Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

তাজ ঢাকতে রামের তাস বিজেপির

মেরুকরণের এই রাজনীতির মধ্যে নরেন্দ্র মোদীর নাম ঢুকে যাওয়ায় আজ অন্য এক মঞ্চ থেকে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৫৩
Share: Save:

রাম দিয়ে শাহজাহানকে ঢাকতে চাইছে বিজেপি। তাই শাহজাহানের প্রেমের সৌধ তাজমহল এখন মেরুকরণের রাজনীতির মধ্যমণি!

মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যোগী আদিত্যনাথ বলেছিলেন, ‘‘ভারতীয় সংস্কৃতির অনুকূল নয় তাজমহল।’’ পর্যটনের বুকলেট থেকেও বাদ গিয়েছে তাজ। সেই সুরটিকেই আরও তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি বিধায়ক সঙ্গীত সোম। শাহজাহান হিন্দুদের খতম করতে চেয়েছিলেন বলে তাজমহলের ইতিহাসই বদলানোর কথা বলেছেন। আর তারপরেই সমাজবাদী পার্টির আজম খান বলেছেন, ‘‘শুধু তাজমহল কেন, গুঁড়িয়ে ফেলা হোক সংসদ ভবন, রাষ্ট্রপতি ভবন, লালকেল্লাও। সেগুলিও বহন করছে গোলামির ইতিহাস। সেগুলিও দাসত্বের প্রতীক।’’ এমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দাবি, মুঘলদের তৈরি লালকেল্লায় তেরঙ্গা তোলা বন্ধ করুন নরেন্দ্র মোদী।

মেরুকরণের এই রাজনীতির মধ্যে নরেন্দ্র মোদীর নাম ঢুকে যাওয়ায় আজ অন্য এক মঞ্চ থেকে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন, ‘‘ইতিহাস ও ঐতিহ্যে গর্ব বোধ করতে না পারলে দেশ উন্নতি করতে পারবে না। অচিরেই নিজেদের পরিচিতি হারাবে।’’ মোদী অবশ্য তাজের নাম করে কিছু বলেননি। ‘ঐতিহ্য’ বলতে তিনি তাজের কথা বলছেন না সঙ্গীত সোমদের সমর্থন করছেন, তা-ও স্পষ্ট করেননি। সঙ্গীত সোমের মন্তব্য ‘ব্যক্তিগত’ বলে দূরত্ব তৈরি করলেও বিজেপি জোর গলায় খণ্ডন করেনি। কিন্তু তাজ-বিতর্কে মেরুকরণের রাজনীতি তুঙ্গে উঠতেই আজ কিছুটা ভারসাম্যে নামলেন মোদী। নামতে হল যোগীকেও। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, তিনি যাবেন আগরা। তাজকে ঘিরে পর্যটন ঢেলে সাজতেও বরাদ্দ হবে অর্থ।

কিন্তু আসলে যে অযোধ্যার গুরুত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে তা ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করে নিচ্ছেন বিজেপি নেতারা। আগামিকালই অযোধ্যায় যাচ্ছেন যোগী। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর পঞ্চম বার। আদালতে রামমন্দির মামলা যে দিকেই গড়াক, এই প্রথম অযোধ্যায় ধুমধাম করে দীপাবলি পালন করতে চলেছেন তিনি। সরযূ নদীর তীরে তাই নিয়ে সাজো-সাজো রব। শুধু যোগী নন, রাজ্যপাল ও মোদী সরকারের মন্ত্রীরাও যাচ্ছেন সেখানে। সরযূর তীরে প্রায় ১০০ মিটার উঁচু রামের মূর্তি স্থাপনের তোড়জোড় করছেন যোগী। শিয়া ওয়াকফ বোর্ড সেই মূর্তিতে ১০টি রূপোর তির বানিয়ে দেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে। এই বোর্ডের চেয়ারম্যান ওয়াসিম রিজভি ইতিমধ্যেই অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ সমর্থন করেছেন। তাঁদের আবার বিবাদ সুন্নি বোর্ডের সঙ্গে।

বিজেপির এক নেতা আজ ঘরোয়া আলোচনায় কবুল করেন, অদূর ভবিষ্যতে রাম-মাহাত্ম্য এমন প্রচার করা হবে যে অযোধ্যার গুরুত্ব তাজমহলের চেয়ে বে়ড়ে যাবে। কিন্তু এই মুহূর্তে গোটা দুনিয়ায় তাজমহলই পর্যটনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। তাই রাতারাতি তাকে উপেক্ষা করাও সম্ভব নয়। কিন্তু ভারতের হিন্দু সংস্কৃতির ধারক হিসেবে অযোধ্যাকেই ভবিষ্যতে গড়ে তোলা হবে সবচেয়ে বড় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE