Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আধার যাচাইয়ে ত্রুটির সম্ভাবনা, মানলেন কর্তাই

আধার কর্তৃপক্ষের সিইও অজয় ভূষণ পাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টে মেনে নিলেন, আধারের মাধ্যমে ১০০ শতাংশ পরিচয় প্রমাণ করা সম্ভব নয়। তবে এ জন্য কাউকে সরকারি ভাতা বা ভর্তুকি থেকে বঞ্চিত করা যায় না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৮ ০৫:০৯
Share: Save:

আধারের প্রযুক্তিতে অনেকেই নিজের পরিচয় প্রমাণ করতে পারছেন না। ফলে বহু গরিব মানুষ প্রাপ্য সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছেন বিরোধীরা।

আজ সুপ্রিম কোর্টে সেই বক্তব্য কার্যত মেনে নিলেন আধার কর্তৃপক্ষ। আধার কর্তৃপক্ষের সিইও অজয় ভূষণ পাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টে মেনে নিলেন, আধারের মাধ্যমে ১০০ শতাংশ পরিচয় প্রমাণ করা সম্ভব নয়। তবে এ জন্য কাউকে সরকারি ভাতা বা ভর্তুকি থেকে বঞ্চিত করা যায় না। এ জন্য বিভিন্ন মন্ত্রককে বিকল্প পরিচয়পত্র গ্রহণ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে শীর্ষ আদালতে দাবি করলেন তিনি।

আধার মামলায় আজ সুপ্রিম কোর্টে অভূতপূর্ব ভাবে ‘পাওয়ার-পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন’ দিয়েছেন আধার কর্তৃপক্ষের সিইও। গত কালই অ্যাটর্নি জেনারেল এর আর্জি জানিয়েছিলেন। আজ অনুমতি মেলার পরে প্রধান বিচারপতির এজলাসে প্রোজেক্টর, দু’টি এলসিডি স্ক্রিন বসিয়ে কর্পোরেট বৈঠকের মতো ‘পাওয়ার-পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন’ শুরু হয়।

আধার তথ্য কতটা সুরক্ষিত, তা নিয়ে বারেবারেই প্রশ্ন উঠেছে। মাস কয়েক আগেই চণ্ডীগড়ের একটি সংবাদপত্র আধার তথ্য ফাঁস নিয়ে খবর প্রকাশ করেছিল। বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আধারের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হচ্ছে বলে মাত্র কিছু দিন আগেও খবর ছড়ায়। সব মিলিয়ে আধারে গচ্ছিত ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। এ প্রসঙ্গে বুধবারই অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল যুক্তি দিয়েছিলেন, আধারের তথ্য যে সিআইডিআর (সেন্ট্রাল আইডেন্টিটিজ ডেটা রিপোজিটরি)-এ রাখা রয়েছে, তার বাইরে ১৩ ফুট উঁচু, ৫ ফুট পুরু দেওয়াল রয়েছে। আজ সেই ছবি দেখিয়ে পাণ্ডে জানিয়েছেন, বাইরে সিআইএসএফ-এর জওয়ানেরা নিয়মিত টহল দেন।

প্রশ্ন উঠেছিল, আধারের তথ্য চুরি করতে কি পাঁচিল ডিঙোনোর দরকার পড়ে? আজ পাণ্ডে দাবি করেন, আধারের তথ্য এতটাই সুরক্ষিত যে তার একটা চাবি খুলতেও দুনিয়ার সবথেকে শক্তিশালী কম্পিউটারের যে সময় লাগবে, তা ব্রহ্মাণ্ডের বয়সের সমান! অর্থাৎ, হিসেব মতো তেরশো কোটি বছর! আধার-কর্তার যুক্তি, আধারের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনেও সেই সংক্রান্ত কোনও তথ্য জমা করা হয় না। এমনকী সিবিআইকেও বায়োমেট্রিক তথ্য দেওয়া হয়নি। সাধারণত ব্যাঙ্কের লেনদেনে যতখানি সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকে, আধারের সুরক্ষা ব্যবস্থা তার থেকেও ৮ গুণ মজবুত।

বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, খেটে-খাওয়া গরিব মানুষকে আধারের মাধ্যমে নিজের পরিচয় প্রমাণে আঙুলের ছাপ দিতে হয়। কিন্তু অনেক সময়ই সেই ছাপ মেলে না। কারণ, বহু ক্ষেত্রেই শ্রমসাধ্য কাজ করতে গিয়ে আঙুলের ত্বক ক্ষয়ে যায়। ফলে আঙুলের ছাপ মেলে না। পরিচয়ও প্রমাণ করা যায় না। তার ফলে কেউ একশো দিনের কাজের মজুরি, কেউ রেশন থেকে বঞ্চিত হন। এমনকী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘মিড ডে মিল’ প্রাপকের সংখ্যাও কমেছে।

আজ সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, কোথাও আধার প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচয় প্রমাণ করা না গেলে আধার কর্তৃপক্ষ তা জানতে পারেন। কিন্তু তার ফলে কেউ সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কি না, তা তাঁরা কী ভাবে জানছেন? উদাহরণ হিসেবে বিচারপতি ধনঞ্জয় চন্দ্রচূড় বলেছেন, ঝাড়খণ্ডে এক মহিলা আধারের মাধ্যমে পরিচয় প্রমাণ করার পরেও রেশন পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। পাণ্ডে মেনে নেন, এ সব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রককেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE