রাহুল গাঁধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা নোট বাতিলে মানুষের মৃত্যুর খতিয়ান তুলে বারেবারে চেপে ধরেছিলেন নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে। বিরোধীদের শত অভিযোগের মুখেও এ নিয়ে যাবতীয় প্রশ্ন
এড়িয়ে গিয়েছে সরকার। কিন্তু এ বারে কিছুটা চুপিসারেই সংসদীয় কমিটির কাছে সরকার দাবি করল, নোট বাতিলের জেরে দেশে একজনেরও মৃত্যু হয়নি!
পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির সদস্য সাংসদরা সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ব্যাঙ্ক ও এটিএম-এর লাইনে দাঁড়িয়ে কত জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে? এবং নোট বাতিলের জেরে কত জন ভারতীয় নাগরিক আত্মহত্যা করেছেন? জবাবে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে, ‘এমন কোনও সরকারি রিপোর্ট পাওয়া যায়নি’। যার অর্থ, নোট বাতিলের জেরে এখনও পর্যন্ত একজনেরও মৃত্যুর খবর নেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে।
ক’দিন আগেও লোকসভায় নোট বাতিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য পেশের সময় তৃণমূলের সৌগত রায় বলেন, নোট বাতিলের জেরে প্রায় দেড়শো জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তখনও এর জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন। সংসদে কংগ্রেস,
আরও খবর:
তিনি চাইলেও কি নেবে বিজেপি
তৃণমূল, বামেরা লাগাতার দাবি করেছে, নোট বাতিলের ফলে মানুষের মৃত্যু নিয়ে শোক পালন করা হোক। যৌথ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতাতেও এই নিয়ে সংশোধনী আনতে চেয়েছিল বাম-কংগ্রেস। এত কিছুর পরেও সরকার কিন্তু এই বিষয়ে নীরবই থেকেছে।
সাধারণত সংসদীয় কমিটির কাছে সরকার যে রিপোর্ট পেশ করে, তা গোপনীয় থাকে। সাংসদরা এই নিয়ে বাইরে হইচইও করতে পারেন না। নোট বাতিলের জেরে মৃত্যু নিয়ে অর্থ মন্ত্রকের জবাবের পরে বিরোধীদের প্রশ্ন, গোপনীয়তার সেই সুযোগ নিয়েই কি সরকার চুপিসারে কোনও মৃত্যু না হওয়ার দাবিটা সেরে ফেলল? বিজেপি নেতাদের অবশ্য দাবি, কোথাও কোনও মৃত্যু হলে সেটি নথিভুক্ত করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা পুলিশের। তারাই যদি না বলে নোট বাতিলের জেরে মৃত্যু হয়েছে, তা হলে বিরোধীরাই বা সেটি নিয়ে রাজনীতি করছে কেন?
ক’দিন আগেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরকে সংসদীয় কমিটির সামনে ডেকে জেরা করেছিলেন বিরোধী সাংসদরা। তাঁকে বাঁচানোর জন্য সে সময় একযোগে সরব হন বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর, ভূপেন্দ্র যাদব, নিশিকান্ত দুবেরা। পরে অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদেরও ডেকে পাঠায় সংসদীয় কমিটি। কংগ্রেসের শান্তারাম নাইক, তৃণমূলের সুখেন্দু শেখর রায় তাঁদের জেরাও করেন। বিরোধী সাংসদদের বক্তব্য, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে তিন মাস কেটে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত সরকার বলতে পারল না, কত কালো টাকা জমা পড়েছে, কত জাল নোট ব্যাঙ্কে এসেছে। এমনকী কত টাকা ব্যাঙ্কে ফেরত এসেছে, এখনও পর্যন্ত তার হিসেব চলছে বলে অঙ্কটি ঝুলিয়ে রেখেছে সরকার। নোট বাতিলের গোটা কর্মকাণ্ডের জন্য সরকারের ভাঁড়ার থেকে কত খরচ হয়েছে, তার হিসেবও এখনও সামনে আনেনি সরকার।
একজোট বিরোধীরা সরকারকে চেপে ধরতে এ বারে আরও একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার যে বৈঠকে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত য়েছিল, তার ক্যাবিনেট নোট চেয়ে পাঠিয়েছে তারা। ওই ক্যাবিনেট নোট হাতে পেলেই বোঝা যাবে, কী করে ৮ নভেম্বর বিকাল সাড়ে পাঁচটায়
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বৈঠক বসার মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রিসভার অনুমোদন মিলল এবং রাত আটটায় প্রধানমন্ত্রী দূরদর্শনে নোট বাতিলের ঘোষণা করে ফেললেন। বিরোধীদের আশা, ওই ক্যাবিনেট নোট নিয়ে সরকারকে ফের চাপে ফেলা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy