Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
পরিষদীয় সচিব

আইনি লড়াইয়ে বঙ্গের পাশে চার রাজ্য

না চাইতে পাশে পাওয়া একেই বলে! সুপ্রিম কোর্টে পরিষদীয় সচিব নিয়ে আইনি লড়াইয়ে পশ্চিমবঙ্গের পাশে দাঁড়াতে চাইছে উত্তর-পূর্বের চারটি রাজ্য। তবে পশ্চিমবঙ্গকে সাহায্য করতে নয়। নিজেদের স্বার্থেই।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৫ ০৩:১০
Share: Save:

না চাইতে পাশে পাওয়া একেই বলে!

সুপ্রিম কোর্টে পরিষদীয় সচিব নিয়ে আইনি লড়াইয়ে পশ্চিমবঙ্গের পাশে দাঁড়াতে চাইছে উত্তর-পূর্বের চারটি রাজ্য। তবে পশ্চিমবঙ্গকে সাহায্য করতে নয়। নিজেদের স্বার্থেই।

অসম, মিজোরাম, অরুণাচল, নাগাল্যান্ড—এই চারটি রাজ্যই আইন করে পরিষদীয় সচিব নিয়োগ করেছিল। একেবারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মতোই। কলকাতা হাইকোর্ট পশ্চিমবঙ্গের আইনকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দেওয়ায় মমতার সরকার সু্প্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। এখন সুপ্রিম কোর্টে যে ফয়সালাই হোক না কেন, তা ওই চারটি রাজ্যেও প্রযোজ্য হবে। সে কারণেই ওই চারটি রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে এসে এই মামলায় শরিক হওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছে।

গত শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তুর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে পরিষদীয় সচিব মামলার শুনানি ছিল। তখন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বক্তব্য শুনতে চায় বেঞ্চ। চার সপ্তাহ পরে ফের শুনানি হবে। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি তার আগেই শীর্ষ আদালতে আবেদন জানাবে, তাদের বক্তব্য শোনার পরেই যেন ফয়সালা হয়। আইনি পরিভাষায় যে আবেদনের নাম ‘ক্যাভিয়েট’। মিজোরামের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেব বলেন, ‘‘আমি মুখ্যমন্ত্রীকে পরামর্শ দেব যাতে মিজোরাম এই মামলায় শরিক হয়। অসম, অরুণাচল, নাগাল্যান্ডের অ্যাডভোকেট জেনারেলদের সঙ্গেও আমি কথা বলছি।’’

অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকি, দু’জনেই শুক্রবার দিল্লিতে ছিলেন। তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে মামলার কথা জানেন। সূত্রের খবর, গগৈ রাজ্যে ফিরে আইনমন্ত্রী অজন্তা নেওগ ও অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করবেন। অসমে এখন ১৫ জন পরিষদীয় সচিব রয়েছেন। নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী টি আর জেলিয়াংয়ের দফতরেও এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কারণ, ওই চারটি রাজ্যের মধ্যে প্রথম নাগাল্যান্ডেই পরিষদীয় সচিব নিয়োগ হয়েছিল। তার পর একে একে সেই পথে হাঁটে মিজোরাম, অসম ও অরুণাচলও। পশ্চিমবঙ্গের মতোই ওই রাজ্যগুলিতেও পরিষদীয় সচিবেরা প্রতিমন্ত্রীর সমান বেতন, সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, নাগাল্যান্ডের পরিষদীয় সচিব আইনের বিরোধিতা করে সাত বছর আগেই সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল। এর সঙ্গে সাংবিধানিক প্রশ্ন জড়িত বলে বেশ কিছু দিন শুনানির পরে ওই মামলা তিন সদস্যের বেঞ্চে পাঠানো হয়। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘তার পর থেকে ওই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে রয়েছে। এর পর মিজোরামের আইনকে চ্যালেঞ্জ করেও গৌহাটি হাইকোর্টে মামলা হয়েছিল। কিন্তু আমরা যখন জানাই যে সুপ্রিম কোর্টে মামলা ঝুলছে, তখন গৌহাটি হাইকোর্টের বিচারপতি জে চেলামেশ্বর ও বিচারপতি আই এ খানের বেঞ্চ ওই মামলা শুনতে রাজি হয়নি।’’

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মতো অসম-মিজোরাম-অরুণাচল-নাগাল্যান্ডের দাবি, পরিষদীয় সচিব নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়নি।

কারণ?

সুপ্রিম কোর্টে এসে এই রাজ্যগুলি যুক্তি দেবে, সংবিধানের তৃতীয় তফসিল অনুযায়ী মন্ত্রীদের শপথ পাঠ করান রাজ্যপাল। পরিষদীয় সচিবেরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে শপথ নেন। মুখ্যমন্ত্রীই তাঁদের নিয়োগ করেন। সংবিধানের ১৬৪ (২বি) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বিধানসভা মুখ্যমন্ত্রীকে এই ধরনের ক্ষমতা দিতে পারে। পরিষদীয় সচিবরা মন্ত্রিসভার বৈঠকেও যোগ দেন না। সেই অধিকারও নেই। শুধু ভোটের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের বিষয়টি দেখভাল করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE