Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পাকিস্তানে পাচার অসমের মেয়ে, খোঁজ দিল ফেসবুক

 এক ছেলে, দুই মেয়ের মা তিনি। পাচার হয়ে ভিনদেশে এসে পড়ে বরাতজোরে তিনি একটা সংসার পেয়েছেন। কিন্তু নিজের মা-ভাইবোনদের কথা, ফেলে আসা বাড়ির কথা বলবেন কাকে?

হারানো মেয়ে: মমিনা এখন। সন্তানদের সঙ্গে। (ইনসেটে) পাকিস্তানে যাওয়ার পরে মমিনা। —নিজস্ব চিত্র।

হারানো মেয়ে: মমিনা এখন। সন্তানদের সঙ্গে। (ইনসেটে) পাকিস্তানে যাওয়ার পরে মমিনা। —নিজস্ব চিত্র।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫৬
Share: Save:

নিজের হারিয়ে যাওয়া অতীতের কথা ভেবে প্রায়ই চোখের জল ফেলতেন তিনি। লুকিয়ে, এক কোণে।

এক ছেলে, দুই মেয়ের মা তিনি। পাচার হয়ে ভিনদেশে এসে পড়ে বরাতজোরে তিনি একটা সংসার পেয়েছেন। কিন্তু নিজের মা-ভাইবোনদের কথা, ফেলে আসা বাড়ির কথা বলবেন কাকে?

ছেলে সুফিয়ান কিন্তু একদিন দেখে ফেলেছিল মায়ের কান্না। তার পরে ধীরে ধীরে তার উদ্যোগেই সব কিছু একটু একটু করে এগোল। মা মমিনা এখন খুঁজে পেয়েছেন তাঁর দেশ, তাঁর পরিবার। সৌজন্য ফেসবুক।

সে প্রায় ২৫ বছর আগের কথা। ধুবুরির উত্তর টোকোরেচেরা গ্রামে মিস্ত্রির কাজ করতেন আলিফউদ্দিন। স্ত্রী সাহেরবান, চার ছেলেমেয়ে। ছোট মেয়ে মমিনা। সব ঠিকঠাকই চলছিল। জীবনটা হঠাৎ বদলে গেল আলিফের মৃত্যুতে। ভাত জোগাতে কাজের খোঁজে বেরোলেন মা। মমিনাকেও লোকের বাড়ি কাজে লাগিয়ে দিলেন। সেখান থেকেই হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় সে।

সীমিত সামর্থ্যে ছোট মেয়ের অনেক খোঁজ করেছিলেন সাহেরবান। শিলিগুড়ি, কোচবিহার গিয়েছিলেন। লাভ হয়নি। থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন দিদি আমিনা। সেখানেও লাভ হয়নি। ধীরে ধীরে আবছা হতে থাকে মমিনার স্মৃতি। সাহেরবানের শরীর ভাঙতে থাকে। বছর কয়েক আগে মারা গিয়েছেন তিনি। মারা গিয়েছেন মমিনার এক দিদিও। সে কথা এত দিন জানতেও পারেননি মমিনা।

কিন্তু ১৬ বছরের সুফিয়ান যেদিন থেকে মাকে কাঁদতে দেখেছে, সেদিনই ঠিক করে নিয়েছে নিজের কাজ। ‘ফেসবুকে’ সে শুরু করে সীমান্তের ও পারে মায়ের বাপের বাড়ির খোঁজ। এক দিন নিজের অতীতের কথা ছেলেকে বলেছিলেন মমিনা। সেই শুনে অসমের গোলোকগঞ্জ জেলার কয়েক জন বাসিন্দাকে ফেসবুকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠায় সুফিয়ান। সকলের কাছে মমিনার পরিবারের খোঁজ চায় সে। এক দিন মমিনার দুই বোন, এক ভাইয়ের হদিস মেলে। জোগাড় হয় তাঁদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরও।

কিন্তু মমিনা পাকিস্তান চলে গিয়েছিলেন কী ভাবে? ছোট্ট মমিনাকে অসম থেকেই অপহরণ করেছিল পাচারকারীরা। প্রথমে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। পরে সীমান্ত পেরিয়ে পাঠানো হয় পাকিস্তানে। পঞ্জাব প্রদেশের শেখপুরার মান্দিঘালা শেরখান গ্রামে এক ব্যক্তি তাকে ‘কিনে’ নেন। কিন্তু সুন্দরী মমিনাকে পরিচারিকা না করে স্ত্রীর মর্যাদাই দিয়েছেন তিনি। মমিনার জীবনটা তাই নষ্ট হতে হতেও বেঁচে গিয়েছে।

এখন ২৫ বছর পর মমিনার খবর পেয়ে আবেগে ভাসছেন তাঁর দাদা-দিদিরা। বোনকে বাড়িতে আনতে উদগ্রীব তাঁরা। মমিনাও আসতে চান বাপের বাড়ি। কিন্তু পাকিস্তান থেকে এ দেশে আসার জটিলতা অনেক। সে জন্য রাজ্য ও কেন্দ্র— দুই সরকারের দিকেই তাকিয়ে আছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE