Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
National News

নীরবের জন্য ব্যাঙ্কের নিজস্ব পাসওয়ার্ড পর্যন্ত চালান হয়ে গিয়েছিল

মুম্বইয়ের আদালতে শনিবার সিবিআইয়ের জমা দেওয়া নথিতে এও বলা হয়েছে, ‘‘এই ঘটনায় ব্যাঙ্কের আরও অনেক কর্মচারী জড়িত থাকতে পারেন। বা লিপ্ত থাকতে পারেন ষড়যন্ত্রে। এমনকী ব্যাঙ্কের কর্মচারী নন, এমনও কেউ কেউ জড়িত রয়েছেন বলে এখনও পর্যন্ত মনে করা হচ্ছে।’’

পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের মুম্বই শাখা। ছবি- সংগৃহীত।

পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের মুম্বই শাখা। ছবি- সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি ও মুম্বই শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৭:২৪
Share: Save:

হিরে ব্যবসায়ী নীরব মোদীকে বিপুল অঙ্কের ঋণ পাইয়ে দিতে ব্যাঙ্কের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ লেনদেন ব্যবস্থাকেই এড়িয়ে গিয়েছিলেন পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (পিএনবি)-এর মুম্বই শাখার তদানীন্তন ডেপুটি ম্যানেজার গোকুলনাথ শেট্টি। লেনদেনের জন্য ব্যাঙ্কে সচরাচর যে ব্যবস্থার ব্যবহার হয় না, সকলের নজর এড়াতে টানা ৭ বছর ধরে সেই ‘সুইফট’ ব্যবস্থার মাধ্যমেই একের পর গ্যারান্টি ইস্যু আর তাদের অনুমোদন দিয়ে গিয়েছেন শেট্টি।

আদালতে জমা দেওয়া নথিতে সিবিআই জানিয়েছে, হিরে ব্যবসায়ী নীরব মোদী যাতে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির বিদেশি শাখা থেকে যথেচ্ছ ঋণ নিতে পারেন সে জন্য ৭ বছরে প্রায় ১৫০টি গ্যারান্টি ইস্যু করেছিলেন পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (পিএনবি)-র মুম্বই শাখার তদানীন্তন ডেপুটি ম্যানেজার গোকুলনাথ শেট্টি। আর সেটা তিনি করেছিলেন ম্যানুয়ালি পাসওয়ার্ড দিয়ে ‘সুইফট’ সিস্টেমে লগ-ইন করে। আর সেই পাসওয়ার্ড অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির বিদেশি শাখাকে শেয়ার করে।

কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক অন্য কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বিদেশি শাখাগুলির সঙ্গে লেনদেনের জন্য এই ‘সুইফট’ সিস্টেমের আশ্রয় নেয়। রোজকার লেনেদেন ব্যবস্থায় এই সিস্টেমের ব্যবহার হয় না বললেই চলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে।

২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত শেট্টি কর্মরত ছিলেন পিএনবি-র মুম্বই শাখায়। সিবিআই জানিয়েছে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন শেট্টির এক অধস্তন কর্মচারী। শেট্টির সেই অধস্তন কর্মচারী কখনও নিজেই ভুয়ো চিঠি (ই-মেল) পাঠিয়ে গ্যারান্টি ইস্যু করেছেন। কখনও বা তিনিই সেই সব গ্যারান্টি খতিয়ে দেখে সেগুলির অনুমোদন দিয়েছেন! আর সেগুলির কোনওটাই ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থার রেকর্ডে রাখা হয়নি।

মুম্বইয়ের আদালতে শনিবার সিবিআইয়ের জমা দেওয়া নথিতে এও বলা হয়েছে, ‘‘এই ঘটনায় ব্যাঙ্কের আরও অনেক কর্মচারী জড়িত থাকতে পারেন। বা লিপ্ত থাকতে পারেন ষড়যন্ত্রে। এমনকী ব্যাঙ্কের কর্মচারী নন, এমনও কেউ কেউ জড়িত রয়েছেন বলে এখনও পর্যন্ত মনে করা হচ্ছে।’’

আরও পড়ুন- আচরণে বুঝিয়ে দেবেন না আপনি দোষী, মোদীকে খোঁচা রাহুলের​

আরও পড়ুন- নীরবদের ঘর ওয়াপসি খুবই কঠিন​

সংবাদ সংস্থা ‘রয়টার্স’ জানাচ্ছে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি পিএনবি-র তরফে অন্য ব্যাঙ্কগুলিকে পাঠানো একটি ‘কনফিডেন্সিয়াল’ নোটে বলা হয়েছে, নজর এড়াতে ওই সব গ্যারান্টির কোনওটাই ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরীণ লেনদেন ব্যবস্থা ‘সিবিএস’-এর মাধ্যমে হয়নি। তাদের অনুমোদনও দেওয়া হয়নি ‘সিবিএস’ ব্যবস্থার মাধ্যমে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পিএনবি-র পদস্থ কর্তা বলেছেন, ব্যাঙ্কের প্রতিদিনের অভ্যন্তরীণ লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে শেট্টির ব্যবহার করা ‘সুইফট’ সিস্টেমের কোনও যোগাযোগ নেই। লেনদেন ও ঋণের জন্য গ্যারান্টি ইস্যুর ব্যাপারে দু’টিই ব্যাঙ্কের সম্পূর্ণ আলাদা ব্যবস্থা। ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থার সঙ্গে এই ‘সুইফট’ সিস্টেমের কোনও যোগাযোগ নেই বলে ম্যানুয়ালি পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ-ইন করে শেট্টি ও তাঁর অধস্তন কর্মচারী ওই ‘সুইফট’ সিস্টেমে ঢুকে প্রচুর পরিমাণে ভুয়ো গ্যারান্টি ইস্যু করেছিলেন। ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরীণ লেনদেন ব্যবস্থার মাধ্যমে ওই সব গ্যারান্টি ইস্যু করলে সহজে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। সেটা এড়াতেই শেট্টি ‘সুইফট’ ব্যবস্থার আশ্রয় নিয়েছিলেন।

তবে প্রতিদিনের কাজকর্মে ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরীণ লেনদেন ব্যবস্থা (সিবিএস)-র বাইরে যে ‘সুইফট’ সিস্টেমের ব্যবহার একেবারেই হয় না, তা নয়। অন্তত এমনটাই দাবি পিএনবি-র কয়েক জন পদস্থ কর্তার।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পিএনবি-র এক সিনিয়র ম্যানেজারের কথায়, ‘‘পিক আওয়ার্সে ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখার উপর যে প্রচণ্ড চাপ থাকে, তাতে ‘সিবিএস’-এর বাইরে গিয়ে লেনদেনের সুবিধার জন্য অনেক সময়েই ‘সুইফট’ ব্যবস্থার আশ্রয় নিতে হয়। তবে সেটা না হলেই ভাল!’’

ওই ঘটনায় শেট্টি ও তাঁর এক অধস্তন কর্মচারীর সঙ্গে আরও এক জনকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। আদালতে সিবিআইয়ের তরফে বলা হয়েছে, ওই তৃতীয় ব্যক্তি ভাল ভাবেই জানতেন ‘‘কী করে ওই সব ভুয়ো গ্যারান্টি ইস্যু হচ্ছে আর সেগুলির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে (মোডাস অপারেন্ডি)।’’ তিনি ‘‘নীরব মোদীর ১৫/১৬টি সংস্থার অধিকর্তা’’ও।

আদালতে সিবিআই জানিয়েছে, ‘সুইফট’ ব্যবস্থার মাধ্যমে ঋণের জন্য যত গ্যারান্টি ইস্যু করা হয়েছে ওই ৭ বছরে তার মোট পরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে।

অডিটর সংস্থা ‘ছাজেদ অ্যান্ড দোশী’র অন্যতম অংশীদার সুদেশ পুনহানি বলেছেন, ‘‘সিবিএস ব্যবস্থার মাধ্যমে ওই সব ভুয়ো গ্যারান্টি ইস্যু করা হয়নি বলে অডিটরদের পক্ষেও সেই গরমিল খুঁজে বের করা সম্ভব নয়।’’

এ দিকে টু-জি মামলায় যিনি অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন, নীরব মোদী সেই বিজয় অগ্রবালকেই তাঁর মামলা লড়ার দায়িত্ব দিতে চলেছেন বলে আদালত সূত্রে খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE