দ্র থেকে রাজ্যপালকে প্রভাবিত করে তামিল রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে।

কংগ্রেস সূত্রের মতে, মাত্র আটজন বিধায়ক নিয়ে সমর্থন দেওয়ার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ— রাজ্যে নিজেদের শক্তি বাড়ানো। একই চিন্তা বিজেপির। কংগ্রেসের তা-ও বা আট বিধায়ক রয়েছে। বিজেপির ভাঁড়ার তো শূণ্য। ১৯৬৭ সালের পর থেকে দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে কোনও জাতীয় দল তামিলনাড়ুতে সরকার গড়তে পারেনি। ’৬৩ সালে শেষ বড় নেতা ছিলেন কংগ্রেসের কে কামরাজ। তারপর থেকেই ডিএমকে ও এডিএমকে-র মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে ক্ষমতার কেন্দ্র। তামিলনাড়ুর ডামাডোলের বাজারে এখন সেই দুই দলের ‘মেরুকরণে’র অক্ষ ভাঙ্গতে তৎপর দুই জাতীয় দল।

তামিলনাড়ুর ভারপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুরলীধর রাও তো আজ বলেই ফেললেন, ‘‘রাজ্যে আমাদের শক্তিবৃদ্ধি করার একশো শতাংশ সুযোগ এসেছে। আমরা তার সুবিধে নেব।’’

তামিলনাড়ুতে আরএসএসের শক্তি রয়েছে। এখন বিজেপিরও মুখ তুলে দাঁড়ানো দরকার। বিজেপির এক নেতার মতে, তামিলনাড়ুর দুই দ্রাবিড় দল যত দুর্বল হবে, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের স্বস্তি তত বাড়বে। আর ততই বিজেপির থাবা বসানোর সুযোগ বাড়বে। এত দিন এমজিআর, জয়ললিতা, করুণানিধির মতো বড় বড় ‘আইকন’ ছিলেন। এখন করুণানিধিও স্ট্যালিনের হাতে দলের ভার সঁপে নিজে নিষ্ক্রিয় হয়েছেন। শশিকলার বিশেষ জনসমর্থন নেই। নতুন মুখ্যমন্ত্রী যিনিই হোন, তিনি পুরনো আইকনদের ধারেকাছে আসবেন না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ADMK MGR Subburaman Thirunavukkarasar Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE